ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিন

শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে ব্যথা - ফুসফুসের ইনফেকশনের এই লক্ষণগুলো যখন দেখা দেয়, তখন মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।


 এই আর্টিকেলটিতে, ফুসফুস কাকে বলে, এর কাজ কি কি, ফুসফুসের ইনফেকশন কী, ফুসফুসের ইনফেকশন কেন হয়, এর লক্ষণ গুলো কি কি  এবং ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো সহ আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

সুতরাং আপনার অথবা আপনার আশেপাশে কারো যদি ফুসফুসের ইনফেকশন বা নিউমোনিয়া সমস্যা থাকে, তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিন।

ফুসফুস কাকে বলে

মেরুদণ্ডী প্রাণীর বুকে অবস্থিত স্পঞ্জের মতো একটি যুগ্ম অঙ্গকেই আমরা ফুসফুস বলে থাকি। শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়ায় এর ভূমিকা অপরিহার্য।

ফুসফুসের কাজ কি কি

মানবদেহে ফুসফুসের কাজ সম্পর্কে আমরা সকলেই কম বেশি জানি। নিচে ফুসফুসের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

১। অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড বের করা

  • আমরা যখন শ্বাস নিই, তখন বাতাস শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে।
  • ফুসফুসে বাতাস অ্যালভিওলি নামক ক্ষুদ্র বায়ুথলির মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে আসে।
  • অ্যালভিওলিতে, অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ত থেকে বেরিয়ে বাতাসে মিশে যায়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সারা শরীরে বিতরণ করা হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায়।

২। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

  • অতিরিক্ত তাপ শরীর থেকে পসিনার মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।
  • পসিনা তৈরির জন্য জল প্রয়োজন।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প বেরিয়ে যায়, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

৩। অন্যান্য কাজ

  • রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখে।
  • হরমোন নিঃসরণ করে।
  • শব্দ তৈরিতে সহায়তা করে।

ফুসফুসের ইনফেকশন কী?

ফুসফুসের ইনফেকশন হল ফুসফুসের কোষে সংক্রমণ। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে এটি হতে পারে। ফুসফুসের ইনফেকশনের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং প্লিউরিজি। 

ফুসফুসে ইনফেকশন কেন হয়

ফুসফুসের ইনফেকশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। জীবাণু, ভাইরাস, ছত্রাক, রাসায়নিক, ধোঁয়া, ধূলিকণা, অ্যালার্জেন, আঘাত, অস্ত্রোপচার ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। ধূমপান, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অন্যান্য রোগ ফুসফুসের ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়।

ফুসফুসের ইনফেকশনের প্রধান কারণগুলো হলোঃ

১। জীবাণু

  • Streptococcus pneumoniae, Haemophilus influenzae, Mycoplasma pneumoniae এর মতো ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসের ইনফেকশনের জন্য সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
  • সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি বা থুথু থেকে ছিটিয়ে আসা বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে।

২। ভাইরাস

  • RSV (respiratory syncytial virus), influenza virus, adenovirus এর মতো ভাইরাস ফুসফুসের ইনফেকশনের জন্য দায়ী হতে পারে।
  • শীতকালে ভাইরাসজনিত ফুসফুসের ইনফেকশন বেশি দেখা দেয়।

৩। ছত্রাক

  • Pneumocystis jirovecii এর মতো ছত্রাক দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ফুসফুসে ইনফেকশন করতে পারে।

৪। অন্যান্য কারণ

  • রাসায়নিক ধোঁয়া বা ধূলিকণা শ্বাস নেওয়া।
  • অ্যালার্জেন এর সংস্পর্শে আসা।
  • আঘাত বা অস্ত্রোপচার এর ফলে ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে।

ঝুঁকির কারণ

  • ধূমপানঃ ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি।
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ ছোট বাচ্চা, বয়স্ক ব্যক্তি, এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, ফলে তাদের ফুসফুসের ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • অন্যান্য রোগঃ মধুমেহ, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ ফুসফুসের ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়। 

ফুসফুসে ইনফেকশনের লক্ষণ

ফুসফুসে ইনফেকশন, যা নিউমোনিয়া নামেও পরিচিত। ফুসফুসে ইনফেকশনের অনেক গুলো লক্ষণ রয়েছে। ফুসফুসের ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

শ্বাসকষ্ট

  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বিশেষ করে শুয়ে থাকার সময়।
  • দ্রুত বা উষ্ণ শ্বাস নেওয়া।
  • বুকে ব্যথা, বিশেষ করে কাশির সময়।

কাশি

  • শুষ্ক বা কফযুক্ত কাশি।
  • কাশির সাথে বুকে ব্যথা হতে পারে।
  • কাশি সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হতে পারে।

জ্বর

  • হঠাৎ জ্বর আসা।
  • ঠান্ডা লাগা এবং শীত শিটে কাঁপুনি।
  • জ্বর ১০১°F (৩৮°C) বা তার বেশি হতে পারে।

অন্যান্য লক্ষণ

  • শরীর ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • অলসতা
  • খিদের অভাব
  • বমি বমি ভাব বা বমি
  • মুখের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
  • শ্বাসকষ্টে বৃদ্ধি।
  • মনোভাব পরিবর্তন, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।

শিশুদের ক্ষেত্রে, নিম্নলিখিত লক্ষণগুলিও দেখা দিতে পারে

  • দ্রুত বা অনিয়মিত শ্বাস নেওয়া।
  • শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে টান অনুভূত হওয়া।
  • নীল রঙের ঠোঁট বা নখ
  • খাওয়াতে অসুবিধা।
  • অতিরিক্ত ঝিম

তবে মনে রাখবেন, এছাড়াও ফুসফুসে ইনফেকশনের আরও অনেক লক্ষণ থাকতে পারে। যদি আপনার এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। কারণ, দেরিতে চিকিৎসা না করলে ফুসফুসে ইনফেকশন জটিল হতে পারে এবং জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে।

ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায়

ফুসফুসের ইনফেকশন, যাকে নিউমোনিয়াও বলা হয়, একটি গুরুতর অবস্থা যার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন। এটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে হতে পারে এবং এর উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে বুকে ব্যথা, কাশি, জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট।

যদি আপনি মনে করেন যে তোমার ফুসফুসের ইনফেকশন হয়েছে, তাহলে দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা সংক্রমণের কারণ নির্ণয় করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করতে পারবেন।

অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের মতো প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলি সাধারণত ফুসফুসের ইনফেকশনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

এছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি, আপনি ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোও চেষ্টা করতে পারেন যা আপনার উপসর্গগুলি উপশম করতে এবং আপনাকে আরও দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারে।

নিচে ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। যেমনঃ

  • প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। এটি আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড থাকতে এবং শ্লেষ্মা ঢিলে করতে সাহায্য করবে। পানি, ঝোল, স্যুপ এবং চা ভালো বিকল্প।
  • বিশ্রাম নিতে হবে। আপনার শরীরকে যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে দাও যাতে সে লড়াই করতে এবং সুস্থ হতে পারে।
  • ভ্যাপ পান করা। ভ্যাপ আপনার শ্বাসননালীর শ্লেষ্মা ঢিলে করতে এবং কাশি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। একটি বাটিতে গরম জল নিন এবং একটি তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে বাটির উপরে ভেজা হয়ে যান। ৫-১০ মিনিট ভ্যাপ নিন।
  • লবণাক্ত জল দিয়ে নাক ধুয়ে ফেলুন। লবণাক্ত জল দিয়ে নাক ধুয়ে ফেললে শ্লেষ্মা ঢিলে হতে এবং নাক বন্ধ হওয়া থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। ১/২ চা চামচ লবণ ১ কাপ গরম জলে মিশিয়ে নিন। একটি নাসিকা সিরিঞ্জ ব্যবহার করে প্রতিটি নাসারন্ধ্রে লবণাক্ত জলের দ্রবণ ঢেলে দিন।
  • মধু খান। মধু কাশি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। ঘুমানোর আগে এক চা চামচ মধু খান।
  • আদা খান। আদা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। চায়ে আদা কুঁচি যোগ করুন বা আদা চা পান করুন।
  • হলুদ খান। হালুদ একটি প্রাকৃতিক প্রদাহবিরোধী ওষুধ। দুধে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন

ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর খাবার

আ[নাদের সুবিদার জন্য নিচে ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর কিছু খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

  • প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ এই খাবারগুলিতে প্রায়শই অস্বাস্থ্যকর চর্বি, লবণ এবং চিনি থাকে যা ফুসফুসের প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ফাস্ট ফুড, প্যাকেজড স্ন্যাকস, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং বেশিরভাগ হিমায়িত খাবার।

  • চিনিযুক্ত পানীয়ঃ সোডা, জুস এবং এনার্জি ড্রিঙ্কগুলি প্রচুর পরিমাণে চিনিযুক্ত যা প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে এবং ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।

  • লাল মাংসঃ লাল মাংসের অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • দুগ্ধজাত খাবারঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে দুগ্ধজাত খাবারের অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া ফুসফুসের সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • অ্যালকোহলঃ অ্যালকোহল পান করা ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ফুসফুস ভালো রাখার খাবার

ফুসফুস সুস্থ রাখার জন্য আপনি অনেক খাবার খেতে পারেন। যেমনঃ

  • ফল এবং শাকসবজিঃ ফল এবং শাকসবজি ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষ করে গাঢ় রঙের ফল এবং শাকসবজি খাওয়া উচিত, যেমন ব্লুবেরি, রাস্পবেরি, কেল, পালং শাক এবং গাজর। এই খাবারগুলিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ফুসফুসের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে পারে।

  • সাওয়া তেলঃ সয়া তেলে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে।

  • বাদাম এবং বীজঃ বাদাম এবং বীজে প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বাদাম এবং বীজে ভিটামিন এবং খনিজও থাকে যা ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে বাদাম, আখরোট, চিয়া বীজ এবং শণ বীজ খাওয়া উচিত।

  • মাছঃ মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। 
     
  • ডাল এবং শস্যঃ  ডাল এবং শস্যে প্রোটিন, ফাইবার এবং জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ডাল এবং শস্যে ভিটামিন এবং খনিজও থাকে যা ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ওটমিল, বাদামী চাল, কোয়িনোয়া এবং বীনস খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

আপনার খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা আপনার ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে এবং শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম

আপনার ফুসফুস শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখার জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম করা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ব্যায়াম আপনার ফুসফুসকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং আপনার শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ায়। এটি আপনার হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপও উন্নত করতে পারে।

ফুসফুসের জন্য কিছু ভালো ব্যায়াম

  • কার্ডিওঃ হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো এবং নাচের মতো কার্ডিও ব্যায়াম আপনার হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ায়। এটি আপনার ফুসফুসকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে এবং শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। সপ্তাহে বেশিরভাগ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট কার্ডিও করার চেষ্টা করুন।
  • শক্তি প্রশিক্ষণঃ শক্তি প্রশিক্ষণ আপনার পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যার মধ্যে আপনার ডায়াফ্রামও রয়েছে। ডায়াফ্রাম হল একটি পেশী যা আপনাকে শ্বাস নিতে সাহায্য করে। শক্তিশালী ডায়াফ্রাম আপনাকে আরও কার্যকরভাবে শ্বাস নিতে এবং আপনার ফুসফুস থেকে বেশি অক্সিজেন পেতে সাহায্য করে। সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন সমস্ত প্রধান পেশী গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে শক্তি প্রশিক্ষণ করার চেষ্টা করুন।
  • পুরো শরীরের ব্যায়ামঃ যোগব্যায়াম এর মতো পুরো শরীরের ব্যায়াম আপনার শক্তি, নমনীয়তা এবং ভারসাম্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এই ব্যায়ামগুলি আপনার ফুসফুসকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করতে পারে। সপ্তাহে কয়েকবার পুরো শরীরের ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। 

আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামও অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম আপনাকে আরও গভীর এবং কার্যকরভাবে শ্বাস নিতে শিখতে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনার ফুসফুসের ক্ষমতা উন্নত করতে এবং আপনার শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্নঃ ফুসফুসের ইনফেকশন কী?

উত্তরঃ ফুসফুসের ইনফেকশন হল ফুসফুসের কোষে সংক্রমণ। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে এটি হতে পারে। ফুসফুসের ইনফেকশনের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং প্লিউরিজি।

প্রশ্নঃ ফুসফুসের ইনফেকশনের লক্ষণগুলি কী কী?

উত্তরঃ ফুসফুসের ইনফেকশনের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ

  • কাশি
  • জ্বর
  • সর্দি
  • শ্বাসকষ্ট
  • বুকে ব্যথা
  • ক্লান্তি

প্রশ্নঃ ফুসফুসের ইনফেকশন কীভাবে নির্ণয় করা হয়?

উত্তরঃ ফুসফুসের ইনফেকশন নির্ণয়ের জন্য একজন ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেন এবং আপনাকে লক্ষণগুলি সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তারা পরীক্ষাও করতে পারে, যেমনঃ

  • এক্স-রে
  • সিটি স্ক্যান
  • রক্ত পরীক্ষা
  • শ্বাস পরীক্ষা

প্রশ্নঃ ফুসফুসের ইনফেকশন কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?

উত্তর ফুসফুসের ইনফেকশনের ধরণের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পরিবর্তিত হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবায়োটিক, ভাইরাল ওষুধ বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। অন্যান্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে বিশ্রাম, তরল পান করা এবং ব্যথার ওষুধ।

প্রশ্নঃ ফুসফুসের ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায়?

উত্তরঃ হ্যাঁ, ফুসফুসের ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিরোধের উপায়গুলির মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ

  • নিয়মিত হাত ধোয়া
  • অন্যদের কাছ থেকে দূরে থাকা যারা অসুস্থ
  • ধূমপান পরিহার
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • ফ্লু এবং নিউমোকোকাল টিকা গ্রহণ

প্রশ্নঃ যদি আমার ফুসফুসের ইনফেকশন হয় তবে আমার কী করা উচিত?

উত্তরঃ আপনার যদি ফুসফুসের ইনফেকশনের লক্ষণগুলি থাকে তবে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা সংক্রমণের কারণ নির্ণয় করতে এবং আপনাকে সঠিক চিকিৎসা দিতে সক্ষম হবেন। 

উপসংহার

ফুসফুস আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। সুস্থ থাকার জন্য এর যত্ন নেওয়া জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ধূমপান ত্যাগের মাধ্যমে আমরা ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে পারি। উপরোক্ত আলোচনায় ফুসফুস কাকে বলে, এর কাজ কি কি, ফুসফুসের ইনফেকশন কী, ফুসফুসের ইনফেকশন কেন হয় এবং ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো সহ আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ

 


 

Previou Movie Next Movie