নাগা ফায়ার মরিচ। এক বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা আয় (প্রমান সহ)
আপনি কি নাগা ফায়ার মরিচ সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটিতে আমি নাগা ফায়ার মরিচ কেমন ফলন দেয়, মরিচটি চাষ পদ্ধতি, নাগা ফায়ার মরিচ চাষে আয় ব্যয়, এবং কিভাবে এই মরিচ চাষ করে এক বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করা যায়? এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই আপনি যদি এই মরিচ চাষ করে লাখ টাকা আয় করতে চান,তাহলে পুড়ো আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুণ।
সব ধরনের সবজির মধ্যে মরিচের গুরুত্ব অনেক বেশি, কারণ মরিচ ছাড়্রা কোন তরকারিই রান্না করা সম্বব না। এমনকি আমরা সালাত হিসেবেও মরিচ ব্যবহার করে থাকি। মরিচের মধ্যে ক্যাপসাইসিন রাসায়নিক পাওয়া যায়, যা এর স্বাদকে আরো মশলাদার করে তোলে। এটি আমাদের খাবারের স্বাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মরিচের মধ্যে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, সি পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের দিক থেকে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।
নাগা ফায়ার মরিচ এর বৈশিষ্ট্য
বর্তমানে আমাদের দেশে মরিচের অনেক গুলো উন্নত জাত চাষ হয়ে থাকে। তারমধ্যে নাগা ফায়ার মরিচ এর জাতটি অন্যতম। নাগা ফায়ার মরিচের জাতটি একটি উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাত। নিচে নাগা ফায়ার মরিচ এর কিছু বৈশিষ্ট্য দেয়া হলোঃ
১. নাগা ফায়ার মরিচ গাছ অনেক লম্বা হয় এবং অনেক ডাল পালা যুক্ত ঝোপালো হয়।
২. এই মরিচ এর জাতটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত
৩.অন্যান্য জাতের তুলনায় এই মরিচের জাতটিতে প্রায় দেড় গুণ ফলন বেশি হয়।
৪. কাচা অবস্থায় গারো সবুজ কালার,এবং পাকলে লাল রং এর হয়ে থাকে।
৫. এই মরিচের ঝাল অনেক বেশি
৬. মরিচের প্রতিটি গাছে প্রায় ১৫০-২০০ টি মরিচ ধরে থাকে, এবং প্রতিটি মরিচের দৈর্ঘ্য ১০-১৫ সে.মি. এবং মরিচের প্রস্থ ৩-৪.৫ সে.মি. হয়ে থাকে।
৭. প্রতিটি মরিচ খুব সোজা আকৃতির হয়ে থাকে।
৮. এর জীবন কাল ১৮০ থেকে ২১০ দিন।
৯. এর ফলন হেক্টর প্রতি ২৯ থেকে ৩২ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১০. এর সবচেয়ে বড় সুবিদা হলো এর বাজার চাহিদা অনেক বেশি এবং অনেক দিন পর্যন্ত এই মরিচটি সংরক্ষণ করা যায় ,নষ্ট হয় না।
১১. এটি ভাইরাস প্রতিরোধী একটি জাত।
১২. এই মরিচ চাষ করার ৫৫ থেকে ৬০ দিন পর মরিচ হারবেস্ট করা যায় ।
১৩. এই মরিচ সঠিক পরিচর্যায় ৫ থেকে ৭ মাস পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে।
নাগা ফায়ার মরিচ কেনো চাষ করবেন
নাগা ফায়ার মরিচ যেহেতু উচ্চ ফলনশীল একটি জাত এবং এটি ভাইরাস প্রতিরোধি একটি জাত। শুধু তাই নয় এই মরিচটি যেকোন প্রতিকূল আবহাওয়ায় ও ভালো ফলন দেয়। নাগা ফায়ার মরিচটি সারা বছর চাষ করা যায়। অন্যান্য জাতের মরিচের তুলনায় নাগা ফায়ার মরিচটি যেহেতু দেড় গুণ বেশি ফলন দেয় তাই এই মরিচ বানিজ্যিক ভাবে চাষ করলে লস হওয়ার সম্বাবনা থাকে না এমনকি অনেক বড় একটা লাভ পাওয়ার সম্বাবনা থাকে। আর তাই আমাদের উচিত নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করা।
নাগা ফায়ার মরিচ চাষে আয় ব্যয়
আমাদের দেশের কৃষকরা যে কোনো ফসল চাষ করার আগে আয় ব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে চায় এবং এটা জানা খুব জরুরি। কারণ যে কোনো স্মার্ট কৃষক যে কোনো ফসল চাষ করার আগে আয় ব্যয় সম্পর্কে জেনে সুন্দর একটি পরিকল্পনা করে চাষ করে থাকে এবং একজন সচেতন কৃষকের বৈশিষ্ট্য এটি। আর তাই নাগা ফায়ার মরিচ চাষ সম্পর্কে আলোচনা করার আগে এর আয় ব্যয় সম্পর্কে আলোচনা করলাম।
এক বিঘা জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করলে কত টাকা আয় হতে পারে কিংবা কত টাকা ব্যয় হতে পারে তার একটি হিসাব নিচে দেয়া হলোঃ
নাগা ফায়ার মরিচ চাষে ব্যয়
১. জমি চাষ বাবদ খরচ = ২০০০ টাকা
২. সার বাবদ খরচ = ১২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা
৩. কীটনাশক বাবদ খরচ = ১২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা
৪. লেবার খরচ = ১০০০০ টাকা
৫.সেচ খরচ = ৩০০০ টাকা
৬.মালচিং পেপার বাবদ খরচ = ৭০০০ টাকা (মালচিং পেপার ব্যবহার করা উওম)
সর্বমোট এক বিঘা জমিতে নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করলে (২০০০+১৫০০০+১৫০০০+১০০০০+৩০০০+৭০০০)=৫২০০০ টাকা
নাগা ফায়ার মরিচ চাষে আয়
আধুনিক পদ্ধতিতে চারা থেকে চারা ১৮ ইঞ্চি দূরত্বে এবং লাইল থেকে লাইনের দূরত্ব যদি ২৭ ইঞ্চি হয় এবং ৩ ফুটের প্রতিটি বেডে যদি ২ টি করে লাইন চারা রোপণ করা হয় তাহলে এক বিঘা জমিতে ৩ হাজার চারা রোপণ করা যায়।
যদি সঠিক পরিচর্যা করা হয় নাগা ফায়ার মরিচের প্রতিটি গাছে গড়ে ৪ থেকে ৫ কেজি ফলন দিয়ে থাকে। ধরা যাক, প্রতিটি গাছে যদি গড়ে ৩ কেজি ফলন পাওয়া যায়, আর প্রতিকেজি মরিচ যদি গড়ে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায় ,তাহলে ৩ কেজি মরিচের দাম ১২০ টাকা। তাহলে হিসাব করে (৩০০০ × ১২০) = ৩৬০,০০০ টাকা। আমরা জানি,আমাদের দেশে কিছু কিছু সময় মরিচের কেজি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত তাহলে চিন্তা করেন, নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করে কত টাকা আয় করা সম্বব। আবার কউ যদি ১০ বিঘা জমিতে বানিজ্যিক ভাবে নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করে তাহলে তার কত টাকা আয় হবে শুধু একবার চিন্তা করে দেখেন।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, কেউ যদি এক বিঘা জমিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করে সে অনায়াসে ৫ থেকে ৬ মাসে ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারে।
নাগা ফায়ার মরিচ চাষ পদ্ধতি
আমাদের দেশে মরিচের বানিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকরা অনেক উন্নত হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করে থাকে। এই উন্নত জাত গুলোর মধ্যে নাগা ফায়ার মরিচ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। আধুনিক নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করে উচ্চ ফলন পাওয়া যায় এবং কৃষকরা ভালো লাভবান হতে পারে।
তাই আমাদের উচিত উন্নত প্রযুক্তিতে নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করা। কারণ প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে সারা বিশ্বের কৃষি উন্নত হয়েছে। তার সাথে সাথে আমাদের দেশের কৃষিও দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা যারা নতুন কৃষি কাজের সাথে যুক্ত হবো কিংবা যারা স্মার্ট কৃষি উদ্ধোক্তা আছি,যারা নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করতে চায়,তাদের সকলেই উচিত উন্নত প্রযুক্তিতে নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করা।
নাগা ফায়ার মরিচ উন্নত প্রযুক্তিতে চাষ করতে হলে বেশ কিছু বিষয় মেনে চাষ করতে হবে। যেমনঃ
১. উপযুক্ত মাটি নির্বাচন
২. উপযুক্ত তাপমাত্রা ও জলবায়ু নির্বাচন
৩. সঠিক ভাবে জমি তৈরি
৪. সঠিক ভাবে সার ব্যবস্থাপনা
৫. উন্নত প্রযুক্তিতে নাগা ফায়ার মরিচের চারা তৈরি বা শত ভাগ চারা সংগ্রহ করা
৬. সঠিক ভাবে বেড তৈরি করা
৭. বেডে অবশ্যই মালচিং পেপার ব্যবহার করা
৮. সঠিক নিয়মে চারা রোপণ করা
৯. সঠিক নিয়মে পরিমাণ মত সেচ দেওয়া
১০. সঠিক সময়ে সঠিক কীটনাশক স্প্রে করা (অবশ্যই নিয়মত সিডিউল স্প্রে করতে হবে)
১১. সঠিক সময়ে আগাছা পরিস্কার করা
নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে এই সকল বিষয় মেনে উন্নত প্রযুক্তিতে চাষ করলে অবশ্যই ভাল মানের একটা প্রফিট অর্জন করা সম্বব।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর
নাগা ফায়ার মরিচ কেনো চাষ করবেন?
নাগা ফায়ার মরিচ যেহেতু উচ্চ ফলনশীল একটি জাত এবং এটি ভাইরাস প্রতিরোধি একটি জাত। শুধু তাই নয় নাগা ফায়ার মরিচটি যেকোন প্রতিকূল আবহাওয়ায় ও ভালো ফলন দেয়। নাগা ফায়ার মরিচটি সারা বছর চাষ করা যায়। অন্যান্য জাতের মরিচের তুলনায় নাগা ফায়ার মরিচটি যেহেতু দেড় গুণ বেশি ফলন দেয় তাই এই মরিচ বানিজ্যিক ভাবে চাষ করলে লস হওয়ার সম্বাবনা থাকে এমনকি অনেক বড় একটা লাভ পাওয়ার সম্বাবনা থাকে। আর তাই আমাদের উচিত নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করা।
নাগা ফায়ার মরিচ এর বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
নাগা ফায়ার মরিচ এর অনেক গুলো বৈশিষ্ট্য আছে তার মধ্যে সেরা ৫ টি বৈশিষ্ট্য দেয়া হলোঃ
১.নাগা ফায়ার মরিচ এর জাতটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত
২.অন্যান্য জাতের তুলনায় নাগা ফায়ার মরিচের জাতটিতে প্রায় দেড় গুণ ফলন বেশি হয়।
৩.নাগা ফায়ার মরিচের প্রতিটি গাছে প্রায় ১৫০-২০০ টি মরিচ ধরে থাকে, এবং প্রতিটি মরিচের দৈর্ঘ্য ১০-১৫ সে.মি. এবং মরিচের প্রস্থ ৩-৪.৫ সে.মি. হয়ে থাকে।
৪.নাগা ফায়ার মরিচ ভাইরাস প্রতিরোধী একটি জাত।
৫.নাগা ফায়ার মরিচ এর ফলন হেক্টর প্রতি ২৯ থেকে ৩২ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
নাগা ফায়ার মরিচ চাষে কত টাকা আয় করা যায়?
আধুনিক পদ্ধতিতে চারা থেকে চারা ১৮ ইঞ্চি দূরত্বে এবং লাইল থেকে লাইনের দূরত্ব যদি ২৭ ইঞ্চি হয় এবং ৩ ফুটের প্রতিটি বেডে যদি ২ টি করে লাইন চারা রোপণ করা হয় তাহলে এক বিঘা জমিতে ৩ হাজার চারা রোপণ করা যায়।
যদি
সঠিক পরিচর্যা করা হয় নাগা ফায়ার মরিচের প্রতিটি গাছে গড়ে ৪ থেকে ৫ কেজি
ফলন দিয়ে থাকে। ধরা যাক, প্রতিটি গাছে যদি গড়ে ৩ কেজি ফলন পাওয়া যায়, আর
প্রতিকেজি মরিচ যদি গড়ে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায় ,তাহলে ৩ কেজি মরিচের
দাম ১২০ টাকা। তাহলে হিসাব করে (৩০০০
× ১২০) = ৩৬০,০০০ টাকা। আমরা জানি,আমাদের দেশে কিছু কিছু সময় মরিচের কেজি
১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত তাহলে চিন্তা করেন, নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করে
কত টাকা আয় করা সম্বব। আবার কউ যদি ১০ বিঘা জমিতে বানিজ্যিক ভাবে নাগা
ফায়ার মরিচ চাষ করে তাহলে তার কত টাকা আয় হবে শুধু একবার চিন্তা করে দেখেন।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, কেউ যদি এক বিঘা জমিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করে সে অনায়াসে ৫ থেকে ৬ মাসে ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারে।
নাগা ফায়ার মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি?
নাগা ফায়ার মরিচ উন্নত প্রযুক্তিতে চাষ করতে হলে বেশ কিছু বিষয় মেনে চাষ করতে হবে। যেমনঃ
১. উপযুক্ত মাটি নির্বাচন
২. উপযুক্ত তাপমাত্রা ও জলবায়ু নির্বাচন
৩. সঠিক ভাবে জমি তৈরি
৪. সঠিক ভাবে সার ব্যবস্থাপনা
৫. উন্নত প্রযুক্তিতে নাগা ফায়ার মরিচের চারা তৈরি বা শত ভাগ চারা সংগ্রহ করা
৬. সঠিক ভাবে বেড তৈরি করা
৭. বেডে অবশ্যই মালচিং পেপার ব্যবহার করা
৮. সঠিক নিয়মে চারা রোপণ করা
৯. সঠিক নিয়মে পরিমাণ মত সেচ দেওয়া
১০. সঠিক সময়ে সঠিক কীটনাশক স্প্রে করা (অবশ্যই নিয়মত সিডিউল স্প্রে করতে হবে)
১১. সঠিক সময়ে আগাছা পরিস্কার করা
শেষকথা-নাগা ফায়ার মরিচ
প্রিয়
কৃষক ভাইয়েরা,আমি এই আর্টিকেলটিতে নাগা ফায়ার মরিচ সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। আশা করি, এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা নাগা ফায়ার মরিচ
সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছি। উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি,নাগা
ফায়ার মরিচ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত হওয়ায় এই জাতটি আমাদের দেশের কৃষকরা কোনো
চিন্তা ছাড়াই বানিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারে।