মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক ভাই এবং বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। এই আর্টিকেল টিতে আমি আপনাদের সাথে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনারা সকলেই করলা চাষ সম্পর্কে কম বেশি জানেন। কিন্তু আপনাদের মাঝে বেশিরভাগ মানুষই মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে জানেনা।তাই আপনারা যারা মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে জানতে চান তারা এই আর্টিকেল টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে মালচিং পেপার কি? মালচিং পেপার হচ্ছে এক ধরনের বিশেষ কাগজ যার এক সাইট কালো আর আরেক সাইট সিলভার কালার। যেটি টান দিলে লম্বা হয় এবং এটি শুধু মাএ কৃষি কাজে ব্যবহার হয়। মালচিং পেপার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা ভালো থাকে এবং রোগ বালাই কম হয় এবং ফলন বেশি হয়।
সুতরাং আমরা বলতে পারি আধুনিক স্মার্ট কৃষিতে মালচিং পেপার একটি নতুন সংযোজন।
করলা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা সকলেই জানি,করলা স্বাদে তেত হলেও এতে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি গুণ রয়েছে। ফলে করলা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি। যেমনঃ
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: ডাক্তাররা সবসময় ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তে শর্করার রোগীদের করলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এটি খাওয়া রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। করলা শুধু চিনি নিয়ন্ত্রণ করে না আপনার শক্তির মাত্রাও বাড়ায়।
হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়: কেরালায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। এই কারণেই এটি খাওয়া হজমশক্তিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে মল ত্যাগ করা সহজ হয়, অর্থাৎ আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সম্মুখীন হন না।
লিভার সুস্থ রাখে: বলা হয়ে থাকে করলা লিভারকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং এর ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে, যার ফলে শরীর পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় করলা অন্তর্ভুক্ত করাও ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি ওজন কমানোর চেষ্টা করেন, তাহলে প্রতিদিন করলা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম: করলাতে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে কাজ করে। এর সাহায্যে শরীর বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের সঙ্গে সহজেই লড়াই করতে সক্ষম হয়।
করলা চাষ
মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে জানার আগে করলা চাষ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আমরা সকলেই জানি করলা স্বাদে তেত হলেও এটি খবই পুষ্টি গুণ সম্পুর্ণ একটি সবজি। সারা বছরই বাজারে করলার প্রচুর চাহিদা থাকে। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের করলা চাষ হয়ে থাকে। বিভিন্ন জাতের মধ্যে খুব জনপ্রিয় কিছু জাত হচ্ছে-বারি করলা ১,গজ করলা,টিয়া,গ্লোরি,ময়না ইত্যাদি এবং ছোট জাতের করলার মধ্যে রয়েছে-লিডার,নবাব ইত্যাদি হাইব্রিড করলার উচ্চ ফলনশীল জাত।
করলা চাষ খুবই লাভজনক একটি চাষ। আমাদের দেশে হাজার হাজার কৃষক আছে যারা করলা বানিজ্যিকভাবে চাষ করে লাভবান হচ্ছে। করলা সাধারণ দুই ভাবে চাষ করা যায়।যেমন:
১.মাটিতে বিছিয়ে করলা চাষ
২.মাচা পদ্ধতিতে করলা চাষ
মাটিতে বিছিয়ে করলা চাষ
সাধারণত মাটিতে বিছিয়ে যে করলা চাষ করা হয় সেটি হছে উচ্ছে। এটি ভাদ্র মাসে চাষ করা হয়। যেহেতু ভাদ্র মাসে করলা চাষ করলে আগাম ফলন আসে তাই বাজারে এই উচ্ছের দাম অনেক বেশি থাকে। তাই ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হতে পারে। তবে ভাদ্র মাসে যেহেতু বৃষ্টি থাকে তাই খুব উচু জমিতে চাষ করতে হবে। তা না হলে লস হওয়া সম্বাবনা থাকে।
আরো পড়ুনঃ মঙ্গল রাজা টমেটো। এক বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা আয় (প্রমান সহ)
মাচা পদ্ধতিতে করলা চাষ
বর্তমানে আমাদের দেশে করলার যে বানিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে তার বেশির ভাগই মাচা পদ্ধতিতে করলা চাষ হয়ে থাকে। মাচা পদ্ধতিতে সাধারণত হাইব্রিড করলা চাষ করা হয়। আর হাইব্রিড করলা সারা বছরই চাষ করা যায়। তাবে তীব্র শীতে চাষ না করা উওম। মাচা পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে ফল সংগ্রহ করা অনেক সহজ এবং কীটনাশক স্প্রে করা অনেক সহজ। এমন কি মাচা পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে মাটিতে বিছিয়ে করলা চাষের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ ভাগ ফলন বেশি হয়। তাই আমাদের দেশের বেশিভাগ কৃষক মাচা পদ্ধতিতে করলা চাষ করে থাকে।
সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষ
মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ জানার আগে সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে জানতে হবে।কারন সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে না জানলে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে জেনে এই দুই পদ্ধতির মধ্যে তফাৎ টা আপনারা বুঝতে পারবেন না।
যাইহোক,সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষ হচ্ছে কোনো উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া আমরা নরমাল যে পদ্ধতিতে চাষ করে থাকি। সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষের ক্ষেত্রে করলার জমি ভালোভাবে ৩ থেকে ৪ টি চাষ দিয়ে শেষ চাষের আগে পরিমান মত সার ছিটিয়ে দিতে হবে। যেহেতু সারের পরিমাণটি বিভিন্ন জমিতে বিভিন্ন রকম হয়।সারের পরিমান জমির উর্বরতা বুজে সার দিতে হবে।তাই আমি সারের পরিমাণটি বলছিনা।
জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করে ২ থেকে ৩ হাত দুরে দুরে চারা রোপন করতে হবে। এইভাবে চারা রোপন করলে প্রতি বিঘায় ১০০০ থেকে ১৩০০ পর্যন্ত চারা রোপন করা যায়। সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আগাছা এবং রোগ ও পোকাড় আক্রমন। সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষের ক্ষেত্রে এই সমস্যা গুলো বেশি হয় এবং লেবার খরচ একটু বেশি লাগে। সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষ আপনি চাইলে মাটিতে বিছিয়েও করতে পারেন অথবা আপনি চাইলে মাচায় করতে পারেন।
তবে মাচায় পদ্ধতিতে করলা চাষ করলার ফলন তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়। যাইহোক, এইভাবে সাধারণ পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে আপনার সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হবে। যদি আপনি ঠিক মত পরিচর্যা করতে পারেন এবং ফলন যদি ভালো হয় এবং বাজার যদি ভালো থাকে । তবে এক বিঘা করলার জমি থেকে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়।
মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ
আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি মালচিং পেপার কি?,মালচিং পেপার কেনো ব্যবহার করবো। মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ খুবই লাভজনক। মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ হচ্ছে সেই চাষ যে চাষের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এবং মালচিং পেপার বিছিয়ে চাষ করা হয়। মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষের ক্ষেত্রে জমি ৩ থেকে ৪ টি চাষ করে শেষ চাষের আগে পরিমাণ মত সার ছিটিয়ে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইন থেকে দৈনিক ৫০০-১০০০ টাকা ইনকাম করার উপায়
তারপর ২ ফিট করে বেড করতে হবে। বেড করা শেষ হলে বেডের উপর মালচিং পেপার বিছাতে হবে। এক বিঘা জমিতে দেড় রোল মালচিং পেপার লাগবে যার মূল্য ৭৫০০ থেকে ৮০০০ টাকা। প্রথমে খরচ বেশি মনে হলেও পরবর্তীতে জমির আগাছা পরিস্কারের জন্য খরচ কম হবে। মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে আপনার সেচ কম লাগবে। পোকা মাকড়ের আক্রমন তুলনামূলক ভাবে কম হবে।
মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে মাটির উর্বরতা ভালো থাকে শিকর ভালোভাবে ছড়াতে পারে তাই গাছের বৃদ্ধি অনেক বেশি হয়। এমনকি সাধারণ পদ্ধতিতে চাষের চেয়ে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে ফলন আসে এবং বেশি দিন গাছ বেচে থাকে। সুতরাং ফলন অনেক বেশি হয়।
মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয় এবং ঠিক মত পরিচর্যা করলে নিয়মিত সিডিউল মত কীটনাশক স্প্রে করলে এবং সার ,সেচ ঠিক মত দিলে প্রতি বিঘায় ১২০০০০ থেকে ১৫০০০০ টাকা পর্যন্ত করলা বিক্রি করা যায়।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়। আধুনিক কৃষিতে মালচিং পেপার একটি আশীর্বাদ । আমরা যারা করলা চাষ করতে চাচ্ছি তাদের অবশ্যই মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করা উচিত।
মালচিং পেপার কেন ব্যবহার করবো?
মালচিং
পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে জানতে হলে মালচিং পেপার কেন ব্যবহার করবেন তা
জানাও জরুরি। বর্তমানে সারা পৃথিবীর কৃষিই প্রযুক্তির সাথে সাথে উন্নত
হচ্ছে। সেই সাথে আমাদের দেশের কৃষিও উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও
হাজার হাজার স্মার্ট তরুণ কৃষি উদ্ধোক্তা তৈরি হয়েছে যারা মালচিং পেপার
ব্যবহার করে চাষাবাদ করতেছে।
মালচিং পেপার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা ভালো থাকে। জমিতে রোগ বালাই কম হয় এবং ফলনও অনেকগুন বেশি হয়।এমনকি মালচিং পেপার ব্যবহার করলে জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং লেবার খরচ কম হয়। সুতরাং আমি মনে করি বর্তমান স্মার্ট কৃষিতে মালচিং পেপার আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর
মালচিং পেপার কেন ব্যবহার করবো?
বর্তমানে
সারা পৃথিবীর কৃষিই প্রযুক্তির সাথে সাথে উন্নত হচ্ছে। সেই সাথে আমাদের
দেশের কৃষিও উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও হাজার হাজার স্মার্ট তরুণ
কৃষি উদ্ধোক্তা তৈরি হয়েছে যারা মালচিং পেপার ব্যবহার করে চাষাবাদ করতেছে।
মালচিং পেপার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা ভালো থাকে। জমিতে রোগ বালাই কম হয় এবং ফলনও অনেকগুন বেশি হয়।এমনকি মালচিং পেপার ব্যবহার করলে জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং লেবার খরচ কম হয়। সুতরাং আমি মনে করি বর্তমান স্মার্ট কৃষিতে মালচিং পেপার আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ।
করলা কখন চাষ করা হয়?
আসলে করলা সারা বছর চাষ করা যায়। কারণ বিজ্ঞানীরা করলার এমন হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছেন যার মাধ্যমে আপনি সারা বছরই করলার চাষ করতে পারবেন। আধুনিক পদ্ধতিতে করলা চাষকে তিনটি উপায়ে ভাগ করতে পারি যা নিম্নরূপ।
গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য এটি জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বপন করা যায়।
সমভূমিতে, এটি জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে বর্ষাকালে বপন করা হয়।
পার্বত্য অঞ্চলে এটি মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বপন করা হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে করলা গ্রীষ্ম ও বর্ষা উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়।
করলা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা সকলেই জানি,করলা স্বাদে তেত হলেও এতে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি গুণ রয়েছে। ফলে করলা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি। যেমনঃ
১.রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ
২.হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়
৩.লিভার সুস্থ রাখে
৪.ওজন নিয়ন্ত্রণ
৫.শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম
শেষকথা-মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ
প্রিয় পাঠক ভাই এবং বোনেরা,আমি এই আর্টিকেলটিতে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দিন দিন তথ্য প্রযোক্তির সাথে সাথে আমাদের দেশের কৃষিও এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা যারা বেকার শিক্ষিত যুবক আছি তাদের উচিত কৃষিটাকে ছোট না ভেবে উন্নত প্রযোক্তি সাথে নিয়ে স্মার্ট কৃষিতে আসা। বানিজ্যিক ভাবে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে লাভবান হওয়া সম্বব। তাই আমি আপনাদের আহবান জানাবো আপনারা বেকার বসে না থেকে স্মার্ট কৃষিতে আসুন এবং স্মার্ট কৃষি উদ্ধোক্তা হন এবং মালচিং পদ্ধতিতে চাষ শুরু করুন। তাহলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন। ধন্যবাদ