বদহজম হলে কি খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
বদহজম হলে কি খাওয়া উচিতঃ পেটে অস্বস্তি, পূর্ণতা, বমি বমি ভাব - বদহজমের এই অপ্রীতিকর লক্ষণগুলো কার না জীবনে চলে আসে? কিন্তু চিন্তা নেই!
আজকের এই আলোচনায় আমরা বদহজমের কারণ, লক্ষণ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, বদহজম হলে কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। বদহজমের সমস্যা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে, আপনাকে সঠিক খাবার সম্পর্কে ধরন জানা গুরুত্বপূর্ণ। বদহজম হলে আপনার খাবারের পদার্থ সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। এটি আপনার পেটের স্বাস্থ্যকে ভালো করে এবং বদহজমের সমস্যা কমিয়ে দেয়।
আপনার হজমশক্তির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে আমরা কিছু কার্যকর টিপসও শেয়ার করবো।
চলুন, একসাথে বদহজমের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করা যাক!
বদহজম কী?
বদহজম, যাকে ডিসপেপসিয়া বা পেট খারাপও বলা হয়, হজমের সাথে সমস্যার একটি সাধারণ অবস্থা।বদহজম হলো একটি অবস্থা যখন খাদ্য পচন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না এবং সে খাদ্যের গলন বা পাচনে সমস্যা উত্পন্ন হয়। এটি সাধারণত পেটের অপ্রত্যাশিত এবং অসুখাজাতভাবে ব্যক্ত হয়। বদহজমের লক্ষণ মধ্যম থেকে মাঝারি হতে পারে এবং তার মধ্যে ব্যতিক্রমও থাকতে পারে, যেমন পেট ব্যথা, অতিশয় পাচনশক্তি, এসিডিটি এবং বমি হতে পারে।
বদহজমের কারণ হতে পারে খাবারের
অপ্রস্থ মসলা, বিরক্তি, ত্বকস্থলীয় আগ্রহ বা কোনও আগ্রহের মধ্যে খাবার
গ্রহণ, অনিয়মিত খাবার গ্রহণ, বিশেষ খাবার পদার্থ বা দ্রব্যের অপ্রস্থ
পাচনের সমস্যা।
বদহজম এর কারণ
বিভিন্ন কারণে পেটে বদহজমের সমস্যাটি হতে পারে। নিচে বদহজমের সাধারণ কারণ গুলো তুলে ধরা হলো।
কিছু সাধারণ কারণঃ
- খাদ্যাভ্যাসঃ
- অতিরিক্ত খাওয়া
- তেল-মশলাযুক্ত, ঝাল, বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া
- দ্রুত খাওয়া
- অপর্যাপ্ত চিবিয়ে খাওয়া
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
- নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া না করা
- জীবনধারাঃ
- ধূমপান
- অ্যালকোহল পান
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান
- অপর্যাপ্ত ঘুম
- মানসিক চাপ
- ব্যায়ামের অভাব
- ওষুধঃ
- কিছু ব্যথানাশক ওষুধ
- অ্যান্টিবায়োটিক
- আয়রনের পরিপূরক
- চিকিৎসাগত অবস্থাঃ
- গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)
- পেটের আলসার
- celiac রোগ
- Crohn's রোগ
- irritable bowel syndrome (IBS)
অন্যান্য সম্ভাব্য কারণঃ
- খাদ্য অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা
- হরমোনের পরিবর্তন
- অস্ত্রোপচার
বদহজম এর লক্ষণ
বদহজমের লক্ষণ বিভিন্ন হতে পারে এবং সাধারণত নিম্নলিখিত হতে পারে, যেমনঃ
সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- পেটে অস্বস্তি বা ব্যথাঃ এটি পেটের উপরের অংশে, মাঝখানে বা নীচের অংশে অনুভূত হতে পারে। ব্যথা তীব্র বা হালকা হতে পারে এবং স্থায়ী বা আসা-যাওয়া হতে পারে।
- পূর্ণতাঃ খাওয়ার পরে দ্রুত পূর্ণ বোধ করা, এমনকি অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার পরেও।
- অম্বলঃ পেট থেকে বুকে বা গলায় পোড়া ভাব বা অম্লতা উঠে আসা।
- বমি বমি ভাবঃ বমি করার ইচ্ছা, তবে বমি না হওয়া।
- বমিঃ পেটের সামগ্রী মুখ দিয়ে বের হয়ে আসা।
- অজীর্ণঃ পেটে গ্যাস বা ফোলাভাব অনুভব করা।
- গ্যাসঃ পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হওয়া, যার ফলে ফোলাভাব, বেলচিং এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যঃ মলত্যাগের নিয়মে পরিবর্তন, যেমন বারবার পাতলা মল বা মলত্যাগে অসুবিধা।
অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- মাথাব্যথা
- ক্ষুধা হ্রাস
- অস্বস্তি
- একাগ্রতা হ্রাস
- ক্লান্তি
বদহজম হলে কি খাওয়া উচিত
বদহজম হলে কি খাওয়া উচিত নয়
বদহজমের সময়ে নির্দিষ্ট খাবারের সাথে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিছু
খাবার বা পদার্থ পেটের অবস্থা উন্নত করতে পারে না এবং বদহজম বা পেটের
সমস্যা করতে পারে। নিম্নলিখিত খাবার এবং পদার্থগুলি যেকোনো মানসিক বা
দ্রব্যের বা পাচনের সমস্যা বা ব্যতিক্রমের জন্য খাওয়া উচিত নয়।
এখানে কিছু খাবার রয়েছে যা আপনার বদহজম হলে এড়িয়ে চলা উচিতঃ
তেলযুক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবারঃ এই খাবারগুলি হজম করা কঠিন হতে পারে এবং পেটে অস্বস্তি, পূর্ণতা এবং বমি বমি ভাব বাড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ভাজা খাবারঃ ফাস্ট ফুড, ভাজা মাছ, চিপস ইত্যাদি।
- চর্বিযুক্ত মাংসঃ রেড মিট, ভেড়ার মাংস, শুয়োরের মাংসের ত্বক ইত্যাদি।
- পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারঃ পুরো দুধ, পুরো-চর্বিযুক্ত পনির, আইসক্রিম ইত্যাদি।
- তেলযুক্ত সস এবং ড্রেসিংঃ মেয়োনেজ, ক্রিমি সস, ভিনেগ্রেট ইত্যাদি।
ঝাল খাবারঃ ঝাল মরিচ এবং অন্যান্য ঝাল মশলা পেটে জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি বাড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- মরিচযুক্ত খাবারঃ স্যুপ, স্টু ইত্যাদি।
- ঝাল মশলাঃ লাল মরিচ, কাঁচা মরিচ, জালাপেনো ইত্যাদি।
- সস এবং আচারঃ ট্যাবাস্কো সস, শ্রীরাচা সস, আচার ইত্যাদি।
অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ঃ এই পানীয়গুলি পেটে জ্বালাপোড়া করতে পারে এবং ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
- মদঃ বিয়ার, ওয়াইন,
- কফিঃ নিয়মিত কফি, এসপ্রেসো,
- চাঃ কালো চা, সবুজ চা,
- সোডাঃ কোলা, পেপসি,
চকোলেটঃ চকোলেটে ক্যাফেইন এবং চর্বি থাকে যা বদহজমের উপসর্গগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।
পুষ্টিকর খাবারঃ পুষ্টিকর খাবারগুলি হজম করা কঠিন হতে পারে এবং পেটে অস্বস্তি বাড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
- সয়া খাবারঃ টোফু, টেম্পে, এডামামে ইত্যাদি।
- বীজ এবং বাদামঃ আখরোট, বাদাম, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি।
- ডালঃ মসুর ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
বদহজম থেকে মুক্তির উপায়
বদহজম থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। বদহজম থেকে মুক্তি পেতে আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন, যেমনঃ
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনঃ
- হালকা খাবার খানঃ তেল-মশলাযুক্ত, ঝাল, বা চর্বিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে হালকা, সহজে হজমযোগ্য খাবার খান।
- ছোট, ঘন ঘন খাবার খানঃ তিনটি বড় খাবারের পরিবর্তে দিনে ছোট ছোট পাঁচ বা ছয়টি খাবার খান।
- পর্যাপ্ত তরল পান করুনঃ পানি, জলীয় ফলের রস বা হার্বাল চা (ক্যামোমাইল বা পুদিনা) পান করুন।
- আদা খানঃ আদা হজম উন্নত করতে এবং বমি বমি ভাব এবং বমি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- প্রোবায়োটিকস খানঃ প্রোবায়োটিকস হল জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া যা হজম উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
জীবনধারার পরিবর্তনঃ
- ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় সীমিত করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- মানসিক চাপ কমান।
- পর্যাপ্ত ঘুম পান।
ওষুধঃ
- অ্যান্টাসিডঃ অ্যান্টাসিড পেটের অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে এবং পেটে জ্বালাপোড়া উপশম করতে পারে।
- H2 blockersঃ H2 blockers পেটের অ্যাসিড উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে।
- প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার (PPIs)ঃ PPIs পেটের অ্যাসিড উৎপাদন ব্লক করে।
চিকিৎসাঃ
- আপনার বদহজমের কারণ নির্ণয়ের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
- আপনার ডাক্তার আপনার উপসর্গ, চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন।
- কিছু ক্ষেত্রে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
- চিকিৎসার কারণ আপনার বদহজমের কারণের উপর নির্ভর করবে।
বদহজম সম্পর্কে কিছু প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্নঃ বদহজম কী?
উত্তরঃ বদহজম, যাকে ডিসপেপসিয়াও বলা হয়, হজমের সাথে সমস্যার একটি সাধারণ অবস্থা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পেটে অস্বস্তি, পূর্ণতা, বমি বমি ভাব, অজীর্ণ এবং গ্যাস।
প্রশ্নঃ বদহজমের কারণ কী?
উত্তরঃ বদহজমের অনেকগুলি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেঃ
- খাদ্যাভ্যাসঃ অতিরিক্ত খাওয়া, তেল-মশলাযুক্ত, ঝাল, বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, দ্রুত খাওয়া, অপর্যাপ্ত চিবিয়ে খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া না করা।
- জীবনধারাঃ ধূমপান, অ্যালকোহল পান, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান, অপর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ, ব্যায়ামের অভাব।
- ওষুধঃ কিছু ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, আয়রনের পরিপূরক।
- চিকিৎসাগত অবস্থাঃ গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), পেটের আলসার, celiac রোগ, Crohn's রোগ, irritable bowel syndrome (IBS)।
প্রশ্নঃ বদহজমের লক্ষণ কী কী?
উত্তরঃ বদহজমের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- পেটে অস্বস্তি বা ব্যথাঃ এটি পেটের উপরের অংশে, মাঝখানে বা নীচের অংশে অনুভূত হতে পারে। ব্যথা তীব্র বা হালকা হতে পারে এবং স্থায়ী বা আসা-যাওয়া হতে পারে।
- পূর্ণতাঃ খাওয়ার পরে দ্রুত পূর্ণ বোধ করা, এমনকি অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার পরেও।
- অম্বলঃ পেট থেকে বুকে বা গলায় পোড়া ভাব বা অম্লতা উঠে আসা।
- বমি বমি ভাবঃ বমি করার ইচ্ছা, তবে বমি না হওয়া।
- বমিঃপেটের সামগ্রী মুখ দিয়ে বের হয়ে আসা।
- অজীর্ণঃ পেটে গ্যাস বা ফোলাভাব অনুভব করা।
- গ্যাসঃ পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হওয়া, যার ফলে ফোলাভাব, বেলচিং এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
প্রশ্নঃ বদহজম থেকে মুক্তির উপায় কী?
উত্তরঃ বদহজম থেকে মুক্তির জন্য আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেনঃ
- খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনঃ হালকা খাবার খান, ছোট, ঘন ঘন খাবার খান, পর্যাপ্ত তরল পান করুন, আদা খান, প্রোবায়োটিকস খান।
- জীবনধারার পরিবর্তনঃ ধূমপান এড়িয়ে চলুন, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় সীমিত করুন, নিয়মিত ব্যয়াম করা।
লেখকের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনায় বদহজম কি, এর কারণ, লক্ষণ এবং বদহজম হলে কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত নয় এবং বদহজম থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি, আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং উপকারে আসবে। ধন্যবাদ