কলার চাষ পদ্ধতি জেনে নিন

প্রিয় পাঠক ভাই এবং বোনেরা আসসালামু আলাইকুম,আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আপনারা কি কলার চাষ পদ্ধতি জানতে চান? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমি এই আর্টিকেলটিতে কলার চাষ পদ্ধতি এবং কলা চাষের উপযুক্ত সময় এবং কলা চাষ সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই আপনারা যারা ভাবতেছেন কলা চাষ করবেন এবং যারা কলা চাষ করে লাভবান হতে চান তারা এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

কলার চাষ পদ্ধতি

কলা বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। এটি সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। কলা খুবই সুস্বাদু এবং অনেক পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ একটি ফল। কলা খুবই চাহিদা সম্পূর্ণ এবং লাভজনক একটি ফল। তাই যারা কলা চাষ করবেন তাদের অবশ্যই কলার চাষ পদ্ধতি এবং কলা চাষের খুটিনাটি বিষয় জানা থাকা দরকার।

কলার চাষ পদ্ধতি

আমাদের দেশে কলার বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে । বিভিন্ন ধরনের কলার জাতের মধ্যে কিছু উল্লেখ যোগ্য জাত রয়েছে। যে জাত গুলো চাষ করলে আমাদের কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হয়ে থাকে। যেমনঃ সবরি কলা,মেহের সাগর কলা,অম্রিত সাগর কলা,চাম্পা কলা,জি৯ ইত্যাদি কলা আমাদের দেশে বানিজ্যিকভাবে চাষ হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃমালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ

কলার চাষ পদ্ধতির মধ্যে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যে বিষয় গুলো আমাদের কলা চাষ করার পূর্বে জানতে হবে। যেমনঃ

  • কলা চাষের উপযুক্ত সময় নির্বাচন
  • মাটি নির্বাচন
  • জাত নির্বাচন 
  • চারা নির্বাচন
  • জমি প্রস্তুত
  • সার ব্যবস্থাপনা
  • সেচ ব্যবস্থাপনা
  • রোগ এবং পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা
  • কলা গাছের পরিচর্যা
  • কলা সংগ্রহ

কলা চাষের উপযুক্ত সময় নির্বাচন

আমাদের দেশে প্রায় সব এলাকায়ই কলা চাষ হয়ে থাকে। যদিও আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় কলা চাষ হয়ে থাকে। তবে কলা চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য কলার চাষ পদ্ধতি এবং কলা চাষের উপযুক্ত সময় জানা খুবই জরুরি। যদিও আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই কলা চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু সময় থাকে যখন বাজারে কলার দাম খুবই কম থাকে। আর তখন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আর তাই কলার চাষ পদ্ধতি এবং কলা চাষের উপযুক্ত সময় ভালোভাবে জেনে তারপর কলা চাষ করা দরকার। কলা চাষ করার পূর্বে আমাদের চিন্তা করতে হবে কখন কলা চাষ করলে সেটি বাজারে যখন দাম বেশি থাকে তখন হারভেস্ট করা যাবে।

আমরা সকলেই জানি কলা হারভেস্ট করতে ১০-১২ মাস লাগে। যদিও এই সময়টি জাতভেদে কম বেশি হয়। আবার আমরা সকলেই জানি, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ,আষাড় মাসে বাজারে কলার দাম খুবই কম থাকে। তাই এই সময় কলা না চাষ করা ভালো। 

আবার আমরা জানি, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রাহায়ন মাসে বাজারে কলার দাম খুব বেশি থাকে। তাই এই সময় কলা চাষ করা খুবই লাভজনক এবং এই সময় কলার ফলন ও খুব ভালো হয়। আবার আমরা জানি, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র মাসে কলার দাম বাজারে খুব বেশি থাকে। তাই আপনারা চাইলে এই সময় কলা চাষ করতে পারেন।

মাটি নির্বাচন

কলার চাষ পদ্ধতির মধ্যে মাটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কলা চাষ করার জন্য আপনাকে এমন মাটি নির্বাচন করতে হবে যে মাটিতে খুব বেশি পানি জমে থাকেনা। অর্থাৎ কলার চাষ করার জন্য একটু উচু জমি নির্বাচন করতে হবে। 

এছাড়াও দু-আশ,বেলে দোআঁশ, এঁটেল, এঁটেল দোআঁশ ইত্যাদি আমাদের দেশের প্রায় সকল মাটিতেই কলা চাষ ভালো হয়। সুতরাং আপনি আমাদের দেশের যে কোনো উচু জমিতে কলা চাষ করতে পারেন।

জাত নির্বাচন

কলার চাষ পদ্ধতির মধ্যে কলার জাত নির্বাচন খুবই গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশের কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের জাত চাষ করে থাকে। যদিও সব জাতের কলার চাষই অনেক লাভজনক। তবে আপনি কলা চাষ করার আগে আপনি দেকবেন আপনার এলাকায় কোন জাতের কলার চাহিদা সব চেয়ে বেশি এবং কোন জাতের কলা আপনার এলাকায় খুব ভালো ফলন হয়। আপনার এলাকায় যে জাতের কলার ফলন সব চেয়ে ভালো হয় আপনি সেই জাতের কলা চাষ করবেন।

চারা নির্বাচন

কলার চাষ পদ্ধতির মধ্যে আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কলার চারা নির্বাচন। আপনি এলাকাভেদে যে জাতের কলার চাষই করেন না কেনো আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন কলার টিস্যু কালচার চারা রোপন করার। কারন কলার টিস্যু কালচার চারা রোগ মুক্ত থাকে এবং ফলন খুব ভালো হয়। যেহেতু আমাদের দেশে সব জায়গায় কলার টিস্যু কালচার চারা পাওয়া যায় না। তাই আপনি চেষ্টা করবেন কলার ৪/৫ মাস বয়সের সুস্থ চারা রোপন করার।

জমি প্রস্তুত

কলার চাষ পদ্ধতির মধ্যে জমি প্রস্তুত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কলার চাষ কলার আগে জমি ৩/৪ টি চাষ দিয়ে ভালো ভাবে জমি প্রস্তুত করতে হবে। জমি চাষের পর সারে চার থেকে পাঁচ হাত দুরে দুরে এক থেকে দেড় হাত গভীর গর্ত করতে হবে।

গর্ত করার পর গর্তের মধ্যে চুন ছিটিয়ে ১০/১৫ দিন ফেলে রেখে মাটি শুধন করতে হবে। কলার চাষ করার জন্য এই ভাবে জমি প্রস্তুত করতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা

কলার চাষ পদ্ধতির মধ্যে আরেকটি খুব অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে সার ব্যবস্থাপনা। যেটি ছাড়া কলার চাষ করা প্রায় অসম্বব। কলার চাষের ক্ষেত্রে আপনাকে জমির কন্ডিশন অনুযায়ী ৪/৫ বার সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রথমবার জমিতে গর্ত করার পর প্রতি গর্তে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া,১০০গ্রাম এমওপি,১০০গ্রাম পটাশ এবং সাথে কিছু দানাদার কীটনাশক এবং কিছু ভিটামিন প্রয়োগ করতে হবে। 

তবে মাটি ভেদে এটি কম বেশি হতে পারে। অথবা আপনি চাইলে সার জমিতে ছিটিয়েও প্রয়োগ করতে পারেন।এছাড়াও ২/৩ মাস পর পর জমির কন্ডিশন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ ব্যবস্থাপনা

যে কোন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থাপনা যেমন খুবই গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। তেমনি কলার চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রেও সেচ ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্ব পর্ণ বিষয়। শুস্ক মৌসুমে ১০/১৫ দিন পর পর কলার জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তবে বর্ষা মৌসুমে সেচ না দিলেও চলে।

রোগ এবং পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা

বর্তমানে যে কোনো ফসল চাষের ক্ষেত্রে রোগ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ খুব বড় বাধা। তাই রোগ এবং পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। কলার চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রেও এটি খুবই জরুরি। কলা চাষের ক্ষেত্রে সাধারণত পানামা,সিকাটুডা,এবং ভাইরাজ জনিত রোগ হয়ে থাকে।

কলা চাষ করে লাভবান হতে চাইলে চারা গজানোর পর থেকে ১৫/২০ দিন পর পর আপনার স্থানীয় কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী অনুমুদিত মাত্রায় নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। তবে আপনার কলার জমিতে যদি ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দেয় সেই গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে। ভাইরাস আক্রান্ত গাছটি মূল সহ তুলে ফেলে দিয়ে সেই গাছের গোড়ায় চুন ছিটিয়ে দিতে হবে।

কলা গাছের পরিচর্যা

কলার চাষে লাভবান হওয়ার জন্য কলা গাছের সঠিক পরিচর্যা খুবই জরুরি। কলার চারা গজানোর পর থেকে কলা হারভেস্ট করা পর্যন্ত নিয়মিত কলার চাষের জমি পরিস্কার করতে হবে। কলার জমিতে নিয়মিত সার প্রয়োগ এবং কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। কলার জমিতে যদি কলার ছোট ছোট চারা গজায় তা কেটে ফেলতে হবে। এই ভাবে নিয়মিত পরিচর্যা করলে আপনি অবশ্যই কলা চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।

কলা সংগ্রহ

কলার জমি ঠিকমত পরিচর্যা করলে কলা চাষের ১১/১২ মাস পর কলা সংগ্রহ করা যায়। তবে কলার জাত ভেদে সময় কম বেশি হয়। কলার ভালো ফলন হলে একেকটা কলার কাদি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। 

কলা চাষ কেনো করবো এবং কলা চাষ করে কত টাকা আয় করা যায়?

কলা চাষের আগে যেমন কলার চাষ পদ্ধতি জানা দরকার ঠিক তেমনি কলা চাষ কেনো করবো এবং কলা চাষ করে কত টাকা আয় করা যায়? সেটিও জানা খুবই জরুরি। কারন কোনো স্মার্ট কৃষক কোনো ফসল চাষ করার আগে আয় ব্যয়ের হিসার না করে চাষ করেনা।

কলা বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় এবং খুবই লাভজনক ফসল। কলার বানিজ্যিক চাষ করে আমাদের দেশের হাজার হাজার কৃষক বর্তমানে স্বাবলম্বী হচ্ছে। কলা চাষ করলে আপনার প্রত্যেক কলার গাছ প্রতি ১২০-১৫০ টাকা খরচ হবে এবং আপনার কলার যদি ভালো ফলন হয় তবে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন। তাই আমরা বলতে পারি কলার চাষ খুবই লাভজনক একটা চাষ। তাই আপনি চাইলে কলার চাষ পদ্ধতি ভালো ভাবে জেনে কলার বানিজ্যিক চাষ করতে পারেন।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক ভাই এবং বোনেরা আমি এই আর্টিকেলটিতে কলার চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি আপনাদের কলার চাষ পদ্ধতি এবং কলা চাষের আয় ব্যয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা দেওয়া চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থেকে তবে অবশ্যই একটা শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

 

Previou Movie Next Movie