দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ এবং দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় জেনে নিন

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয়ঃ আপনি কি দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন সমস্যাই ভুগতেছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। কারণ এই আর্টিকেলটিতে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ এবং দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় সহ এই সম্পর্কে সকল বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়া হলো। 



দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। প্রায় সব বয়সের মানুষেরই এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের ফলে প্রচণ্ড ব্যথা, ফোলাভাব, লালভাব এবং রক্তপাত হতে পারে। এটি দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করতে পারে, এমনকি দাঁত হারানোর কারণও হতে পারে।

তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বলে, দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ এবং দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। 

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের কারণ

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল দাঁতের ক্ষয়। দাঁতের ক্ষয়ের ফলে দাঁতের উপর একটি পাতলা আবরণ তৈরি হয়, যাতে ব্যাকটেরিয়া জমতে শুরু করে। এই ব্যাকটেরিয়া মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ইনফেকশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের অন্যান্য কারণগুলো হলঃ

  • দাঁতের পাথরঃ দাঁতের ক্ষয়ের ফলে তৈরি হওয়া ব্যাকটেরিয়ার আবরণ শক্ত হয়ে দাঁতের পাথরে পরিণত হয়। দাঁতের পাথর মাড়ির প্রদাহ এবং ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।
  • জিনগত কারণঃ কিছু ক্ষেত্রে, জিনগত কারণ দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হতে পারে।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের লক্ষণ

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। ইনফেকশনের প্রাথমিক লক্ষণগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ

  • মাড়ি ফুলে যাওয়া
  • মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
  • মাড়িতে ব্যথা
  • মুখে দুর্গন্ধ
  • খাবার চিবানোর সময় ব্যথা

ইনফেকশন আরও খারাপ হলে, নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে

  • মাড়ি থেকে পুঁজ বের হওয়া
  • চোয়ালের হাড়ে ব্যথা
  • জ্বর
  • সারা শরীরে ব্যথা

কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হয়

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের প্রধান কারণ হল ব্যাকটেরিয়া। তবে, ভিটামিনের অভাবও মাড়ির স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং মাড়িতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ভিটামিন সিঃ দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে, যা মাড়িকে শক্তিশালী করে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি-এর অভাবে মাড়ি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং সংক্রমণের জন্য বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

ভিটামিন এঃ ভিটামিন দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ টিস্যু বৃদ্ধি এবং মেরামত করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ-এর অভাবে মাড়ি ফুলে যেতে পারে, রক্তপাত হতে পারে এবং সংক্রমণের জন্য বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের শোষণে সাহায্য করে, যা দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি-এর অভাবে দাঁত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং সংক্রমণের জন্য বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

ভিটামিন ইঃ ভিটামিন দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং টিস্যু ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্ষা করে। ভিটামিন ই-এর অভাবে মাড়ি ফুলে যেতে পারে, রক্তপাত হতে পারে এবং সংক্রমণের জন্য বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

ভিটামিন কেঃ ভিটামিন কে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, যা মাড়ি থেকে রক্তপাত কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন কে-এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে এবং সংক্রমণের জন্য বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

এছাড়াও অন্যান্য ভিটামিনও দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

সুতরাং, দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেয়ে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের জটিলতা

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন একটি সাধারণ সমস্যা। এটিকে জিঞ্জিভাইটিসও বলা হয়। দাঁতের মাড়িতে ব্যাকটেরিয়ার জমাট বেঁধে প্লাক তৈরি হয়। এই প্লাক যদি অপসারণ না করা হয় তাহলে তা ক্যালকুলাস বা দাঁতের পাথরে পরিণত হয়। ক্যালকুলাস দাঁত থেকে আলগা হয়ে মাড়িতে ঢুকে মাড়ির প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি ইনফেকশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের জটিলতাগুলি হলঃ

  • পেরিওডন্টাইটিসঃ যদি জিঞ্জিভাইটিস চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তা পেরিওডন্টাইটিস নামে একটি গুরুতর সমস্যায় পরিণত হতে পারে। পেরিওডন্টাইটিসে মাড়ি থেকে দাঁত আলগা হয়ে যেতে পারে।
  • অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাঃ পেরিওডন্টাইটিস অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমনঃ
    • হৃদরোগ
    • স্ট্রোক
    • টাইপ ডায়াবেটিস
    • আলঝাইমার রোগ

পেরিওডন্টাইটিস

পেরিওডন্টাইটিস হল দাঁতের মাড়ির টিস্যুতে সংক্রমণ। এটি দাঁতের মাড়ির ক্ষয় এবং দাঁতের ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। পেরিওডন্টাইটিসের লক্ষণগুলি হলঃ

  • মাড়ি ফুলে যাওয়া
  • মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
  • মাড়ি লাল এবং ফোলা
  • মাড়িতে ব্যথা
  • মুখের দুর্গন্ধ

পেরিওডন্টাইটিস চিকিৎসা না করা হলে তা দাঁতের ক্ষতি এবং দাঁত হারানোর দিকে নিয়ে যেতে পারে। পেরিওডন্টাইটিসের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেঃ

  • অ্যান্টিবায়োটিকঃ ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • স্কেলিং এবং পোলিশিংঃ  দাঁতের প্লাক এবং ক্যালকুলাস অপসারণের জন্য স্কেলিং এবং পোলিশিং করা যেতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে, দাঁতের মাড়ির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

পেরিওডন্টাইটিস অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে পেরিওডন্টাইটিসঃ

  • হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ ডায়াবেটিস-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রসবপূর্ব জটিলতা-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • সাধারণ অসুস্থতা এবং হাসপাতাল ভর্তির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয়

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন একটি সাধারণ সমস্যা। এটি দাঁতের প্লাক এবং ক্যালকুলাস জমে থাকার কারণে হয়। লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লস করা এবং নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিচে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় সম্পর্কে কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো।  

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে, যেমনঃ

  • দাঁতের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। দাঁতের ডাক্তার আপনার মাড়ির অবস্থা পরীক্ষা করবেন এবং উপযুক্ত চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন।
  • দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লসিংয়ের দক্ষতা উন্নত করুন। দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লস করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন। চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় দাঁতের প্লাক তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন। ধূমপান দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ

  • অ্যান্টিবায়োটিকঃ  ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • স্কেলিং এবং পোলিশিংঃ  দাঁতের প্লাক এবং ক্যালকুলাস অপসারণের জন্য স্কেলিং এবং পোলিশিং করা যেতে পারে।
  • দাঁতের মাড়ির অস্ত্রোপচারঃ কিছু ক্ষেত্রে, দাঁতের মাড়ির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে, যেমনঃ

  • দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করুন এবং প্রতিদিন একবার ফ্লস করুন।
  • নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যান।
  • চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। তাই, লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

দাঁতের ইনফেকশনের এন্টিবায়োটিক

দাঁতের ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ

  • অ্যান্টিবায়োটিকঃ  অ্যান্টিবায়োটিক হল ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। দাঁতের ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলি হল:
    • স্ট্রেপ্টোকোকাস মিউট্যান্স
    • পেরিওডোনটাল প্যাকটিকা
    • এনডোটোক্সিক ব্যাকটেরিয়া

দাঁতের ইনফেকশনের ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলির মধ্যে রয়েছেঃ * অ্যামোক্সিসিলিন * অ্যামোক্সিসিলিন এবং ক্লাভুল্যানিক অ্যাসিড * সিপ্রোফ্লক্সাসিন * মিনোসাইক্লিন

অ্যান্টিবায়োটিকগুলি সাধারণত মুখের মাধ্যমে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে, ইনজেকশন বা আইভি আকারে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে।

  • অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধঃ অ্যান্ট-ইনফ্লেমেটরি ওষুধগুলি ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। দাঁতের ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত সাধারণ অ্যান্ট-ইনফ্লেমেটরি ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:
    • অ্যাসপিরিন
    • ইবুপ্রোফেন
    • নাইট্রোগ্লিসারিন

এই ওষুধগুলি সাধারণত মুখের মাধ্যমে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে, মলম বা জেল আকারে অ্যান্ট-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

  • অ্যানালজেসিক ওষুধঃ অ্যানালজেসিক ওষুধগুলি ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। দাঁতের ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত সাধারণ অ্যানালজেসিক ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
    • অ্যাসপিরিন
    • ইবুপ্রোফেন
    • অ্যাসিটামিনোফেন

এই ওষুধগুলি সাধারণত মুখের মাধ্যমে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে, মলম বা জেল আকারে অ্যানালজেসিক ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

  • অন্যান্য ওষুধঃ দাঁতের ইনফেকশনের জন্য অন্যান্য ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছেঃ  
    • স্পেশালিস্ট ওষুধঃ কিছু ক্ষেত্রে, দাঁতের ডাক্তার বিশেষজ্ঞ ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি ইনফেকশন খুব তীব্র হয়, তাহলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন বা আইভি দিতে পারেন।
    • হোমওপ্যাথিক ওষুধঃ কিছু লোক হোমওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমে দাঁতের ইনফেকশনের চিকিৎসা করতে পছন্দ করে। তবে, হোমওপ্যাথিক ওষুধের কার্যকারিতা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত নয়।

দাঁতের ইনফেকশনের জন্য ওষুধ গ্রহণ করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে,

  • অ্যান্টিবায়োটিকগুলি সম্পূর্ণ কোর্স শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করে যে ইনফেকশন সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হয়েছে।
  • অ্যান্টিবায়োটিকগুলি অন্য কারও সাথে শেয়ার করা উচিত নয়।
  • অ্যান্টিবায়োটিকগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির জন্য সতর্ক থাকুন। যদি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

দাঁতের ইনফেকশনের জন্য ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি, দাঁতের ডাক্তার দাঁতের প্লাক এবং ক্যালকুলাস অপসারণের জন্য স্কেলিং এবং পোলিশিং করার পরামর্শ দিতে পারেন।

সাধারণ কিছু প্রশ্ন উওর বা FAQ

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন কী?

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হল দাঁতের মাড়ির টিস্যুতে সংক্রমণ। এটি দাঁতের প্লাক এবং ক্যালকুলাস জমে থাকার কারণে হয়। প্লাক হল দাঁতের উপর জমে থাকা একটি আঠালো আবরণ যা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি। ক্যালকুলাস হল প্লাক যা শক্ত হয়ে গেছে।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের লক্ষণগুলি কী কী?

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের লক্ষণগুলি হলঃ

  • মাড়ি ফুলে যাওয়া
  • মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
  • মাড়ি লাল এবং ফোলা
  • মাড়িতে ব্যথা
  • মুখের দুর্গন্ধ

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের কারণগুলি কী কী?

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের প্রধান কারণ হল দাঁতের প্লাক এবং ক্যালকুলাস জমে থাকা। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
  • ধূমপান
  • ডায়াবেটিস
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের চিকিৎসা কী?

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের চিকিৎসা নির্ভর করে ইনফেকশনের ধরন এবং তীব্রতার উপর। সাধারণত, চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেঃ

  • অ্যান্টিবায়োটিকঃ ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • স্কেলিং এবং পোলিশিংঃ  দাঁতের প্লাক এবং ক্যালকুলাস অপসারণের জন্য স্কেলিং এবং পোলিশিং করা যেতে পারে।
  • দাঁতের মাড়ির অস্ত্রোপচারঃ কিছু ক্ষেত্রে, দাঁতের মাড়ির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন প্রতিরোধের উপায়গুলি কী কী?

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারেঃ

  • দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করুন এবং প্রতিদিন একবার ফ্লস করুন।
  • নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যান।
  • চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন।

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের জটিলতাগুলি কী কী?

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের জটিলতাগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

  • পেরিওডন্টাইটিসঃ পেরিওডন্টাইটিস হল দাঁতের মাড়ির একটি দীর্ঘস্থায়ী রূপ। এটি দাঁতের মাড়ি এবং হাড়ের ক্ষতি করে।
  • অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে পেরিওডন্টাইটিস:
    • হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ ডায়াবেটিস-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
    • গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রসবপূর্ব জটিলতা-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
    • সাধারণ অসুস্থতা এবং হাসপাতাল ভর্তির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

উপসংহার

দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন একটি সাধারণ সমস্যা। এটি দাঁতের প্লাক এবং ক্যালকুলাস জমে থাকার কারণে হয়। লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লস করা এবং নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ এবং দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় সহ এই সম্পর্কে সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। ধন্যবাদ

 

Previou Movie Next Movie