মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক ভাই এবং বোনেরা, আসসালামু আলাইকম। আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ সম্পর্কে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ সম্পর্কে জানতে চায়। তাই আপনারা যারা মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ সম্পর্কে জানতে চান এবং মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করে বেশি লাভবান হতে চান তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি।
আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাবেন।
মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ
মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ সম্পর্কে কথা বলার পূর্বেই আমি যে কথাটি বলবো সেটি হলো মালচিং পদ্ধতি ছাড়া শীতকানীন শসা চাষ সম্বব না প্রায় অসম্বব। কারন শীতকালে মাটি খুব ঠান্ডা থাকে ফলে শসা গাছের বৃদ্ধি ঠিক মত হয়না এবং শসা গাছ কুকরে যায়। আর এই কারনেই মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করা হয়ে থাকে এবং মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ খুবই লাভজনক একটি চাষ।
আরো পড়ুনঃ মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ
বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত তরুণ কৃষি উদ্ধোক্তারা মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। শীতকালে যেহেতু বাজারে শসা পাওয়া যায়না তাই বাজারে শসার চাহিদা থাকে প্রচুর পরিমানে। আর এই সুযোগটি আমাদের কাজে লাগানো উচিত। তাই আপনারা যদি উন্নত প্রযুক্তিতে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করতে পারেন এবং ঠিক মত পরিচর্যা করতে পারেন তাহলে এটি হতে পারে খুবই ব্যবসা জনক একটি চাষ।
মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা কিভাবে চাষ করবো
মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার জন্য আমাদের বেশ কিছু বিষয় মেনে চাষ করতে হবে।
যেমনঃ
জাত নিরবাচনঃ মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাত নির্বাচন। কারন শসার হাজার হাজার জাত আছে। কিন্তু সব জাতে শসা শীত কালে চাষ করা যায় না। কিংবা চাষ করলেও ভালো ফলন পাওয়া যায়না। শীত কালে এমন একটি জাত চাষ করতে হবে যে জাতটি ঠান্ডা সহনশীল এবং প্রতিকুল আবহাওয়ায় ও ভালো ফলন দেয়।
শীত কালে চাষ করার জন্য আমার দেখা সবচেয়ে ভালো জাত হচ্ছে agro one এর সাবিরা জাত। তবে আপনি যে জাতই চাষ করেন সেটি শীতকালের জন্য উপযুক্ত কিনা তা জেনে চাষ করবেন। আর তা না হলে লস হওয়ার সম্বাবনা থাকে।
জমি নিরবাচনঃ মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার ক্ষেত্রে জমি নির্বাচনও খুবই গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। আপনাকে এমন একটি জমি নির্বাচন করতে হবে যে জমিতে সূর্যের আলো ঠিকমত পড়ে এবং বাতাস ঠিক মত লাগে।
মাটি প্রস্তুতঃ মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার জন্য মাটি প্রস্তুত করাটাও খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কম্পোস্টের মতো জৈব সার বেশি করে দিয়ে এবং অন্যান্য সার গুলো পরিমান মত দিয়ে মাটি প্রস্তুত করুন। মাটির pH প্রায় 6.0 থেকে 6.8 এ মধ্যে রাখুন , যা শসার বৃদ্ধির জন্য আদর্শ।
চারা রোপনঃ মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার ক্ষেত্রে চারা রোপন সঠিক ভাবে করাটা জরুরি। যখন শীতের প্রবনতা কম থাকে অর্থাৎ অক্টোবরের শেষে দিকে বা নবেম্বর মাসে অথবা ডিসেম্বর মাসের শুরুতে আপনি চাইলে শীত কালীন শসা চাষ করতে পারেন। তবে শীতকালে শসা চাষের ক্ষেত্রে চারা থেকে চারার দূরত্ব ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি রাখতে হবে।
মালচিং প্রয়োগঃ শীতকালে শসা চাষের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মালচিং পেপার ব্যবহার করতে হবে। কারন শীত কালে প্রচুর ঠান্ডা থাকে ফলে শসা গাছের বৃদ্ধি ঠিক মত হয়না। কিন্তু মালচিং পেপার ব্যবহার করলে মাটির তাপমাত্রা ঠিক থাকে। শুধু তাই নয় মালচিং পেপার ব্যবহার করলে জমিতে আগাছা হয়না ফলে জমিতে প্রয়োগকৃত সার আগাছা নষ্ট করতে পারেনা। ফলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং ফলন অনেক বেশি হয়।
সেচ দেওয়াঃ মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার ক্ষেত্রে নিয়মিত সেচ দেওয়া খুবই গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। জমিতে আপনাকে এমন ভাবে সেচ দিতে হবে যাতে জমি খুব বেশি শুকিয়ে না যায় আবার জমিতে যেন পানি জমে না থাকে।
কীটনাশক প্রয়োগঃ মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার ক্ষেত্রে যদিও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তারপরও আপনাকে নিয়মিত সিডীউন স্প্রে করতে হবে। কারন শসা গাছে বিভিন্ন ধরনের চোশক পোকা যেমন,সাদা মাছি,লাল মাকড়,বিটল পোকা ইত্যাদি পোকা আক্রমন করে থাকে এছাড়ও কিছু রোগ যেমন,ডলে পড়া, লিফ কারল ভাইরাস,মোজাইক ভাইরাস ইত্যাদি রোগ আক্রমন করে থাকে। ফলে এই সমস্ত রোগ এবং পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত স্প্রে করতে হবে।
মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষের আয় ব্যয়
মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ খুবই লাভজনক একটি চাষ। আমরা সকলেই জানি শসা সারা বছর চাষ করা গেলেও আমাদের দেশের কৃষকরা শীত কালে বেশি চাষ করে না। কারন তারা মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করার বিষয় টি ভালোভাবে জানে না কিংবা বুজেনা। আর তাই আমাদের দেশে শীত কালে বাজারে শসার প্রচুর চাহিদা থাকে,যেহেতু বাজারে চাহিদা মত শসা পাওয়া যায় না তাই দাম অনেক বেশি থাকে।
আরো পড়ুনঃ গ্রামে কিসের ব্যবসা করা যায় এবং মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করা যায়
আর এই সুযোগটি যারা নিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করতেছে তারা প্রচুর লাভবান হচ্ছে। মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষের ক্ষেত্রে আমি যদি এক বিঘা জমির হিসার আপনাদেরকে দেখায় তাহলে আপনারা বুজতে পারবেন মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ বানিজ্যিক ভাবে করলে কি পরিমান লাভ করা সম্বব।
এক বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষের ক্ষেত্রে ৩ হাজার চারা রোপন করা যায়। প্রতি গাছে যদি ২ কেজি ফলন পাওয়া যায় আর প্রতি কেজি শসা যদি ২০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায়। তবে একটি গাছ থেকে ৪০ টাকা করে পেলে তবে ৩ হাজার গাছ থেকে ১২০,০০০ টাকার শসা বিক্রি করা যায়।
আর যদি প্রতি কেজি শসা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কিংবা তার থেকে বেশি বিক্রি করতে পারেন তাহলে চিন্তা করেন মাত্র এক বিঘা জমি থেকে কত টাকা আয় করা সম্বব। আর যদি আপনি ১০ বিঘা জমিতে বানিজ্যিকভাবে চাষ করেন তাহলে কত টাকা আয় করা সম্বব।
এখন আসি এক বিঘা জমিতে খরচ কেমন হয় সেই হিসাবে, এক বিঘা জমিতে মালচিং পেপার লাগবে দেড় রুল যার মূল্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, তারপর জমি চাষ ১৫০০ টাকা,তারপর সার প্রয়োগ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লেবার খরচ ১০ হাজার টাকা,তারপর কীটনাশক খরচ ১০ হাজার টাকা, মাচা তৈরির খরচ ১০ হাজার টাকা । এই ভাবে এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়।
সুতরাং এক বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ করা যায় অনায়াসে।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর
শীতকালে কি আসলেই শসা চাষ করা যায়?
এক কথায় উওর হচ্ছে হ্যা। মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ করা যায়।
মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষের আয় ব্যয়
এক বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষের ক্ষেত্রে ৩ হাজার চারা রোপন করা যায়। প্রতি গাছে যদি ২ কেজি ফলন পাওয়া যায় আর প্রতি কেজি শসা যদি ২০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায়। তবে একটি গাছ থেকে ৪০ টাকা করে পেলে তবে ৩ হাজার গাছ থেকে ১২০,০০০ টাকার শসা বিক্রি করা যায়।
আর যদি প্রতি কেজি শসা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কিংবা তার থেকে বেশি বিক্রি করতে পারেন তাহলে চিন্তা করেন মাত্র এক বিঘা জমি থেকে কত টাকা আয় করা সম্বব। আর যদি আপনি ১০ বিঘা জমিতে বানিজ্যিকভাবে চাষ করেন তাহলে কত টাকা আয় করা সম্বব।
এখন আসি এক বিঘা জমিতে খরচ কেমন হয় সেই হিসাবে, এক বিঘা জমিতে মালচিং পেপার লাগবে দেড় রুল যার মূল্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, তারপর জমি চাষ ১৫০০ টাকা,তারপর সার প্রয়োগ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লেবার খরচ ১০ হাজার টাকা,তারপর কীটনাশক খরচ ১০ হাজার টাকা, মাচা তৈরির খরচ ১০ হাজার টাকা । এই ভাবে এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়।
উপসংহার-মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ
প্রিয় ভাই এবং বোনেরা এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সাথে মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ,মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা কিভাবে চাষ করা যায়,মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষের আয়-ব্যয় এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি এই পোস্টটি থেকে আপনারা মালচিং পদ্ধতিতে শীতকালীন শসা চাষ সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আমারা আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই শেয়ার করবেন।