বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি জেনে নিন

প্রিয় কৃষক ভাইয়েরা আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, সকলেই ভালো আছেন। আপনি কি বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সাথে বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। মরিচ একটি মসলা জাতীয় ফসল হিসাবে চাষ করা হয়।

বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি

সব ধরনের সবজির মধ্যে মরিচের গুরুত্ব অনেক, কারণ মরিচ ছাড়্রা কোন তরকারিই রান্না করা সম্বব না।মরিচের মধ্যে ক্যাপসাইসিন রাসায়নিক পাওয়া যায়, যা এর স্বাদকে মশলাদার করে তোলে। এটি আমাদের খাবারের স্বাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মরিচের মধ্যে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, সি পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের দিক থেকে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। 

আমাদের দেশে মরিচের বানিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকরা অনেক উন্নত হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করে থাকে। এই উন্নত জাত গুলোর মধ্যে বিন্দু মরিচ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিন্দু মরিচ চাষ করে উচ্চ ফলন পাওয়া যায় এবং কৃষকরা ভালো লাভবান হতে পারে।

বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি

মরিচ একটি মসলা জাতীয় অর্থকরী ফসল। মরিচ আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই বানিজ্যিক ভাবে চাষ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মরিচের উন্নত অনেক জাত বানিজ্যিকভাবে চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত মরিচের জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জাত হচ্ছে বিন্দু মরিচ।

আরো পড়ুনঃ আধুনিক পদ্ধতিতে মরিচ চাষ

আমাদের দেশের হাজার হাজার কৃষক এই বিন্দু মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। আবার আমাদের দেশের অনেক কৃষক আছে যারা বিন্দু মরিচ চাষের সঠিক পদ্ধতি জানেনা। ফলে তারা বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি জানতে চায়। বেশির ভাগ কৃষকরা বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে না জানার কারনে খুব বেশি লাভবান হতে পারেন না। 

তাই আমি এই আর্টিকেলটিতে বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।   

বিন্দু মরিচ চাষের উপযুক্ত মাটি, জলবায়ু ও তাপমাত্রা

আমাদের দেশের অনেক অঞ্চলেই প্রায় সারা বছর বিন্দু মরিচ চাষ হয়ে থাকে। তবে বিন্দু মরিচ চাষের ক্ষেত্রে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ কালো দোআঁশ,বেলে মাটি,বা এটেল মাটি প্রয়োজন। বিন্দু মরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত নিষ্কাশন সহ জমি থাকা প্রয়োজন, কারণ জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে এর গাছগুলি অনেক রোগে আক্রান্ত হয়, যার কারণে ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  

বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে জমির পি.এইচ. মান ৫.৫ থেকে ৭ এর মধ্যে হওয়া উচিত। যে কোনো আবহাওয়ায় বিন্দু মরিচ চাষ করা যায়, তবে আর্দ্র শুষ্ক জলবায়ু চাষের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। প্রচন্ড তাপ ও ​​ঠান্ডা আবহাওয়া এর ফসলের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া শীতকালে তুষারপাত বিন্দু মরিচের জন্যও ক্ষতিকর।

প্রাথমিকভাবে বিন্দু মরিচ গাছের অঙ্কুরোদগমের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রয়োজন। এর গাছপালা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভালো জন্মে। বিন্দু মরিচ গাছ গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি এবং শীতকালে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, এর চেয়ে বেশি বা কম তাপমাত্রা ফসলের বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর।

বিন্দু মরিচের চারা তৈরির পদ্ধতি

বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিতে বিন্দু মরিচের চারা তৈরি খুব গুরুত্ব পূর্ণ। বিন্দু মরিচ চাষের ক্ষেত্রে যে বিষয়টা সব চেয়ে বেশি খেয়াল রাখা জরুরি সেটি হচ্ছে বিন্দু মরিচের চারা যেন ১০০ ভাগ সুস্থ হয়। বিন্দু মরিচ চাষের জন্য এমন জায়গায় নার্সারি বেছে নিন যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকে।  

এর সাথে মাটি থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ১ মিটার চওড়া ও ২০ সেন্টিমিটার লম্বা বেড তৈরি করুন। এতে গোবর বা কম্পোস্ট যোগ করুন। 

আরো পড়ুনঃ মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ

এরপর কার্বেন্ডাজিম ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে বেডের মাটি শোধন করতে হবে। অথবা প্রতি বর্গমিটারে ৭৫০ গ্রাম ডিএপি এবং ২৫০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ১৫০ কেজি সঠিকভাবে পচানো গোবর সার মাটিতে মিশিয়ে দিন যাতে মাটির গঠনের পাশাপাশি বিন্দু মরিচ গাছের বৃদ্ধিও ভাল হয় এবং মাটির ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও রক্ষা করা যায়।

তবে বিন্দু মরিচ চাষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি সিডলিং ট্রেতে উন্নত প্রযুক্তিতে মাটি ছাড়া শত ভাগ সুস্থ চারা তৈরি করলে। অথবা এই উন্নত প্রযুক্তির ১০০ ভাগ সুস্থ বিন্দু মরিচের চারা বর্তমানে কিনেও পাওয়া যায়। আপনারা চাইলে সেই চারা গুলোও সংগ্রহ করতে পারেন। 

বিন্দু মরিচ চাষের জমি তৈরি 

বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতির মধ্যে জমি তৈরি খুব গুরুত্ব পূর্ণ। বিন্দু মরিচ চাষের জন্য জমি খুব ভালো ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বিন্দু মরিচের ভালো ফলনের জন্য ক্ষেতকে ভালোভাবে চাষ করে সঠিক পরিমাণে সার দিতে হবে।  

এ জন্য ক্ষেত ভালোভাবে ও গভীরভাবে ৪ থেকে ৫ টি চাষ করতে হবে। যার কারণে মাঠের পুরোনো ধ্বংসাবশেষ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর এভাবে কয়েকদিন মাঠ খোলা রেখে দিন। যার কারণে মাঠের মাটি পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যালোক পাবে।

তারপর প্রচুর পরিমাণে গোবর সার ও পরিমাণ মত রাসায়নিক সার জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে শেষ ২ টি চাষ দিয়ে জমিতে ৩ ফুটের বেড এবং ২ ফুটের ড্রেন তৈরি করতে হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি বেডের উপর মালচিং ব্যবহার করা হয়। 

বিন্দু মরিচ চাষের সার ব্যবস্থাপনা

যদিও বিভিন্ন জমিতে সারের পরিমাণ বিভিন্ন রকম হয়। যে কোনো ফসলের জমিতে সার দেয়ার ক্ষেত্রে জমির মাটি পরীক্ষা করে তারপর পরিমাণ মত সার দেয়া উচিত। তারপরও আপনাদের সুবিদার জন্য এক বিঘা জমিতে বিন্দু মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে কি পরিমাণ সার দিতে হয় তার একটা হিসার নিচে  দেয়া হলোঃ

১ম ধাপে বিন্দু মরিচ গাছে সার প্রয়োগ,শেষ চাষের আগে 

 ১. টিএসপি = ৪০ কেজি

২. ডিএপি = ২০ কেজি

৩. এমওপি = ৩০ কেজি

৪. জিপসাম = ১০ কেজি

৫. বোরন = ১ কেজি

৬. দস্তা = ১ কেজি

৭. ফুড়াডান = ২ কেজি

৮.ম্যাগনেসিয়াম = ৪ কেজি

৯. ট্রাইকুডারমা = ২ কেজি

১০. জৈব সার = ২০০ কেজি

২য় ধাপে সার প্রয়োগ, গাছের ৪০ থেকে ৪৫ দিন হলে বা বিন্দু মরিচ গাছে মরিচের গুটি আসলে,

১.ডিএপি = ১৫ কেজি

২.এমওপি = ১০ কেজি

৩. ম্যাগনেসিয়াম = ২ কেজি  

বিন্দু মরিচের চারা রোপণের সঠিক সময় ও চারা রোপণ পদ্ধতি

বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি নিয়ে যেহেতু আলোচনা করতেছি তাই এই আলোচনার একটি খুব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিন্দু মরিচ চাষের সঠিক সময় ও বিন্দু মরিচ চারা রোপণ পদ্ধতি। বিন্দু মরিচ চাষ করে ভালো ফলন পেতে হলে এবং লাভবান হতে হলে বিন্দু মরিচের চারা সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে রোপণ করা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। উচু ও সমতল উভয় স্থানেই বিন্দু মরিচের চারা রোপণ করা হয়। 

প্রতিটি গাছের মধ্যে দেড় থেকে দুই ফুট দূরত্ব রেখে চারা রোপণ করতে হবে। সমতল জমিতে গাছ লাগানোর জন্য ১০ ফুট লম্বা বেড তৈরি করতে হবে। এসব বেডে আড়াই ফুট দূরত্ব রেখে গাছ লাগাতে হবে, যাতে গাছগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর্যাপ্ত জায়গা পায়।

আরো পড়ুনঃমালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ

বিন্দু মরিচের চারা বিকেল বেলা রোপণ করা আরও উপকারী বলে মনে করা হয়, কারণ এই সময়ে রোপণ করলে গাছগুলি ভালভাবে অঙ্কুরিত হয়। মরিচের চারা রোপণের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়, তাই শীত মৌসুমে এর রোপণ অক্টোবর ও নভেম্বরের মাঝামাঝি করতে হয়, যেখানে গ্রীষ্মের মৌসুমে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসকে চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। 

বিন্দু মরিচ চাষের সেচ ব্যবস্থাপনা 

বিন্দু মরিচ চাষের ক্ষেত্রে ভালো সেচ ব্যবস্থাপনাও খুব জরুরি। বিন্দু মরিচ গাছের বেশি সেচের প্রয়োজন হয় কারণ এর গাছের অঙ্কুরোদগমের সময় জমিতে আর্দ্রতা প্রয়োজন। রোপণের পরপরই বিন্দু মরিচ গাছে প্রথম সেচ দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে, বিন্দু মরিচ গাছে সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি সেচের প্রয়োজন হয়। এছাড়া শীত মৌসুমে প্রতি ১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর সেচের প্রয়োজন হয়। বর্ষাকালে প্রয়োজন হলে বিন্দু মরিচ গাছে সেচ দিতে হবে।

বিন্দু মরিচ ক্ষেতে আগাছা নিয়ন্ত্রণ

বিন্দু মরিচ চাষের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হচ্ছে আগাছা নিয়ন্ত্রন করা বা নিড়ানি দেয়া। সঠিক সময়ে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং ফলনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিন্দু মরিচ ক্ষেতে প্রথম আগাছা ২০ দিন পর পরিস্কার করতে হয় এবং অবশিষ্ট আগাছা ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর পরিস্কার করতে হয়। আপনি আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাসায়নিক পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারেন, এর জন্য আপনাকে যথাযথ পরিমাণে অক্সিফ্লুরফেন স্প্রে করতে হবে।

এছাড়াও সবচেয়ে ভালো হয় যদি বিন্দু মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়। বিন্দু মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে মালচিং পেপার ব্যবহার করলে জমির আগাছা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বিন্দু মরিচ গাছের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রন

বিন্দু মরিচ চাষ করে ভালো ফলন পেতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন। আধুনিক পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে যদি সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রন না করা যায় তাহলে বিন্দু মরিচ গাছের ফলন অনেকাংশে কমে যায়। ফলে কৃষক ক্ষতি গ্রস্থ হয়। তাই বিন্দু মরিচ চাষের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রন করা খুব জরুরি। 

বিন্দু মরিচ গাছে অনেক ধরনের রোগ দেখা যায়। এসব রোগ গাছে আক্রমণ করে ধ্বংস করে, ফলে ফলনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুরুতেই বিন্দু মরিচ গাছে পচন রোগ দেখা যায়। এই রোগটি ভূমি পৃষ্ঠের সামান্য উপরে গাছে দেখা যায়। এ রোগের কারণে গাছের কান্ড কালো হয়ে যায়। এরপর বিন্দু মরিচ গাছের কান্ড পচে নষ্ট হয়ে যায়।  

এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য, বিন্দু মরিচের চারা রোপণের আগে থিরাম বা ক্যাপ্টান বা কারবন্ডাজিম গ্রোপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে গাছের গোড়ায় অথবা পুরো গাছে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ আধুনিক পদ্ধতিতে করলা চাষ

এ ছাড়া বিন্দু মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে মরিচ গাছে অনেক ধরনের রোগ দেখা যায়,  যেমন- সাদা মাছির আক্রমন,লাল মাকড়ের আক্রমণ, মোজাইক, নিমাটোড ইত্যাদি। এ সকল চোষক পোকা দমনের জন্য সাধারণত ইমিটাক্লোরোপিড গ্রোপের কীটনাশক প্রতিলিটার পানিতে ১ মিলি হারে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে। নিয়মিত সিডিউল মত স্প্রে করলে আশা করা যায় বিন্দু মরিচ গাছ সুস্থ থাকবে এবং অনেক ভালো ফলন দিবে।

বিন্দু মরিচ সংগ্রহ করা

বিন্দু মরিচ প্রায় চারা রোপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিন পর প্রথম বার মরিচ তোলার যায়। প্রথম  বার বিন্দু মরিচ তোলার পর প্রতি ১০ থেকে ১২ দিন পর পর বিন্দু মরিচ তোলা যায় কিন্তু পাকা মরিচ পেতে হলে এর ফল ১২০ ​​থেকে ১৩০ দিন পর ছিঁড়ে নিতে হবে। এরপর এই লাল মরিচগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এই শুকনো মরিচগুলি সংরক্ষণ করা হয় এবং চাপ দেওয়া হয়, যার কারণে পাকা বিন্দু মরিচ আরও মশলাদার হয়।   

সাধারণ কি প্রশ্ন ও উওর

বিন্দু মরিচ চাষের উপযুক্ত মাটি কোনটি?

আমাদের দেশের অনেক অঞ্চলেই প্রায় সারা বছর বিন্দু মরিচ চাষ হয়ে থাকে। তবে বিন্দু মরিচ চাষের ক্ষেত্রে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ কালো দোআঁশ,বেলে মাটি,বা এটেল মাটি প্রয়োজন। বিন্দু মরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত নিষ্কাশন সহ জমি থাকা প্রয়োজন, কারণ জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে এর গাছগুলি অনেক রোগে আক্রান্ত হয়, যার কারণে ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  

বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে জমির পি.এইচ. মান ৫.৫ থেকে ৭ এর মধ্যে হওয়া উচিত। যে কোনো আবহাওয়ায় বিন্দু মরিচ চাষ করা যায়, তবে আর্দ্র শুষ্ক জলবায়ু চাষের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। প্রচন্ড তাপ ও ​​ঠান্ডা আবহাওয়া এর ফসলের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া শীতকালে তুষারপাত বিন্দু মরিচের জন্যও ক্ষতিকর।

বিন্দু মরিচ চাষের উপযুক্ত জলবায়ু ও তাপমাত্রা কোনটি?

প্রাথমিকভাবে বিন্দু মরিচ গাছের অঙ্কুরোদগমের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রয়োজন। এর গাছপালা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভালো জন্মে। বিন্দু মরিচ গাছ গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি এবং শীতকালে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, এর চেয়ে বেশি বা কম তাপমাত্রা ফসলের বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর।

বিন্দু মরিচ গাছে কি পরিমাণ সার দিতে হয়?

যে কোনো ফসলের জমিতে সার দেয়ার ক্ষেত্রে জমির মাটি পরীক্ষা করে তারপর পরিমাণ মত সার দেয়া উচিত। তারপরও আপনাদের সুবিদার জন্য এক বিঘা জমিতে বিন্দু মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে কি পরিমাণ সার দিতে হয় তার একটা হিসার নিচে  দেয়া হলোঃ

১ম ধাপে বিন্দু মরিচ গাছে সার প্রয়োগ,শেষ চাষের আগে 

 ১. টিএসপি = ৪০ কেজি

২. ডিএপি = ২০ কেজি

৩. এমওপি = ৩০ কেজি

৪. জিপসাম = ১০ কেজি

৫. বোরন = ১ কেজি

৬. দস্তা = ১ কেজি

৭. ফুড়াডান = ২ কেজি

৮.ম্যাগনেসিয়াম = ৪ কেজি

৯. ট্রাইকুডারমা = ২ কেজি

১০. জৈব সার = ২০০ কেজি

২য় ধাপে সার প্রয়োগ, গাছের ৪০ থেকে ৪৫ দিন হলে বা বিন্দু মরিচ গাছে মরিচের গুটি আসলে,

১.ডিএপি = ১৫ কেজি

২.এমওপি = ১০ কেজি

৩. ম্যাগনেসিয়াম = ২ কেজি  

শেষকথা-বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি

প্রিয় কৃষক ভাইয়েরা, এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সাথে বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি, আর্টিকেলটি থেকে আপনারা বিন্দু মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

Previou Movie Next Movie