মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ সম্পর্কে জেনে নিন
আপনি কি মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আপনি যদি মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে ১ বিঘা জমি থেকে ২ লাখ টাকা আয় করতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। এই আর্টিকেলটিতে আমি মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চলুন জেনে নেয়া যাক মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কিভাবে ১ বিঘা জমি থেকে ২ লাখ টাকা আয় করা যায়।
আপনি যদি চাষে আগ্রহী হন তবে আপনি মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ থেকে প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারেন। আজকাল টমেটোর খুচরা দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। টমেটো এমন একটি সবজি, যা মানুষ শুধু তাদের সবজি তৈরিতেই ব্যবহার করে না, সালাদ হিসেবেও খায়। চলুন জেনে নেই টমেটো চাষ সম্পর্কে সবকিছু।
টমেটো, আলু এবং পেঁয়াজের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফসল হিসাবে বিবেচিত হয়। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের প্রতিটি রান্নাঘরে তৈরি খাবারে টমেটো ব্যবহার করা হয়। টমেটো কাঁচা বা রান্না করে খেতে পারেন। ভিটামিনের কথা বললে, আপনি টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে এ, সি, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পাবেন।.
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ
শাক-সবজি ও ফলমূল বিশেষ করে টমেটো চাষ করে ভালো মুনাফা অর্জন করতে হলে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, কারণ সনাতন চাষ পদ্ধতিতে ফলন বেশি হয় না। সম্ভবত সে কারণেই কৃষি বিজ্ঞানীরা সুপারিশ করেন যে কৃষকদের একটি প্রগতিশীল পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজেদের আপডেট রাখতে হবে। তাই সবজি চাষে মালচিং ব্যবহার বিশেষ উপকারী।
বিশেষ করে ট্মেটো চাষের ক্ষেত্রে ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই প্রত্যেক কৃষকের উচিত মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে একজন কৃষক খুব সহজেই ১ বিঘা জমি থেকে ২ লাখ টাকা আয় করতে পারে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ কৃষকদের জন্য বাড়তি আয়ের একটি চমৎকার উৎস। ট্মেটোর কিছু উন্নত জাত রয়েছে যা পোকামাকড় দ্বারা প্রভাবিত হয় না বা রোগ দ্বারা সৃষ্ট হয় না। এসব জাত চাষ করে কৃষকরা ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারে। আলুর পর টমেটো দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল। টমেটো এমন একটি ফসল যার চাহিদা সারা বছরই বাজারে থাকে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ কেনো করবো?
আমরা সকলেই জানি টমেটোর কিছু উন্নত জাত রয়েছে যে জাত গুলো সারা বছর চাষ হয়ে থাকে। যেহেতু আমাদের দেশে টমেটো খুব জনপ্রিয় এবং চাহিদা সম্পূর্ণ একটি সবজি এবং এর বাজার সারা বছরই অনেক ভালো থাকে। সিজিনের তুলনায় বর্তমানে অফসিজিনে টমেটোর বাজার অনেক বেশি থাকে । যার কারনে অফ সিজিনে টমেটোর চাষ বেশি হচ্ছে। আর অফসিজিনে টমেটো চাষ করার প্রধান উপায় হচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা।
শুধু তাই নয়,অফসিজিনে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে টমেটোর ফলন অনেক ভালো হয় এবং রোগ বালাই কম হয়,সেচ কম লাগে অর্থাৎ উতপাদন খরচ অনেক কম হয়। ফলে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হয়। আর এই কারনেই মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে আমাদের দেশের স্মার্ট কৃষি উদ্ধোক্তারা শীতকালেও মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মালচিং করার প্রয়োজনীয়তা কি
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার কারণে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়। কারণ কৃষকদের সেচ কম দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, এটি আগাছা অপসারণের খরচ বাঁচায়। তৃতীয়ত, এ কারণে কীটনাশক খরচ কম হয়। এসবের ফলন ভালো ফলন ও কম খরচে, যার কারণে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়।
টমেটো চাষের আয় ব্যয়
আপনাদের মধ্যে অনেকেই চিন্তা করে আমি মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করবো খরচ অনেক বেশি হবে । আসলে কি ফলন ভালো হবে কিনা। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে আয় ব্যয় কেমন হবে।আমি এখন এই প্রশ্ন গুলোর উওর দিবো।
এক বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে কত টাকা খরচ হবে এবং কত টাকা আয় হবে তার হিসাব নিচে দেয়া হলোঃ
এক বিঘা জমিতে খরচ কেমন হয় সেই হিসাব, এক বিঘা জমিতে মালচিং পেপার লাগবে দেড় রুল যার মূল্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, তারপর জমি চাষ ১৫০০ টাকা,তারপর সার প্রয়োগ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লেবার খরচ ১০ হাজার টাকা,তারপর কীটনাশক খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, মাচা তৈরির খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা । তারপর বীজ বা চারা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ।এই ভাবে এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়।
এবার আসি, এক বিঘা জমিতেমালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কত টাকা আয় করা যায় সেই হিসাবে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের ক্ষেত্রে ৩ হাজার চারা রোপন করা যায়। প্রতি গাছে যদি ৩ থেকে ৪ কেজি ফলন পাওয়া যায় আর প্রতি কেজি টমেটো যদি অ্যাভারেজ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায়। তবে একটি গাছ থেকে ৯০ থেকে ১২০ টাকা করে পেলে তবে ৩ হাজার গাছ থেকে ২৭০,০০০ থেকে ৩৬০,০০০ টাকার টমেটো বিক্রি করা যায়।
আর যদি প্রতি কেজি টমেটো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কিংবা তার থেকে বেশি বিক্রি করতে পারেন তাহলে চিন্তা করেন মাত্র এক বিঘা জমি থেকে কত টাকা আয় করা সম্বব। আর যদি আপনি ১০ বিঘা জমিতে বানিজ্যিকভাবে চাষ করেন তাহলে কত টাকা আয় করা সম্বব।
সুতরাং এক বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে ২ থেকে ২.৫ লাখ টাকা লাভ করা যায় অনায়াসে।
টমেটোর উন্নত জাত নির্বাচন
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক উন্নত জাত নির্বাচন করা খুব জরুরি। কারণ কথায় আছে ভালো বীজে ভালো ফসল। আসলে আপনি যদি কষ্ট করে টাকা খরচ করে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে ভালো ফলন না পান তাহলে আপনি লাভবান হতে পারবেন না। তাই আপনাকে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক উন্নত জাত নির্বাচন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ আধুনিক পদ্ধতিতে টমেটো চাষ
বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতগুলো হলোঃ মঙ্গল রাজা টমেটো,বাহুবলি টমেটো, স্মার্ট ১২৭০ ইত্যাদি । আপনি যদি মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে চান তাহলে এই জাত গুলোর যে কোন একটি আম্নি চাইলে চাষ করতে পারেন।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের উপযুক্ত সময়
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সঠিক সময়ের দিকে নিজর দিতে হবে। কারণ আপনি যদি সঠিক সময়ে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ না করেন তাহলে আপনি ভালো লাভবান হতে পারবেন না। তাই মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে সময় খুব গুরুত্ব পূর্ণ। যদিও সারা বছর টমেটো চাষের জন্য ভালো থাকে, কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ কৃষকই দুবার চাষ করে। প্রথমটি জুলাই-আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়টি নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে জুন-জুলাই পর্যন্ত চলে। এ জন্য প্রথমে টমেটোর বীজ রোপণ করে নার্সারি তৈরি করতে হবে।
জানুয়ারি মাসে টমেটো গাছ লাগানোর জন্য কৃষকরা নভেম্বরের শেষে টমেটো নার্সারি তৈরি করতে পারেন। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চারা রোপণ করতে হবে। আপনি যদি সেপ্টেম্বর মাসে এটি রোপণ করতে চান তবে জুলাইয়ের শেষে এর নার্সারি তৈরি করুন। আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গাছটি বপন করুন। মে মাসে রোপণের জন্য মার্চ ও এপ্রিল মাসে নার্সারী প্রস্তুত করুন।এপ্রিল ও মে মাসে চারা বপন করুন।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই টমেটোর বাজার অ্যানালাইসিস করে উপযুক্ত সময়ে চাষ করা উচিত।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের উপযুক্ত মাটি নির্বাচন
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ এমন একটি চাষ যা কৃষকদের ভালো আয় দিতে পারে। তবে এর জন্য সঠিক উৎপাদনের জন্য কৃষকদের মাটি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। যদিও টমেটো একটি ফসল যা বিভিন্ন মাটিতে জন্মাতে পারে। যেমন বেলে মাটি, এঁটেল, দোআঁশ, কালো, লাল মাটি ইত্যাদি। এসব মাটিতে সহজেই পানি নিষ্কাশন হয়। তাই এসব মাটিতে টমেটো চাষ করা যায়। তবে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ সবচেয়ে ভালো হয় এটেল বা এটেল দোআঁশ মাটিতে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের আগে কৃষক ভাইদেরও জেনে রাখা উচিত যে মাটির pH ৭-৮.৫ হওয়া উচিত। হালকা মাটি আগাম ফসলের জন্য উপকারী হতে পারে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জন্য মাঝারি থেকে ভারী মাটি উপযোগী। হালকা মাটিতে ফল দ্রুত পাকে, পাতার নিষ্কাশন ভালো হয় এবং ফসলের বৃদ্ধি ভালো হয়। কিন্তু এই ধরনের মাটির জন্য জৈব সার এবং ঘন ঘন জলের প্রচুর সরবরাহ প্রয়োজন।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও তাপমাত্রা
সারা বছরই মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা যায়। তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধি টমেটো গাছের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। তাপমাত্রার ওঠানামা ফলের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। গাছপালা ১৩ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সবচেয়ে ভাল বৃদ্ধি পায়। ফুল ও ফল দেখতে সুন্দর। রাতের তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে টমেটো ফলের জন্য ভালো।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জমি তৈরি
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে ভালো ফলন পেতে কৃষকদের প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ করতে হবে। মাটি ভঙ্গুর করতে কৃষকদের চার থেকে পাঁচটি চাষ করতে হবে। এর পর মাটি লেভেল করুন। মাটি থেকে পোকামাকড় এবং জীব মারতে সঠিকভাবে সূর্যালোক ব্যবহার করুন। যার ফলে জমির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং মাটি টমেটো ফসলের ভালো ফলনের জন্য প্রস্তুত হয়।
তারপর শেষ চাষের আগে পরিমাণ মত সার দিয়ে জমিতে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই জমিতে ৩ ফুট চউড়া বেড এবং ২ ফুটের ড্রেন তৈরি করতে হবে। তারপর বেডের উপড় দিয়ে ভালোভাবে মালচিং বিছাতে হবে। মালচিং বিছানোর পর বেডের ২ পাশ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য ছিদ্র করতে হবে। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ১৫ ইঞ্চি এবং লাইন থেকে লাইন ২৭ ইঞ্চি।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের সার ব্যবস্থাপনা
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে জমিতে সারের সুসম বন্টন খুব জুরুরি। যে কোন ফসলের জমিতে সার প্রয়োগ করার আগে জমির মাটি পরীক্ষা করে লেওয়া উচিত। তারপর আমি আনুমানিক একটা হিসাব দেয়ার চেষ্টা করতেছি।
এখানে ৩৩ শতাংশ বা ১ বিঘা জমিতে সারের হিসাব দেয়া হলোঃ
১. টিএসপি = ৫০ থেকে ৫৫ কেজি
২. এমওপি = ৩০ থেকে ৩৫ কেজি
৩. জিপসাম = ১০ কেজি
৪. ইউরিয়া = ১০ থেকে ১৫ কেজি
৫. বোরন = ২ কেজি
৬. দস্তা = ১.৫ কেজি
৭. ফুরাডান = ২ কেজি
৮. জৈব সার = ২৫০ কেজি
৯.ম্যাগনেসিয়াম = ৫ কেজি
১০. সালফার = ২ কেজি
১১. ট্রাইকোডারমা = ১ কেজি
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের চারা তৈরি ও চারা রোপণ
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জন্য, আপনাকে প্রথমে একটি নার্সারি প্রস্তুত করতে হবে। আপনি এই নার্সারিটি বীজ সিডলিং ট্রেতে প্রস্তুত করতে পারেন বা আপনি যদি চান তবে আপনি এটি মাটিতেও প্রস্তুত করতে পারেন। বীজ সিডলিং ট্রে এর সুবিধা হল যে আপনি এটিকে সহজেই তুলতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি যখন এই গাছগুলিকে এক-দেড় মাস পরে জমিতে রোপণ করবেন, তখন গাছগুলি কোনও স্থানান্তর শক ভোগ করবে না। আমরা আপনাকে বলে রাখি যে জমিতে স্থানান্তর করার সময় যদি গাছের শিকড় নড়ে যায়, তবে কয়েক দিনের মধ্যে গাছটি শুকিয়ে যেতে শুরু করে এবং কখনও কখনও শুকিয়ে যেতে শুরু করে।
সুতরাং আপনাদের উন্নত প্রযুক্তিতে চারা তৈরি করা উচিত। উন্নত প্রযুক্তিতে চারা তৈরির পর আপনাকে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে চারা সঠিক নিয়মে রোপণ করতে হবে। উন্নত প্রযুক্তিতে চারা তৈরি চারা সিডলিং ট্রে থেকে তুলে নিয়ে মালচিং এর মধ্যে যে ছিদ্র করেছেন সেখানে রোপণ করতে হবে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের সেচ ব্যবস্থাপনা
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে চারা রোপণের আগে জমিতে সেচ দিয়ে মাটি আদ্র করে নিতে হবে। তারপর চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ দিন পর হালকা পানি দিতে হবে। এবং ৮ থেকে ১০ দিন পর দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে। টমেটোতে বর্ষা মৌসুমে ৮ থেকে ১০ দিন, শীত মৌসুমে ৫ থেকে ৭ দিন এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে ৩ থেকে ৪ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। ভারী কালো মাটিতে সবসময় হালকা পানি দিন।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের ক্ষেত্রে শীতকালে, ৬ থেকে ৭ দিনের ব্যবধানে এবং গ্রীষ্মের মাসে, মাটির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে সেচ দিন। ভিজানোর পর অতিরিক্ত পানি দিলে টমেটোতে ফাটল দেখা দেয়। ফুল ফোটার সময় সেচ দেওয়া জরুরি। এ সময় পানির অভাবে ফুল ঝরে পড়তে পারে এবং ফলন ও ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে প্রতি পাক্ষিক আধা ইঞ্চি করে সেচ দিলে শিকড় বেশি ছড়িয়ে পড়ে এবং ফলনও বৃদ্ধি পায়।
টমেটো গাছের ডাল ছাঁটাই করবেন
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে টমেটোর জন্য ডাল ছাঁটাই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষিকাজ। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রথমত,ডাল ছাঁটাই কৃষকদের গাছের পাতা এবং ফল পর্যবেক্ষণ এবং ভারসাম্য করার সুযোগ দেয়। উপরন্তু, মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে ট্মেটো গাছের ডাল ছাঁটাই গাছের বায়ু সঞ্চালন উন্নত করে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও, ফসল কাটা এবং অন্যান্য কৃষি কার্যক্রম (রাসায়নিক ছিটানো সহ) অনেক সহজ হয়ে যায়।
সাধারণত, যে টমেটো গাছগুলোর ডাল ছাঁটাই করা হয় না সেগুলো সময়ের সাথে সাথে যথেষ্ট পরিমাণে ফল উৎপাদন করা বন্ধ করে দেয়। আমাদের বুঝতে হবে যে সমস্ত টমেটো গাছের ডাল একই ছাঁটাই প্রয়োজন হয় না। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে ট্মেটো গাছের ডাল ছাঁটাই কৌশলের মধ্যে রয়েছে বাইরের অঙ্কুরগুলি অপসারণ করা যা শুধুমাত্র প্রধান কাণ্ডটি বাড়তে থাকে। এইভাবে, গাছের একটি মাত্র কান্ড থাকে এবং সোজা হয়ে ওঠে। ডেড-হেডিং হল বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে আরেকটি কৌশল, যার পরে ২-৪ টি পেরিফেরাল অঙ্কুর ছাড়া বাকি সবগুলো অপসারণ করা হয়। এই ভাবে, উদ্ভিদ ২-৪ প্রধান অঙ্কুর আছে।
অধিকাংশ কৃষক গাছপালা পাতলা করে। তারা কান্ড এবং পাতার সেটের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অঙ্কুরগুলি সরিয়ে দেয়। মূল কান্ডের খুব কাছাকাছি শাখাগুলি কাটার চেষ্টা করা উচিত নয়। পরিবর্তে, আপনি সংক্রমণ এড়াতে ৪ সেন্টিমিটার দূরত্ব রেখে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জন্য, অনেক জাত রয়েছে যেগুলির বৃদ্ধি সীমিত এবং ছাঁটাই প্রয়োজন হয় না।
টমেটো গাছে খুটি দেওয়া
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই টমেটো গাছে খুটি বা মাচা দিতে হবে। কারণ টমেটো গাছে মাচা বা খুটি না দিয়ে গাছ গুলো মাটিতে পড়ে যায় ফলে গাছে রোগ দেখা দেয় এবং ফলন নষ্ট হয়। ফলে কৃষক লাভবান হতে পারেনা। তবে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি A প্যাটানের মাচা দেয়া হয়।
A প্যাটানের মাচা দিলে টমেটো গাছ সঠিক ভাবে বাড়তে পারে । ফলে ফলন অনেক গুণ বেশি হয়।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের আগাছা নিয়ন্ত্রণ
যে কোন সবজি ফসল চাষ করা হোক না কেন তা আগাছামুক্ত রাখা খুব জরুরি। কারণ জমিতে কম-বেশি আগাছা থাকলে গাছে রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যার কারণে গাছ সঠিক পরিমাণে সার পায় না এবং তাদের বৃদ্ধিও বন্ধ হয়ে যায়।
তবে
যেহেতু মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করবো তাই আগাছা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে
১৫ থেকে ২০ দিন পর পর ড্রেনের আগাছা পরিস্কার করতে হবে এবং টমেটো গোড়ায়
মাটি দিতে হবে।
টমেটো গাছের রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা
আমরা সকলেই জানি টমেটো চাষের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে রোগ ও পোকামাকড় আক্রমণ করে থাকে। যদিও মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কিছুটা কম হয়। কিন্তু কৃষক ভাইদের সচেতন থাকতে হবে এবং নিয়মিত স্প্রে করতে হবে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে যে সকল রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে তা নিচে দেয়া হলোঃ
সাদা মাছি: মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে সাদা মাছি দেখা দিতে পারে। এটি পাতার রস চুষে গাছকে দুর্বল করে। এটি পাতায় মধুর ফোঁটার মতো কালো দাগ ফেলে। এগুলিও পাতার কোঁকড়া রোগের কারণ হয়। নার্সারিতে বীজ বপনের পর জাল বা পাতলা সাদা কাপড় দিয়ে বিছানা ঢেকে দিন। এটি পোকার আক্রমণ থেকে উদ্ভিদকে রক্ষা করে। তাদের আক্রমণ পরিমাপ করার জন্য, হলুদ ফেরোমন কার্ড ব্যবহার করুন, যা গ্রীস এবং আঠালো তেল দিয়ে প্রলেপযুক্ত।
সাদামাছির বিস্তার রোধ করার জন্য, আক্রান্ত গাছগুলিকে উপড়ে ফেলে ধ্বংস করুন। মারাত্মক আক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যাসিটামিপ্রিড ২০ এসপি ৮০ গ্রাম প্রতি ২০০ লিটার পানিতে বা ট্রাইজোফস ২৫০ মিলি প্রতি ২০০ লিটার পানিতে অথবা প্রোফানোফস ২০০ মিলি প্রতি ২০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এই স্প্রেটি ১৫ দিন পর পুনরাবৃত্তি করুন।
থ্রিপস: এটি টমেটোতে পাওয়া একটি সাধারণ পোকা। এটি বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পাওয়া যায়। এটি পাতা থেকে রস চুষে নেয়, যার কারণে পাতা কুঁচকে যায়। পাতার আকৃতি কাপের মতো হয়ে যায় এবং তারা উপরের দিকে বাঁক নেয়। এ কারণে ফুলও ঝরে পড়তে থাকে। তাদের সংখ্যা পরীক্ষা করতে, প্রতি একরে ৫-৮ টি আঠালো ফাঁদ লাগান। এগুলো প্রতিরোধের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে ভার্টিসিলিয়াম লিকানি স্প্রে করুন।
থ্রিপসের পরিমাণ বেশি হলে ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮ এসএল ৬০ মিলি বা ফিপ্রোনিল ২০০ মিলি প্রতি ২০০ লিটার পানিতে বা ফিপ্রোনিল ৮০ শতাংশ ডব্লিউপি ২.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে বা এসিফেট ৭৫ শতাংশ ডব্লিউপি ৬০০ গ্রাম প্রতি ২০০ মিলি স্প্রে অথবা ২০০ মিলি স্প্রে। প্রতি একর ২০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে।
আরো পড়ুনঃ মালচিং পদ্ধতিতে ফুলকপি চাষ
ফলের পোকা: মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে এটি টমেটোর প্রধান পোকা। এটি হেলিকভারপা দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ না করা হলে ফসলের ২২-৩৭ শতাংশ ক্ষতি হয়। এটি পাতা, ফুল ও ফল খায়। এটি ফলের উপর গোলাকার গর্ত করে এবং এর সজ্জা খায়। প্রাথমিক ক্ষতির সময় এর লার্ভা হাত দ্বারা সংগ্রহ করা যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে, প্রতি লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম হারে বা নিম পাতার দ্রবণ স্প্রে করুন।
ফল পোকার প্রতিরোধের জন্য, রোপণের ২০ দিন পর সমান দূরত্বে ফেরোমন কার্ড প্রয়োগ করুন এবং আক্রান্ত স্থানগুলি ধ্বংস করুন। পোকার সংখ্যা বেশি হলে প্রতি ২০০ লিটার পানিতে সাপনোসাদ ৮০ মিলি + স্টিকার ৪০০ মিলি স্প্রে করুন। ডাল ও ফল পোকার প্রতিরোধের জন্য প্রতি ২০০ লিটার পানিতে কোরাজান ৬০ মিলি স্প্রে করুন।
লাউস: মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের ক্ষেত্রে এটি একটি বিপজ্জনক পোকা যা ফলন ৮০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এই পোকা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। এটি নীচের দিক থেকে পাতা খায়। আক্রান্ত পাতা কাপ আকৃতির দেখায়। এর আক্রমণ বাড়লে পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে এবং শাখা-প্রশাখা খালি হয়ে যায়। যদি জমিতে হলুদ উকুন ও থ্রিপসের আক্রমণ দেখা যায়, তাহলে ক্লোফেনাপির ১৫ মিলি প্রতি ১০ লিটার, অ্যাবামেকটিন ১৫ মিলি প্রতি ১০ লিটার বা ফেনাজাকুইন ১০০ মিলি প্রতি ১০০ লিটারে প্রয়োগ করা কার্যকর হবে। ভালো নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পাইরোমেসিফেন ২২.৯ এসসি প্রতি একর ২০০ মিলি হারে ১৮০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
ফল পচা: মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে এটি টমেটোর একটি প্রধান রোগ যা আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হয়। টমেটোতে জলের মতো দাগ দেখা যায়। ফল পচে যাওয়ার কারণে পরে কালো ও বাদামী হয়ে যায়। বপনের আগে ট্রাইকোডার্মা ৫-১০ গ্রাম বা কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম বা থিরাম ৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজ দিয়ে শোধন করুন। ক্ষেতে এর আক্রমণ দেখা গেলে আক্রান্ত ও পতিত ফল ও পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলুন। এই রোগটি বেশিরভাগ মেঘলা আবহাওয়ায় দেখা যায়, এটি প্রতিরোধের জন্য ম্যানকোজেব ৪০০ গ্রাম বা কপার অক্সিক্লোরাইড ৩০০ গ্রাম বা ক্লোরোথালোনিল ২৫০ গ্রাম প্রতি ২০০ লিটার পানিতে স্প্রে করুন। এই স্প্রেটি ১৫ দিন পর পুনরাবৃত্তি করুন।
অ্যানথ্রাকনোজ: গরম তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতায় এই রোগ বেশি ছড়ায়। এ রোগের কারণে গাছের আক্রান্ত অংশে কালো দাগ দেখা যায়। এই দাগগুলি সাধারণত বৃত্তাকার হয়, জলে ভিজিয়ে থাকে এবং কালো ডোরা থাকে। যে ফলগুলিতে বেশি দাগ থাকে সেগুলি পাকার আগেই পড়ে যায়, ফলে ফসলের ফলন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এ রোগের আক্রমণ দেখা গেলে তা বন্ধ করতে প্রোপিকোনাজল বা হেক্সাকোনাজল ২০০ মিলি প্রতি ২০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ব্লাইট রোগ: মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে এটি টমেটো চাষের প্রধান রোগ। প্রথম দিকে পাতায় ছোট ছোট বাদামী দাগ থাকে। পরবর্তীতে কান্ড ও ফলের উপরও এই দাগ দেখা যায়। সম্পূর্ণরূপে বিকশিত দাগগুলি কুশ্রী এবং কেন্দ্রে গোলাকার গর্ত সহ গাঢ় বাদামী হয়ে যায়। অতিরিক্ত আক্রমণ হলে এর পাতা ঝরে যায়। এর আক্রমণ দেখা গেলে ম্যানকোজেব ৪০০ গ্রাম বা ট্যাবুকোনাজল ২০০ মিলি প্রতি ২০০ লিটারে স্প্রে করতে হবে।
প্রথম স্প্রে থেকে ১০-১৫ দিন পর আবার স্প্রে করুন। মেঘলা আবহাওয়ায় এর বিস্তারের ঝুঁকি বেশি থাকে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, প্রতি ১০০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম হারে ক্লোরোথালোনিল স্প্রে করুন। আকস্মিক বৃষ্টিপাতও এই রোগের বিস্তারে সাহায্য করে, এটি প্রতিরোধ করার জন্য, প্রতি লিটারে কপার ছত্রাকনাশক ৩০০ গ্রাম এবং স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন ৬ গ্রাম প্রতি ২০০ লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।
পাতা ঝরে যাওয়া এবং ঝরে পড়া: মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে এই রোগটি আর্দ্র বা দুর্বল নিকাশী মাটিতে হয়। এটি একটি মাটিবাহিত রোগ। এ কারণে পানিতে ডুবিয়ে রাখলে কাণ্ড শুকিয়ে যায় এবং শুকিয়ে যেতে থাকে। এ কারণে গাছ বের হওয়ার আগেই মরে যায়। এ রোগ নার্সারিতে এলে সব গাছপালা নষ্ট করে দেয়। শিকড় পচন রোধ করার জন্য মাটিতে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১ শতাংশ ইউরিয়া ১০০ গ্রাম এবং কপার অক্সি ক্লোরাইড ২৫০ গ্রাম প্রতি ২০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
গাছ যাতে শুকিয়ে না যায় তার জন্য কাছাকাছি মাটিতে কপার অক্সি ক্লোরাইড ২৫০ গ্রাম বা কার্বেনডাজিম ৪০০ গ্রাম প্রতি ২০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত জল দেওয়া তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বাড়ায়, যা শিকড় পচে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, গাছের শিকড়ের কাছে মাটির সাথে ট্রাইকোডার্মা ২ কেজি প্রতি একর প্রয়োগ করুন। মাটিবাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য মাটিতে কার্বেন্ডাজিম ১ গ্রাম প্রতি লিটার অথবা বোর্ডো মিক্স ১০ গ্রাম প্রতি লিটার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এক মাস পর একর প্রতি ২ কেজি ট্রাইকোডার্মা ১০০ কেজি গোবরের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করুন।
পাতায় দাগ: মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে এ রোগের কারণে পাতার নিচের দিকে সাদা দাগ দেখা যায়। এই রোগটি খাদ্য হিসাবে উদ্ভিদ ব্যবহার করে। যার কারণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি সাধারণত ফল গঠনের কিছুক্ষণ আগে বা ফল গঠনের সময় পুরোনো পাতায় আক্রমণ করে। কিন্তু ফসলের বৃদ্ধির সময় যে কোন পর্যায়ে এটি আক্রমণ করতে পারে। গুরুতর আক্রমণের ক্ষেত্রে, পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে।
ক্ষেতে পানি জমতে দেবেন না এবং মাঠ পরিষ্কার রাখতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে হ্যাক্সা কনাজোল মিশিয়ে স্প্রে করুন। হঠাৎ বৃষ্টি হলে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ক্রমান্বয়ে ক্ষতির ক্ষেত্রে, জল দ্রবণীয় সালফার ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার জলে ২-৩ বার ১০ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করুন।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কত টাকা আয় করা যায়?
এক বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে কত টাকা খরচ হবে এবং কত টাকা আয় হবে তার হিসাব নিচে দেয়া হলোঃ
এক বিঘা জমিতে খরচ কেমন হয় সেই হিসাব, এক বিঘা জমিতে মালচিং পেপার লাগবে দেড় রুল যার মূল্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, তারপর জমি চাষ ১৫০০ টাকা,তারপর সার প্রয়োগ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লেবার খরচ ১০ হাজার টাকা,তারপর কীটনাশক খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, মাচা তৈরির খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা । তারপর বীজ বা চারা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ।এই ভাবে এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়।
এবার আসি, এক বিঘা জমিতেমালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কত টাকা আয় করা যায় সেই হিসাবে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের ক্ষেত্রে ৩ হাজার চারা রোপন করা যায়। প্রতি গাছে যদি ৩ থেকে ৪ কেজি ফলন পাওয়া যায় আর প্রতি কেজি টমেটো যদি অ্যাভারেজ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায়। তবে একটি গাছ থেকে ৯০ থেকে ১২০ টাকা করে পেলে তবে ৩ হাজার গাছ থেকে ২৭০,০০০ থেকে ৩৬০,০০০ টাকার টমেটো বিক্রি করা যায়।টমেটোর উন্নত জাত কোনটি?
বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতগুলো হলোঃ মঙ্গল
রাজা টমেটো,বাহুবলি টমেটো, স্মার্ট ১২৭০ ইত্যাদি । আপনি যদি মালচিং
পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে চান তাহলে এই জাত গুলোর যে কোন একটি আপনি চাইলে
চাষ করতে পারেন।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের উপযুক্ত সময় কোনটি?
যদিও সারা বছর টমেটো চাষের জন্য ভালো থাকে, কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ কৃষকই দুবার চাষ করে। প্রথমটি
জুলাই-আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়টি
নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে জুন-জুলাই পর্যন্ত চলে। এ জন্য প্রথমে টমেটোর বীজ রোপণ করে নার্সারি তৈরি করতে হবে।জানুয়ারি মাসে টমেটো গাছ লাগানোর জন্য কৃষকরা নভেম্বরের শেষে টমেটো নার্সারি তৈরি করতে পারেন। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চারা রোপণ করতে হবে। আপনি যদি সেপ্টেম্বর মাসে এটি রোপণ করতে চান তবে জুলাইয়ের শেষে এর নার্সারি তৈরি করুন। আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গাছটি বপন করুন। মে মাসে রোপণের জন্য মার্চ ও এপ্রিল মাসে নার্সারী প্রস্তুত করুন। এপ্রিল ও মে মাসে চারা বপন করুন।
টমেটো গাছে কি পরিমান সার দিতে হয়?
এখানে ৩৩ শতাংশ বা ১ বিঘা জমিতে সারের হিসাব দেয়া হলোঃ
১. টিএসপি = ৫০ থেকে ৫৫ কেজি
২. এমওপি = ৩০ থেকে ৩৫ কেজি
৩. জিপসাম = ১০ কেজি
৪. ইউরিয়া = ১০ থেকে ১৫ কেজি
৫. বোরন = ২ কেজি
৬. দস্তা = ১.৫ কেজি
৭. ফুরাডান = ২ কেজি
৮. জৈব সার = ২৫০ কেজি
৯.ম্যাগনেসিয়াম = ৫ কেজি
১০. সালফার = ২ কেজি
১১. ট্রাইকোডারমা = ১ কেজি
টমেটো চাষের উপযুক্ত মাটি কোনটি?
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ এমন একটি চাষ যা কৃষকদের ভালো আয় দিতে পারে। তবে এর জন্য সঠিক উৎপাদনের জন্য কৃষকদের মাটি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। যদিও টমেটো একটি ফসল যা বিভিন্ন মাটিতে জন্মাতে পারে। যেমন বেলে মাটি, এঁটেল, দোআঁশ, কালো, লাল মাটি ইত্যাদি। এসব মাটিতে সহজেই পানি নিষ্কাশন হয়। তাই এসব মাটিতে টমেটো চাষ করা যায়। তবে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ সবচেয়ে ভালো হয় এটেল বা এটেল দোআঁশ মাটিতে। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের আগে কৃষক ভাইদেরও জেনে রাখা উচিত যে মাটির pH ৭-৮.৫ হওয়া উচিত। হালকা মাটি আগাম ফসলের জন্য উপকারী হতে পারে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জন্য মাঝারি থেকে ভারী মাটি উপযোগী। হালকা মাটিতে ফল দ্রুত পাকে, পাতার নিষ্কাশন ভালো হয় এবং ফসলের বৃদ্ধি ভালো হয়। কিন্তু এই ধরনের মাটির জন্য জৈব সার এবং ঘন ঘন জলের প্রচুর সরবরাহ প্রয়োজন।
শেষকথা- মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ
প্রিয় কৃষক ভাইয়েরা, আমি এই আর্টিকেলটিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ