গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন

গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি জেনে এর পরে চাষ শুরু করুন। আমাদের দেশে চিংড়ি মাছের মধ্যে অন্যতম হলো গলদা চিংড়ি। সাধারণত অনেক চিংড়ি ব্যবসায়ী আছে যারা গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানেনা। তাদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলে গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি

গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি

আমাদের দেশে যে সকল চিংড়ি মাছ পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গলদা চিংড়ি। গলদা চিংড়ি বাংলাদেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ভালো পরিমাণে গলদা চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। সাধারণত তাই প্রাকৃতিকভাবে গলদা চিংড়ির চাষাবাদ অনেক কমে গিয়েছে এবং মানুষ গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে চাষাবাদ শুরু করছে।

এখন আপনি সাধারণত গলদা চিংড়ি কোন পদ্ধতিতে চাষ করবেন এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার উপর। আপনি কি একক চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে গলদা চিংড়ি চাষ করতে চান অথবা মিশ্রিত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে চাষাবাদ করতে চান? চলুন গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।

পুকুর তৈরিঃ এখন আপনি যদি একক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে সঠিকভাবে পুকুর তৈরি করতে হবে। সাধারণত এক্ষেত্রে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পুকুর নির্বাচন করা সব থেকে উপযুক্ত। পুকুর তৈরি করার সময় যেন পুকুরের তলদেশে কাদা খুব কম থাকে এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। পুকুরের তলদেশে দোআঁশ মাটি অথবা বেলে দো-আঁশ মাটি থাকলে সব থেকে ভালো।

যেহেতু আপনি একক পদ্ধতিতে চিংড়ি মাছ চাষ করবেন সেহেতু কোন ধরনের মাছ না থাকে এই বিষয়টি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণত অন্য কোন মাছ থাকলে সেটি গলদা চিংড়ি মাছের পোনা গুলোকে খেয়ে ফেলতে পারে।

গলদা চিংড়ির খাদ্য তালিকাঃ পুকুর তৈরি করার পরে সেখানে অবশ্যই গলদা চিংড়িগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে এরপরে গলদা চিংড়ির খাদ্য তালিকা নিশ্চিত করতে হবে। চিংড়ি মাছের পোনা গুলো ছাড়ার পরে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মাছের সাইজ বড় হতে শুরু হয়। এমন অবস্থায় পানির গুনাগুন ঠিক রেখে গলদা চিংড়ির খাবার যে কোন খাবার দেওয়া যেতে পারে।

গলদা চিংড়ির পরিচর্যাঃ এখন আপনি যদি গলদা চিংড়ি চাষ করে লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। গলদা চিংড়ি চাষ করা কালীন সময়ে শতকে ২০ দিন পর পর ২০০ গ্রাম হারে জিওলাইট দিতে হবে। এছাড়া প্রতিমাসে শতকে ২৫০ গ্রাম লবণ দিতে হবে। কোন ধরনের রোগ মাসে আক্রান্ত হলো কিনা সে বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

অনেক সময় বিভিন্ন মাছ পুকুরে প্রবেশ করে যাওয়ার ফলে এগুলো চিংড়ি মাছের ক্ষতি করে থাকে। তাই আপনাকে এ বিষয়টি সঠিকভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন ধরনের বাইরের মাছ পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে। যদি প্রবেশ করে তাহলে অবশ্যই সেটিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপসারণ করতে হবে।

গলদা চিংড়ি চাষ করার নিয়ম

বর্তমান সময়ে চিংড়ি মাছ খুবই চাহিদা সম্পন্ন একটি মাছ। চিংড়ি মাছের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে এর মধ্যে গলদা চিংড়ি অন্যতম। অনেক চিংড়ি ব্যবসায়ী রয়েছে যারা গলদা চিংড়ি চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে। এখন আপনি যদি আর্থিকভাবে লাভবান হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই গলদা চিংড়ি চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

পুকুর তৈরিঃ অন্যান্য মাছ চাষ করতে হলে যেমন পুকুর তৈরি করতে হয় ঠিক তেমন গলদা চিংড়ি চাষ করতে হলে আপনাকে সঠিকভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। পুকুর তৈরি করার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পুকুরের তলদেশে অতিরিক্ত কাদা জমে না থাকে। পুকুর প্রস্তুত করার সময় শতকে ১-২ কেজি চুন ভালোভাবে পুকুরের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে।

পানিতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে এ বিষয়টি বিশেষ করে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া পুকুরের পানি যেন পরিষ্কার থাকে এই বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে। উপরের পানিতে কোন ধরনের রাক্ষসের মাছ না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

গলদা চিংড়ি মাছের পোনা প্রস্তুতঃ গলদা চিংড়ি মাছের পোনা হিসেবে প্রাকৃতিক উৎসব নদী অথবা সাগরের গলদা পোনা সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া বর্তমান সময়ে হ্যাচারিতে উৎপাদিত গলদা চিংড়ি পোনা পাওয়া যায়। বাংলা মাসের চৈত্র থেকে বৈশাখ এবং ইংরেজি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে সাধারণত এই পোনা গুলো পাওয়া যায়।

নাগা ফায়ার মরিচ। এক বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা আয় (প্রমান সহ)

খাদ্য এবং পরিচর্যাঃ গলদা চিংড়ি চাষ করে যদি লাভবান হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এর খাদ্য তালিকা সঠিক রাখতে হবে। এছাড়া আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো পরিচর্যা করা। গলদা চিংড়ির ভালো ফলন হওয়ার জন্য পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে এবং সঠিক সময়ে মাছের স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো নির্ণয় করতে পারলে ফলন ভালো পাওয়া যায়।

গলদা চিংড়ির রোগ ও প্রতিকার

উপরের আলোচনায় গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এখন আপনি যদি গলদা চিংড়ির ভালো ফলন পেতে চান তাহলে অবশ্যই গলদা চিংড়ির রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। কারণ চিংড়ি মাছ চাষ করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ আক্রমণ করতে পারে। সাধারণত তাই গলদা চিংড়ির রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরী।

খোলস শক্ত হয়ে যাওয়াঃ গলদা চিংড়ি চাষ করার সময় যে রোগগুলো দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো গলদা চিংড়ির খোলস শক্ত হয়ে যাওয়া। সাধারণত পানিতে পিএইচ অর্থাৎ লবণাক্ততা এবং পানির রাসায়নিক গুনাগুন এর তারতম্যের কারণে এই রোগটি হতে পারে। চিংড়ি মাছের এই রোগ হলে হলো স্বাভাবিক অবস্থায় চেয়ে শক্ত হয়ে যায়।

প্রতিকারঃ যদি আপনার চাষ করার চিংড়ি মাছের খোলস শক্ত হয়ে যাওয়া রোগ প্রকাশ পায় তাহলে আপনাকে প্রথমে পানির পরিবেশ উন্নত করতে হবে। সুষম পুষ্টিকর খাদ্য নিয়মিত পরিমাপ প্রয়োগ করতে হবে। কারণ এই রোগের চিকিৎসা হলো সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পানি পরিবর্তন।

এন্টেনা খসে পড়াঃ গলদা চিংড়ির আরো একটি কমন রোগ হল গলদা চিংড়ির সামনে থাকা অ্যান্টেনা খসে পড়া। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের কারণে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। এছাড়া গলদা চিংড়ি চাষ করা এলাকার মাটি দূষণের কারণে মাসের এ ধরনের রোগ হয়ে থাকে। সাধারণত তিন থেকে চার মাস পর গলদা চিংড়ির অ্যান্টোনাগুলো খুলে পড়ে।

প্রতিকারঃ আপনার গলদা চিংড়ি মাছের যদি এই রোগগুলো প্রকাশ পায় তাহলে সাময়িকভাবে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গলদা চিংড়ি মাছ চাষ করার পানি গুলো পরিবর্তন করে নিতে হবে।

শরীরে শ্যাওলা জাতীয় পরজীবী সংক্রমণঃ গলদা চিংড়ি মাছের যে রোগ গুলো দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো গলদা চিংড়ি মাছের শরীরে শ্যাওলা জাতীয় পরজীবী আক্রমণ। সাধারণত এটি পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় প্যারামিটারের তারতম্যের কারণে বিশেষ করে লবণাক্ততা বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ চিংড়ি মাছের যদি এই রোগটি দেখা যায় তাহলে অবশ্যই পানি সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে। এছাড়া পানির গভীরতা ১ মিটারের বেশি রাখতে হবে।

গলদা চিংড়ির বৈশিষ্ট্য

যেহেতু আমাদের দেশে বেশ কয়েক প্রজাতির চিংড়ি মাছ পাওয়া যায় তাই আমরা অনেকেই গলদা চিংড়ির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানিনা। আপনি যদি গলদা চিংড়ি মাছ চিনতে চান তাহলে অবশ্যই গলদা চিংড়ির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে। গলদা চিংড়ির মাথায় শুড়, ১ম এবং ২য় ম্যাক্সিলা এবং ১ম, ২য় ও ৩য় ম্যাক্সিলিপেড থাকে।

গলদা-চিংড়ি সাগরের তলদেশের অন্ধকারময় পরিবেশে অবস্থানজনিত কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চলাচলের জন্য ইন্দ্রিয় হিসেবে শূড় ব্যবহার করে। শামুক এবং মাকড়শার মত গলদা চিংড়িতে নীল রক্ত বহমান। হিমোসায়ানিনে কপার পদার্থের উপস্থিতিজনিত কারণেই গলদা চিংড়িতে নীল রক্ত রয়েছে।

সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর

গলদা চিংড়ির রোগগুলো কি কি?

চিংড়ি মাছ চাষ করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ আক্রমণ করতে পারে।যেমনঃ

১.খোলস শক্ত হয়ে যাওয়া  

২.শরীরে শ্যাওলা জাতীয় পরজীবী সংক্রমণ 

৩.এন্টেনা খসে পড়া 

গলদা চিংড়ির বৈশিষ্ট্য কি?

যেহেতু আমাদের দেশে বেশ কয়েক প্রজাতির চিংড়ি মাছ পাওয়া যায় তাই আমরা অনেকেই গলদা চিংড়ির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানিনা। আপনি যদি গলদা চিংড়ি মাছ চিনতে চান তাহলে অবশ্যই গলদা চিংড়ির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে। গলদা চিংড়ির মাথায় শুড়, ১ম এবং ২য় ম্যাক্সিলা এবং ১ম, ২য় ও ৩য় ম্যাক্সিলিপেড থাকে।

গলদা-চিংড়ি সাগরের তলদেশের অন্ধকারময় পরিবেশে অবস্থানজনিত কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চলাচলের জন্য ইন্দ্রিয় হিসেবে শূড় ব্যবহার করে। শামুক এবং মাকড়শার মত গলদা চিংড়িতে নীল রক্ত বহমান। হিমোসায়ানিনে কপার পদার্থের উপস্থিতিজনিত কারণেই গলদা চিংড়িতে নীল রক্ত রয়েছে।

শেষ কথা

গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি, গলদা চিংড়ি চাষ করার নিয়ম, গলদা চিংড়ির রোগ ও প্রতিকার, গলদা চিংড়ির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি গলদা চিংড়ি চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। এতে করে আপনার গলদা চিংড়ির ফলন ভালো হবে আশা করা যায়।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।

Previou Movie Next Movie