নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো উচিত তা জেনে নিন

ভূমিকা

নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো উচিত যারা জানে না তাদের জন্য এই পোস্টটি অনেক উপকারে আসবে। একজন অভিভাবক হিসাবে, আপনার শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে একটি হল আপনার নবজাতক শিশুর উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা।  প্রথম মাস আপনার শিশুকে যথাযথভাবে খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি আমাদের সকলেরই জানা উচিত। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো উচিত

প্রথম ছয় মাস, নবজাতক শিশুদের একচেটিয়াভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো বা ফর্মুলা দিয়ে খাওয়ানো উচিত। এর মানে হল যে তাদের বুকের দুধ বা ফর্মুলা ছাড়া অন্য কোন খাবার বা পানীয় দেওয়া উচিত নয়।

নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো উচিত

অনেক নবজাতকের মা জানে না যে তার নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো উচিত। নবজাতক শিশুকে  কতক্ষণ খাওয়াতে হবে সে বিষয়ে আমাদের একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো দরকার সেই বিষয়টি নির্ভর করে বাচ্চার বয়সের উপর। নবজাতক শিশু জন্ম নিলে দেড় ঘন্টা পর পর বুকের দুধ খাওয়ানোটা উত্তম। তবে এই অভ্যাসটা নবজাতকের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তন হবে। বাচ্চার বয়স যখন তিন মাস হবে তখন দুই থেকে আড়াই ঘন্টা পর পর দুধ খাওয়াতে হবে।

  কি খেলে বাচ্চার ব্রেইন ভালো হয়

কোন বাচ্চা যদি ব্রেস্ট ফিডিং করে তাহলে দিনে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ বার করবে। তবে এভারেজে দিনে ৬ বার ব্রেস্ট ফিডিং করবে শিশু। শিশুর পাকস্থলী ছোট হওয়ার কারণে শিশুকে অল্প অল্প করে দুধ খাওয়ান। এরপর শিশুর আবার ক্ষুধার্ত হলে আবার দুধ খাওয়ান। প্রথম স্তনের দুধ খাওয়ানো হলে দ্বিতীয় স্তনের দুধ খাওয়ান। সাধারণত ডাক্তাররা নবজাতক জন্মের প্রথম ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকে। ছয় মাস পর আপনি চাইলে দুধের পাশাপাশি নবজাতক শিশুকে অন্যকোন পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে পারেন।

একজন শিশুকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। বুকের দুধে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল সহ সকল ধরণের পুষ্টি উপাদান। শিশুকে যত বুকের দুধ খাওয়াবেন শিশুর শরীর স্বাস্থ্য তত ভালো হবে। এভাবে আপনি দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। এরপর বুকের দুধ বন্ধ করে দেন। এখন শিশুকে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।

নবজাতকের জন্য প্রাথমিক পুষ্টির গুরুত্ব 

প্রারম্ভিক পুষ্টি নবজাতকের বৃদ্ধি এবং বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ভিত্তি স্থাপন করে। জীবনের প্রথম কয়েক মাসে, শিশুদের অনন্য পুষ্টির চাহিদা থাকে যার জন্য বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। আসুন জেনে নেই কেন প্রাথমিক পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণঃ 

সর্বোত্তম বৃদ্ধিঃ প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যাপ্ত পুষ্টি স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং শক্তিশালী হাড় ও পেশীর বিকাশকে সমর্থন করে।

মস্তিষ্কের বিকাশঃ নবজাতকের মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজ সহ সঠিক পুষ্টি তাদের জ্ঞানীয় বৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য অপরিহার্য।

অনাক্রম্যতা তৈরি করাঃ প্রাথমিক পুষ্টি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি এবং পুষ্টি সরবরাহ করে যাতে তারা সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা পায়।    

নবজাতককে খাওয়ানোর পর করণীয়

নবজাতককে খাওয়ানোর পর করণীয় কি সে বিষয়ে অনেকে অবগত নই। আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাকে জানিয়ে দিবো নবজাতককে খাওয়ানোর পর করণীয় কি সে বিষয়ে বিস্তারিত। নবজাতককে খাওয়ানোর পর অবশ্যই ঢেকুর তুলবেন। কেন ঢেকুর তুলবেন? কারণ, নবজাতকে দুধ খাওয়ানোর সাথে সাথে বাতাস টাও নবজাতকের পেটে চলে যায়। 

তাছাড়া দেখবেন নবজাতক এমনি এমনি মুখ নাড়াচ্ছে এতেও বাতাস টা তাদের পেটের মধ্যে চলে যায়। এর ফলে নবজাতক অস্বস্তি অনুভব করে। অস্বস্তির সাথে সাথে নবজাতকের পেটের মধ্যে গ্যাস তৈরি হয়, বাচ্চাদের পেট ব্যাথা হয়, বাচ্চাদের বমি হয়,  অনেক সময় বাচ্চাদের মুখ দিয়ে সাদা সাদা দই বের হয়।

তাছাড়া আপনি যদি ঢেকুর না তোলান তাহলে বাচ্চার পেট ফুলে যায় এবং বাচ্চা পেট ব্যাথা অনুভব করে। তাই বাচ্চাকে আপনি যতবার দুধ খাওয়াবেন ততবারই ঢেকুর তুলতে হবে। নবজাতকের ঢেকুর না তোলার কারণে বাচ্চার হিচকি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জন্মের সাথে সাথে যখন বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবেন তখন থেকে ঢেকুর তোলাতে হবে। বাচ্চা যখন নিজ হতে হামাগুড়ি দিবে, হাঁটাচলা করবে তখন থেকে ঢেকুর আর তোলাতে হবে না। 

প্রশ্ন হলো কীভাবে ঢেকুর তোলাবেন ? নবজাতক শিশুকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে শিশুর পিঠে হালকা করে চাপড় দিলে ঢেকুর উঠে যাবে অথবা শিশুকে কোলে বসিয়ে শিশুর পিঠে হালকা করে চাপড় দিলে ঢেকুর উঠে যাবে। 

নবজাতক শিশুর ঘাড় নরম থাকার কারণে অপর হাত দিয়ে ঘাড়ে সাপোর্ট দিবেন। বাচ্চাকে খুব জোরে চাপড় মারবেন না বাচ্চাকে হালকা করে পিঠে চাপড় মারবেন। অনেক সময় ঢেকুর তোলার সময় বাচ্চার মুখ দিয়ে দুধ বেরিয়ে আসে এই নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই কারণ আমরা তো জানি না যে বাচ্চাকে কতটুকু দুধ খাওয়াতে হবে আর বাচ্চাও জানে না যে কতটুকু দুধ খেতে হবে অতিরিক্ত দুধ খাওয়ার কারণে খাবার গুলো মুখ ‍দিয়ে বেরিয়ে আসে। 

এজন্য চিন্তার কোন কারণ নেই। বাচ্চার হজম শক্তি না হওযার কারণে অ্যাসিডিটি হয় যার কারণে বাচ্চার মুখ দিয়ে দই বের হয়ে যায় এতে বাচ্চা স্বস্তি বোধ করে। এগুলো বিষয় নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না

যতক্ষণ শিশু মায়ের বুকের দুধ খাবে ততক্ষণ নবজাতকের মায়ের উচিত খাবারের বিধি- নিষেধ গুলো মেনে চলা। যতক্ষণ না শিশু শক্ত খাবার খাচ্ছে ততদিন নবজাতকের মায়ের উচিত নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করা। কারণ খাবারের সেই প্রভাবটি শিশুর উপর পড়বে। আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানবো শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না সেই বিষয়ে বিস্তারিত। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

পিত্তথলিতে পাথর হলে কি খাবেন কি খাবেন না

কফিঃ কফিতে রয়েছে ক্যাফিন। ক্যাফিন হল একটি প্রাকৃতিক উত্তেজক পদার্থ। যা দুধের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে নবজাতকের শরীরে। এতে শিশুর মেজাজ বিগড়ে যায় এবং নবজাতকের ঘুম কমে যায়। কারণ, নবজাতক শিশুদের হজম শক্তি কম থাকার কারণে তারা প্রাপ্তবয়স্কদের মত ক্যাফিন হজম করতে পারে না। যদি শরীরে ক্যাফিন এর পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে স্তন্যদুগ্ধে আয়রনের পরিমাণটা কমে যাবে। ফলে শিশু দুধ থেকে আয়রন সংগ্রহ করতে পারে না এক পর্যায়ে শিশুর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।

চকোলেটঃ চকোলেট অনেকে পছন্দ করে কিন্তু এটা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো না। কফিতে যেমন ক্যাফিন নামক পদার্থ রয়েছে ঠিক তদ্রুপ চকলেটে রয়েছে থিওব্রোমিন পদার্থ। ক্যাফিনের মতো থিওব্রোমিন এই পদার্থের প্রভাব স্তন্যদুগ্ধে গিয়ে পড়ে। ফলে শিশুর মেজাজ বিগড়ে যায়। শিশু অস্বাভাবিকভাবে কান্নাকাটি করে। দৈনিক ৭০০ মিলিগ্রাম এর বেশি থিওব্রোমিন গ্রহণ করার কারণে শিশুর মধ্যে অস্তিরতা লক্ষ করা যায়।

অ্যালকোহলঃ নবজাতকের মায়ের অ্যালকোহল পান করা যাবে না। কারণ এটা শিশুর স্নাযুকোষের বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থ করে। তাই শিশুর সুরক্ষার কথা চিন্তা করে অ্যালকোহল পরিহার করাটা উত্তম।

অ্যাসিডিটি তৈরি করে এমন খাদ্য পরিহার করাঃ বাধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি এগুলো খাবারের দ্বারা অ্যাসিডিটি হয়। মায়ের দুধের মাধ্যমে ঐ অ্রাসিডিক উপাদান নবজাতকের দেহে চলে যায়। তাই যেসকল খাবার অ্যাসিড উৎপন্ন করে সেই খাবার গুলো পরিহার করা উচিত।

সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পারদ রয়েছে। পারদ দুধের মাধ্যমে শিশুর দেহে প্রবেশ করে নবজাতকের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। তাই নবজাতকের মায়ের উচিত সামুদ্রিক মাছ পরিহার করা।

টক জাতীয় ফলঃ টক জাতীয় ফল যেমনঃ লেবু, কমলালেবু, বাতাবিলেবু, যেসকল খাদ্যে ভিটামিন সি রয়েছে সেই খাদ্য গুলো পরিহার করা। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার মায়ের জন্য ভালো কিন্ত নবজাতকের জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার হজম করা কষ্টকর। শিশু যতক্ষণ শক্ত জাতীয় খাবার খাচ্ছে না ততক্ষণ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করাটা ভালো। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে অ্যাসিডিটি হয় যা নবজাতক শিশু হজম করতে পারবে না। কারণ তার হজম শক্তি এখনো তৈরি হয় নি।

চীনাবাদামঃ চীনা বাদাম খেতে অনেক সুস্বাদু। কিন্তু চীনা বাদাম রয়েছে এলার্জিক প্রোটিন। যা দুধের মাধ্যমে এই এলার্জি বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করে। ফলে শিশুর চুলকানি বা শরীরে লালচে দাগ দেখা যেতে পারে। তাই চীনাবাদাম বা চীনাবাদাম দিয়ে তৈরিকৃত খাবার এড়িয়ে চলুন।

বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে করণীয়

নবজাতক মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে না এটা কোন নতুন সমস্যা নয়। প্রায় নবজাতকের মা এই অভিযোগটা করে থাকে। অনেকে বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে করণীয় কি সে বিষয়ে অবগত নয়। আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাকে জানিয়ে দেবো বাচ্চার বুকের দুধ না পেলে করণীয় কি সে বিষয়ে বিস্তারিত। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে করণীয়।

  • নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর আগে নবজাতকের মাকে এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। কারণ দুধের ৯০ শতাংশ হচ্ছে পানি। তাছাড়া দৈনিক নবজাতকের মায়ের ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। যে সকল খাবার খেলে শরীরে পানি বৃদ্ধি পায় সে সকল খাবার খেতে হবে যেমন আনারস, তরমুজ, নাশপাতি ইত্যাদি। পাশাপাশি আপনি মেথি পানি খেতে পারেন। ইহা বুকের দুধ বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্যে করে।

  • অনেক সময় মানসিক চাপের কারণে ও মায়ের বুকে দুধ উৎপাদন হয় না এবং শিশু সে দুধ পায় না। এজন্য নবজাতকের মায়ের মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। দৈনিক কম করে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমালে ভালো হয়।

  • নবজাতকের মাকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে দুধ, ডিম, মাছ ইত্যাদি।

  • নবজাতকের মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে টাটকা শাকসবজি, বিভিন্ন মৌসুমী ফল, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, স্যুপ, জুস ইত্যাদি খেতে হবে। 

  • শিশুকে দৈনিক ৮ থেকে ১০ বার বুকের দুধ পান করাতে হবে। আপনি শিশুকে যত বুকের দুধ পান করাবেন তত শরীর থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হবে। সে হরমনের নাম হলো প্রোল্যাকটি। শিশু যখন মায়ের দুধ পান করে তখন এই হরমোন মস্তিষ্কে একটি বার্তা পাঠায় সেখান থেকে শরীরে দুধ উৎপাদন হয়। কাজেই শিশুকে ঘন ঘন ‍দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করাটা জরুরী।

  • নবজাতকের মা যখন দুচিন্তার মধ্যে থাকে তখন শরীর থেকে অ্যাডিনাইন হরমোন নিঃসৃত হয়। যা বুকের দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়। কাজেই নবজাতকের মা যেন চাপ মুক্ত থাকে, হাসি খুশি থাকে সে দিকে নজর দিন। তাহলে তা বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্যে করবে।

  • লাউ ও কালিজিরার মধ্যে এমন কিছু পদার্থ আছে যা মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই এগুলো খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। 

উপরোক্ত নিয়ম গুলো অনুসরণ করে বুকের দুধ উৎপাদন হয় না এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আলোচনা থেকে আশা করি জানতে পেরেছেন বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে করণীয় কী সে বিষয়ে বিস্তারিত। 

সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর 

নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো উচিত?

নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো উচিত সে বিষয়টি নির্ভর করে বাচ্চার বয়সের উপর। নবজাতক শিশু জন্ম নিলে দেড় ঘন্টা পর পর বুকের দুধ খাওয়ানোটা উত্তম। তবে এই অভ্যাসটা নবজাতকের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তন হবে। বাচ্চার বয়স যখন তিন মাস হবে তখন দুই থেকে আড়াই ঘন্টা পর পর দুধ খাওয়াতে হবে।  

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না?

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যা খাবেন না সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।  

কফি,চকোলেট , অ্যালকোহল, বাধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, সামুদ্রিক মাছ,টক জাতীয় ফল, চীনা বাদাম ইত্যাদি 

বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে করণীয় কি?

বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে যা করণীয়ঃ 

  • নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর আগে নবজাতকের মাকে এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। কারণ দুধের ৯০ শতাংশ হচ্ছে পানি। তাছাড়া দৈনিক নবজাতকের মায়ের ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। যে সকল খাবার খেলে শরীরে পানি বৃদ্ধি পায় সে সকল খাবার খেতে হবে যেমন আনারস, তরমুজ, নাশপাতি ইত্যাদি। পাশাপাশি আপনি মেথি পানি খেতে পারেন। ইহা বুকের দুধ বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্যে করে।

  • অনেক সময় মানসিক চাপের কারণে ও মায়ের বুকে দুধ উৎপাদন হয় না এবং শিশু সে দুধ পায় না। এজন্য নবজাতকের মায়ের মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। দৈনিক কম করে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমালে ভালো হয়।

  • নবজাতকের মাকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে দুধ, ডিম, মাছ ইত্যাদি।

  • নবজাতকের মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে টাটকা শাকসবজি, বিভিন্ন মৌসুমী ফল, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, স্যুপ, জুস ইত্যাদি খেতে হবে।

  • শিশুকে দৈনিক ৮ থেকে ১০ বার বুকের দুধ পান করাতে হবে। আপনি শিশুকে যত বুকের দুধ পান করাবেন তত শরীর থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হবে। সে হরমনের নাম হলো প্রোল্যাকটি। শিশু যখন মায়ের দুধ পান করে তখন এই হরমোন মস্তিষ্কে একটি বার্তা পাঠায় সেখান থেকে শরীরে দুধ উৎপাদন হয়। কাজেই শিশুকে ঘন ঘন ‍দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করাটা জরুরী।

  • নবজাতকের মা যখন দুচিন্তার মধ্যে থাকে তখন শরীর থেকে অ্যাডিনাইন হরমোন নিঃসৃত হয়। যা বুকের দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়। কাজেই নবজাতকের মা যেন চাপ মুক্ত থাকে, হাসি খুশি থাকে সে দিকে নজর দিন। তাহলে তা বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্যে করবে।

  • লাউ ও কালিজিরার মধ্যে এমন কিছু পদার্থ আছে যা মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই এগুলো খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। 

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। পরিশেষে বলা যায়, একটি নবজাতক শিশুকে কতক্ষণ খাওয়ানো উচিত তা নির্ভর করে তাদের স্বতন্ত্র বৃদ্ধি, ক্ষুধা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের মতো বিভিন্ন কারণের উপর। যদিও প্রথম ছয় মাসের জন্য একচেটিয়া বুকের দুধ খাওয়ানোর সুপারিশ করা হয়, কিছু শিশুর ফর্মুলা সম্পূরক প্রয়োজন হতে পারে। ব্যক্তিগত নির্দেশনার জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।  

শিশুর চাহিদার দিকে মনোনিবেশ করা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুসরণ করা তাদের সর্বোত্তম বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সঠিক খাওয়ানোর সময়কাল নিশ্চিত করবে। মনে রাখবেন, সর্বদা আপনার ছোটটির স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিন।

Previou Movie Next Movie