ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন
মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল ফুসফুস। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করি, তা ফুসফুসের মাধ্যমেই আমাদের রক্তে মিশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যখন এই অঙ্গ ক্যান্সারের কবলে পড়ে, তখন শুরু হয় এক ভয়ঙ্কর লড়াই।
ফুসফুস ক্যান্সার শুধুমাত্র একটি রোগ নয়, এটি এক ভয়াবহ বাস্তবতা। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই মৃত্যুবরণ করেন।
ধূমপান, বায়ু দূষণ, রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা, এবং পারিবারিক ইতিহাস - এই সবই ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
ফুসফুস ক্যান্সার কী
ফুসফুস ক্যান্সার হলো ফুসফুসের কোষে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধি টিউমার তৈরি করে যা প্রতিবেশী টিস্যু আক্রমণ করতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে (মেটাস্টাসাইজ)।
ফুসফুস ক্যান্সারের ধরন
ফুসফুস ক্যান্সারের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে, যেমনঃ
- ছোট কোষের ক্যান্সার (Small cell lung cancer - SCLC)ঃ এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC)ঃ এটি SCLC এর চেয়ে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। NSCLC এর আরও তিনটি প্রধান উপধরন রয়েছে, যেমনঃ
- অ্যাডেনোকারসিনোমা (Adenocarcinoma)ঃ এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের NSCLC।
- স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা (Squamous cell carcinoma)ঃ এটি সাধারণত ধূমপানকারীদের মধ্যে দেখা যায়।
- বড় কোষের ক্যান্সার (Large cell carcinoma)ঃ এটি NSCLC এর একটি বিরল ধরণ।
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ
ফুসফুস ক্যান্সারের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। নিচে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হলো।
সাধারণ লক্ষণ
- দীর্ঘস্থায়ী কাশিঃ এটি ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। কাশি কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে, বিশেষ করে যদি এটি পরিবর্তিত হয় (যেমন, শুষ্ক থেকে শ্লেষ্মাযুক্ত, বা রক্ত সহ) তবে ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।
- বুকে ব্যথাঃ বুকে ব্যথা ফুসফুস ক্যান্সারের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। এটি তীক্ষ্ণ বা ধীমে হতে পারে এবং শ্বাস নেওয়ার সময় বা কাশির সময় আরও খারাপ হতে পারে।
- শ্বাসকষ্টঃ ফুসফুসের ক্যান্সারের সাথে শ্বাসকষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক নয়, বিশেষ করে যদি আপনি ইতিমধ্যেই অন্য লক্ষণগুলি অনুভব করেন।
- কাশিতে রক্তঃ কাশিতে রক্ত (হেমোপ্টিসিস) ফুসফুস ক্যান্সারের একটি গুরুতর লক্ষণ। এটি ছোট ছোট রক্তের দাগ থেকে শুরু করে বড় রক্তপাত হতে পারে।
- অন্যান্য লক্ষণঃ ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস, অব্যাখ্যাত ওজন হ্রাস, গলা ব্যথা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন এবং বুকে বা কাঁধে ব্যথা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বিঃ দ্রঃ এই লক্ষণগুলি অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থার কারণেও হতে পারে। যদি আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।
ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ
ফুসফুস ক্যান্সারের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিচে ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ গুলো তুলে ধরা হলো।
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ হল ধূমপান। ধূমপায়ীদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ধূমপান না করা ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি। ধূমপানের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুসের কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং ক্যান্সারের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
ধূমপান ছাড়াও, ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ
- প্যাসিভ ধূমপানঃ অন্যদের ধূমপানের ধোঁয়া শ্বাস নেওয়াও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- রাডন গ্যাসের সংস্পর্শে আসাঃ রডন একটি প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান নিষ্ক্রিয় গ্যাস যা মাটি এবং পাথর থেকে নির্গত হয়। এটি ফুসফুস ক্যান্সারের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ।
- কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসাঃ অ্যাসবেস্টোস, সিলিকা এবং ক্রোমিয়াম সহ কিছু রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- বায়ু দূষণঃ বায়ু দূষণ, বিশেষ করে PM ২.৫ মাত্রার কণা, ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- পূর্ববর্তী ফুসফুসের রোগঃ যারা ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) বা এম্ফিসেমার মতো অন্যান্য ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত তাদের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- পারিবারিক ইতিহাসঃ যাদের পরিবারে ফুসফুস ক্যান্সারের ইতিহাস আছে তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যুক্ত ব্যক্তিদের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
মনে রাখা জরুরী, ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল ধূমপান ত্যাগ করা। আপনি যদি রডন গ্যাসের সংস্পর্শে আসেন তবে আপনার বাড়িতে রডন স্তর পরীক্ষা করা উচিত এবং প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আপনি আপনার কাজের পরিবেশে বা বায়ু দূষণের মাধ্যমে অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলির সংস্পর্শ সীমিত করার চেষ্টা করতে পারেন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি আপনার ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণগুলি থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে, ফুসফুস ক্যান্সার সফলভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব।
ফুসফুস ক্যান্সার হলে করনীয়
ফুসফুস ক্যান্সার নির্ণয় হলে আপনাকে যে সকল কাজ গুলো করতে হবে সেই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ফুসফুস ক্যান্সার হলে করনীয়ঃ
- আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুনঃ আপনার রোগ নির্ণয়, পর্যায় এবং চিকিৎসার বিকল্পগুলি সম্পর্কে আরও জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করুন।
- আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুনঃ আপনার মনে যেকোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে ভয় পাবেন না, তা যতই তুচ্ছ মনে হোক না কেন।
- আপনার বিকল্পগুলি বুঝুনঃ বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা উপলব্ধ আছে, তাই আপনার জন্য কোনটি সঠিক তা নির্ধারণ করার জন্য আপনার সময় নিন।
- একটি সমর্থন ব্যবস্থা তৈরি করুনঃ পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে সমর্থন নিন, অথবা একটি সহায়তা গোষ্ঠীতে যোগদান করুন।
চিকিৎসা
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসার বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ
- শল্যচিকিৎসাঃ টিউমার অপসারণ করতে।
- রেডিয়েশন থেরাপিঃ উচ্চ-শক্তির রশ্মি ব্যবহার করে টিউমারের কোষগুলি হত্যা করতে।
- কেমোথেরাপিঃ ওষুধ ব্যবহার করে টিউমারের কোষগুলি হত্যা করতে।
- ইমিউনোথেরাপিঃ আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করার জন্য ওষুধ ব্যবহার করে।
আপনার জন্য কোন চিকিৎসা বা চিকিৎসার সংমিশ্রণ সঠিক তা আপনার ডাক্তার আপনার সাথে আলোচনা করবেন।
জীবনধারা পরিবর্তন
আপনার ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে আপনি কিছু জীবনধারা পরিবর্তন করতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ
- ধূমপান ত্যাগ করাঃ ধূমপান ত্যাগ করা ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলির মধ্যে একটি।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করাঃ ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ খাদ্য খান।
- নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ প্রতিদিন ৩০ মিনিটের মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়ামের লক্ষ্য রাখুন।
- আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ স্থূলতা ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকুনঃ অতিরিক্ত মদ্যপান ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- পর্যাপ্ত ঘুম পানঃ প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা
ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের জন্য একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের শরীরকে চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং সামগ্রিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।
নিচে ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা তুলে ধরা হলোঃ
ফল ও শাকসবজি জাতীয় খাবার
- ফলঃ আপেল, কলা, কমলালেবু, বেরি, আঙ্গুর, পেঁপে, তরমুজ, পেয়ারা, আনারস
- শাকসবজিঃ পালং শাক, লাউ শাক, শসা, ঢেঁড়স, ব্রকলি, গাজর, কুমড়া, বীট, টমেটো
- সবুজ শাকসবজিঃ পুঁইশাক, লাল শাক, মেথি শাক, শালগম শাক
শস্য জাতীয় খাবার
- গোটা শস্যঃ ভাত, ওটমিল, বাদামী চাল, বাজরা
- ডালঃ মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা
- বাদাম ও বীজঃ আখরোট, কাজুবাদাম, পেস্তা, তিল, সূর্যমুখী বীজ
প্রোটিন জাতীয় খাবার
- মাছঃ রুই, কাতলা, বোয়াল, তেলাপিয়া
- মাংসঃ মুরগির মাংস, খাসির মাংস
- ডিমঃ সকল প্রকার ডিম
- দুগ্ধজাত খাবারঃ দুধ, দই, পনির
অন্যান্য খাবার
- জল
- জলপাই তেল
- আদা
- রসুন
- হলুদ
কিছু খুব গুরুত্ব পূর্ণ টিপস
- ছোট ছোট করে বারবার খাবার খান।
- খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান।
- তরল খাবার যেমন স্যুপ, মসুর ডালের ঝোল পান করুন।
- খাবারে লবণ, চিনি এবং তেল কম ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম পান।
- মানসিক চাপ কমান।
- আপনার ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর যে সকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
আমরা ইতিপূর্বে ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনেছি। এখন জানবো ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের যে খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সেই সম্পর্কে। ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের যে সকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রক্রিয়াজাত খাবার
- প্যাকেটজাত খাবারঃ চিপস, ক্র্যাকার, বিস্কুট, ফাস্ট ফুড, ইত্যাদি।
- সসেজ, বেকন, হ্যামঃ প্রক্রিয়াজাত মাংস।
- ফ্রোজেন খাবারঃ পিৎজা, নগেটস, রেডি-টু-ইট মিল।
- ফাস্ট ফুডঃ বার্গার, ফ্রাই, পিৎজা, কেক, আইসক্রিম।
চিনিযুক্ত পানীয়
- সোডাঃ কোকাকোলা, পেপসি, ফ্যান্টা।
- স্পোর্টস ড্রিঙ্কঃ গেটোরেড, পাওয়ারেড।
- এনার্জি ড্রিঙ্কঃ রেড বুল, মনস্টার।
- জুসঃ প্যাকেটজাত ফলের রস।
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার
- লাল মাংসঃ গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ভেড়ার মাংস।
- ভাজা খাবারঃ চিপস, পকোড়া, সমুচা, ভাজা মাছ।
- পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারঃ পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধ, ক্রিম, মাখন।
- ফাস্ট ফুডঃ বার্গার, ফ্রাই, পিৎজা।
অন্যান্য খাবার
- আলকোহলঃ বিয়ার, ওয়াইন, মদ।
- ধূমপানঃ সিগারেট, বিড়ি, হুকা।
- অতিরিক্ত লবণঃ নোনতা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার।
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ বাংলাদেশ
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ বাংলাদেশে বেশ ভিন্ন হতে পারে, কারণ এটি নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেমনঃ
চিকিৎসার ধরণ
- শল্যচিকিৎসাঃ ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে সাধারণ অস্ত্রোপচার হল লোবেক্টোমি, যেখানে ফুসফুসের একটি অংশ অপসারণ করা হয়। এর খরচ প্রায় ৳ ২,০০,০০০ থেকে ৳ ৫,০০,০০০ টাকা হতে পারে।
- রেডিয়েশন থেরাপিঃ এটি উচ্চ-শক্তির এক্স-রে ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলে। এর খরচ প্রতি সেশনে ৳ ৫,০০০ থেকে ৳ ১০,০০০ টাকা হতে পারে এবং মোট চিকিৎসার জন্য ৳ ১,০০,০০০ থেকে ৳ ৩,০০,০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
- কিমোথেরাপিঃ এটি ওষুধ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলে। এর খরচ ওষুধের ধরণ এবং ডোজের উপর নির্ভর করে, তবে এটি প্রতি সাইকেলে ৳ ৫০,০০০ থেকে ৳ ২,০০,০০০ টাকা হতে পারে।
- ইমিউনোথেরাপিঃ এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি একটি নতুন চিকিৎসা এবং এটি খুব ব্যয়বহুল হতে পারে, প্রতি ডোজে ৳ ৫০০,০০০ টাকারও বেশি খরচ হতে পারে।
রোগের পর্যায়
- প্রাথমিক পর্যায়েঃ ক্যান্সার যখন ছোট এবং স্থানীয় হয় তখন চিকিৎসা সাধারণত কম ব্যয়বহুল হয়।
- অগ্রসর পর্যায়েঃ ক্যান্সার যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন চিকিৎসা আরও জটিল এবং ব্যয়বহুল হতে পারে।
চিকিৎসা কেন্দ্র
- সরকারি হাসপাতালঃ সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় চিকিৎসা সাধারণত কম ব্যয়বহুল হয়।
- বেসরকারি হাসপাতালঃ বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে, খরচ হাসপাতালের ধরণ, অবস্থান এবং সুবিধার উপর নির্ভর করে।
অন্যান্য খরচ
- ওষুধঃ কিছু ওষুধ, বিশেষ করে টার্গেটেড থেরাপি, খুব ব্যয়বহুল হতে পারে।
- পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং পিইটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলি ব্যয়বহুল হতে পারে।
- হাসপাতালে থাকাঃ দীর্ঘমেয়াদী হাসপাতালে থাকা খরচ বাড়াতে পারে।
সহায়তা
- সরকারি কর্মসূচিঃ বাংলাদেশ সরকার ক্যান্সার রোগীদের জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
- বেসরকারি সংস্থাঃ কিছু বেসরকারি সংস্থা আছে যারা ক্যান্সার রোগীদের আর্থিক সহহায়তা প্রদান করে।
ফুসফুস ক্যান্সার সম্পর্কে কিছু প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্নঃ ফুসফুস ক্যান্সার কী?
উত্তরঃ ফুসফুস ক্যান্সার হল ফুসফুসের কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে তৈরি একটি রোগ। এই পরিবর্তনগুলিকে "ক্যান্সার কোষ" বলা হয়। ক্যান্সার কোষগুলি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বৃদ্ধি এবং বিভাজন করে এবং সুস্থ টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
প্রশ্নঃ ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ কী?
উত্তরঃ ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হল ধূমপান। অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- রাডনঃ একটি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে থাকা গ্যাস যা মাটিতে পাওয়া যায়।
- বায়ু দূষণঃ গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার ধোঁয়া এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা দূষিত বায়ু।
- কিছু রাসায়নিক পদার্থঃ অ্যাসবেস্টস, ক্রোমিয়াম এবং সিলিকা সহ।
- জিনগত বিকল্পঃ কিছু লোক জিনগত বিকল্পের সাথে জন্মগ্রহণ করে যা তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রশ্নঃ ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলি কী কী?
উত্তরঃ ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়শই কোন লক্ষণ থাকে না। যাইহোক, পরবর্তী পর্যায়ে, লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ
- কাশি
- কফ কাশিতে রক্ত
- শ্বাসকষ্ট
- বুকে ব্যথা
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি
- অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস
- শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ
প্রশ্নঃ ফুসফুস ক্যান্সারের রোগ নির্ণয় কীভাবে করা হয়?
উত্তরঃ ফুসফুস ক্যান্সারের রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা ব্যবহার করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ
- চেস্ট এক্স-রেঃ এটি ফুসফুসে অস্বাভাবিকতা দেখাতে পারে।
- সিটি স্ক্যানঃ এটি ফুসফুসের আরও বিস্তারিত চিত্র প্রদান করে।
- পিইটি স্ক্যানঃ এটি শরীরে ক্যান্সার কোষের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে।
- বায়োপসিঃ এটি নিশ্চিত করতে ফুসফুসের টিস্যুর একটি ছোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় যে রোগটি ক্যান্সার কিনা।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনায় ফুসফুস ক্যান্সার কী, ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ ও লক্ষণ, ফুসফুস ক্যান্সার হলে করনীয়, ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ বাংলাদেশ কত এবং ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি, আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ