ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় কি আপনি জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আপনি যদি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় জানতে চান তাহলে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আজকাল সকলেই একটি নরম, মসৃণ এবং অবশ্যই দাগমুক্ত উজ্জ্বল ত্বক পেতে চায়। আমাদের প্রত্যেকের ব্যস্ত সময়সূচী, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অপর্যাপ্ত ঘুম এবং পরিবেশের দূষণের কারণে উজ্জ্বল ত্বক ধরে রাখা একটা অসম্ভব কাজ হয়ে উঠেছে। তাহলে চলুন নেচে জেনে নেওয়া যাক ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায়।
প্রতিদিনের কিছু রুটিন নিয়মিত করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে এখানে ৩টি কাজ যা নিয়মিত করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। বাড়িতে কিছু সাধারণ কাজ কর্ম আশ্চর্যজনক ভাবে আপনার ত্বকের গুণমানকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
১। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমঃ ঘুম হল এমন প্রাকৃতিক কাজ যা থেকে আমরা শক্তি পায় সকল কাজ করার। আবার আপনি যদি কয়েক দিন নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমান না ঘুমালে আপনার চেহারার উজ্জ্বলতা হারাবে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়বে এবং ব্রণের সমস্যা দেখা দিবে তাহলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য আপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাচ্ছেন কিনা। আপনার শরীর ও ত্বক ভালো রাখতে আপনাকে দিন রাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
২। বেশি বেশি পানি পান করুনঃ আপনার ত্বককে সুন্দর দেখাতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করে হাইড্রেটেড থাকা। অন্যান্য তরল ছাড়াও প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করার চেষ্টা করুন কারণ স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সঠিক হাইড্রেশন দরকার।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ যে কোনো ধরনের নিয়মিত প্রতিদিনের ব্যায়াম আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আপনাকে ফিট থাকতে সাহায্য করে, আপনার হার্ট ভালো রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এভাবে সব দিক থেকে সুস্থ শরীর বজায় রাখতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন আপনার ত্বক আপনার শরীরের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে পুষ্টির জন্য ক্ষুধার্ত অঙ্গ।
যে কাজ গুলো ত্বকের উজ্জ্বলতাকে কমিয়ে দিতে পারে
৪। ত্বকে লোশন মাখলেঃ অনেকেরই অভ্যাস আছে যখন তাদের ফেস ক্রিম ফুরিয়ে যায় তখন তারা বডি লোশন ত্বকের সব জায়গায় ব্যবহার করে। বডি লোশন ঘন এবং তৈলাক্ত হয়। এগুলি আপনার শরীরের জন্য তৈরি করা হয়। বডি লোশন ফেস ক্রিম হিসাবে ব্যবহার করলে ব্রেকআউট বা অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে এবং ত্বককে তৈলাক্ত দেখাতে পারে। তাই সবসময় এমন ফেস ক্রিম ব্যবহার করুন যা মৃদু এবং কম সুগন্ধযুক্ত।
৫। চিনিঃ চিনি প্রায় আপনার ঠোঁট এবং আপনার শরীরের বাকি অংশে বিভিন্ন ধরণের স্ক্রাবগুলিতে উজ্জ্বল ত্বকের জন্য একটি ঘরোয়া উপায় হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এটি ব্যবহার না করাই ভাল কারণ চিনির কণাগুলি বড় এবং বেশি ঘর্ষণ এর ফলে ক্ষত হতে পারে।
৬। গরম পানিঃ গরম পানি আপনার ত্বকের জন্য ভাল নয় কারণ এটি প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কমাতে পারে এবং এমনকি চুলকানির কারণ হতে পারে। আপনার ত্বকের ছিদ্র খুলতে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে আপনি হালকা গরম পানি দিয়ে ফেসিয়াল ব্যবহার করতে পারেন।
আরো জানুনঃ মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিন
৭। মলমের মত দাঁতের মার্জনঃ কিছু মানুষ ব্ল্যাকহেডস অপসারণ করতে টুথপেস্ট ব্যবহার করে তবে এটি অত্যন্ত খারাপ ফল দেয় কারণ টুথপেস্ট আপনার ব্ল্যাকহেডসকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
৮। সাবানঃ আমরা সবাই আমাদের মুখ পরিষ্কার করার জন্য কখনও না কখনও সাবান ব্যবহার করেছি। কিন্তু সাবানে প্রচুর পরিমাণ ক্ষার থাকে যা ত্বকের জন্য খুব খারাপ হতে পারে। এর ফলে ত্বক কালো হয়ে যায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় এর একটি উপায় হল এটা একটা উপায়।
৯। বেকিং সোডাঃ ব্রেকআউট থেকে পরিত্রাণ পেতে আরও একটি স্কিন হ্যাক যা প্রায় মানুষ করে থাকে তা হল বেকিং সোডা ব্যবহার। কিন্তু সাবধান বেকিং সোডা আপনার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হলে আপনার ত্বককে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু আক্রান্ত করতে পারে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ১১ টি ঘরোয়া উপায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে এখানে নিচে আমরা ১১টি জানাবোঃ
১০। হলুদঃ হলুদে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে হলুদ হল একটি মশলা যা আপনাকে কখনই হতাশ করবে না। হলুদ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে উজ্জ্বল করে। এতে রয়েছে কারকিউমিন যা একটি প্রদাহ বিরোধী উপাদান এবং ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করে। এটি কেবল আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে না বরং হলুদ ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে এবং নিস্তেজ ত্বককে সতেজ করে তোলে।
১১। মধুঃ মধু একটি দারুণ ময়েশ্চারাইজার এবং ত্বককে ভালোভাবে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। মধুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং বাড়িতে দাগ ও ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। মধু দাগহীন ও উজ্জ্বল ত্বক দিতে সাহায্য করে।
১২। অলিভ অয়েলঃ অলিভ অয়েল ত্বকের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। সূর্যের সংস্পর্শে আসার পরে ত্বকে জলপাই তেল লাগালে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলি নষ্ট হয়ে যায়। অলিভ অয়েল ত্বকের শুধু ক্ষতি সারায় না বরং এটি ত্বকের সুন্দর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
১৩। কমলার রসঃ কমলালেবু ভিটামিন সি-তে ভরপুর বলে পরিচিত এবং এটি ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন এক গ্লাস কমলালেবুর রস খেলে ত্বকের রং পরিষ্কার করতে এবং অল্প সময়ের মধ্যে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড ব্রণ নিয়ন্ত্রণে ও ফর্সা করতে পারে।
১৪। দুধঃ টাইরোসিন, মেলানিন নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ত্বককে কালো করে দেয়। দুধ ত্বকে টাইরোসিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। সুন্দর ত্বক পাওয়ার জন্য কাঁচা দুধ একটি সহজলভ্য উপাদান।
১৫। বেসনঃ এটি বছরের পর বছর ধরে বাড়িতে রুপচর্যার একটু উপাদান। হেলদি এবং ঝলমলে ত্বকের জন্য বেসন ব্যবহার করা হয়। বেসন প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে সব থেকে ভালো উপায় এটি।
১৬। পেঁপেঃ পেঁপের পেপেইন শুধু আপনার লিভারের জন্যই ভালো নয় আপনার ত্বকের জন্যও ভালো কাজ করে। পেঁপে ত্বকে ব্যবহার করলে দাগ হালকা হয়। পেঁপে একটি এক্সফোলিয়েটর হিসাবেও কাজ করে এবং প্রোটিন কোষ এবং মৃত ত্বকের কোষগুলিকে দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে সুন্দর করে তোলে।
১৭। অ্যালোভেরা সমস্ত ত্বকের জন্যঃ অ্যালোভেরা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আমাদের ত্বকের জন্য ভালো। অ্যালোভেরা ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল রাখে। এছাড়াও ব্রণ প্রতিরোধ করে। রোদে পোড়া ত্বকে অ্যালোভেরা দিলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
আরো জানুনঃ মুখে ব্রণ থাকলে যে ভুলগুলো করা উচিত নয় সেই সম্পর্কে জেনে নিন
১৮। লেবু তৈলাক্ত এবং ব্রণ আছে এমন ত্বকের জন্যঃ লেবু ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। এটি আমাদের ত্বককে হালকা করতে এবং আমাদের ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতেও সাহায্য করে।
১৯। নারকেল তেল শুষ্ক ত্বকের জন্যঃ নারকেল তেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এটি প্রদাহ কমায় এবং প্রায় সব ধরনের ত্বকের জন্য খুব ভালো কাজ করে। এটি একটি চমৎকার ময়েশ্চারাইজার, ক্লিনজার এবং সানস্ক্রিন। এটি আমাদের ত্বককে ব্রণ মুক্ত রাখে।
২০। কলা শুষ্ক ত্বকের জন্যঃ কলা আমাদের ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ভিটামিন এ এবং বি ইত্যাদি রয়েছে। এগুলি আমাদের ত্বককে হাইড্রেট এবং ময়শ্চারাইজ করে। কলার শক্তিশালী অ্যান্টি-এজিং প্রভাবও রয়েছে যা ত্বককে ফর্সা করে। এখান থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় শেষ হল।
ত্বকের হেলদ কে প্রভাবিত করে এমন উপাদান
প্রত্যেকের ত্বক আলাদা। কিছু লোক স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন কারণে অন্যদের তুলনায় উজ্জ্বল চেহারা পায়। ত্বকের হেলদ কে প্রভাবিত করে এমন কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
জেনেটিক্সঃ একজন ব্যক্তির জিনের কারণে শুষ্ক বা নিস্তেজ ত্বকের সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। কিছু শুষ্ক ত্বক এর কারণ যেমন এটোপিক ডার্মাটাইটিস এটা জেনেটিক্সের সাথে সম্পর্কিত।
হরমোনঃ হরমোনের মাত্রার ওঠানামা ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে এবং একজন ব্যক্তির ত্বক কতটা তৈলাক্ত বা শুষ্ক তা পরিবর্তন করতে পারে। এটি ছেলে ও মেয়ে দুইজনেরই হতে পারে বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজের সময় বেশি হয়।
হেলদ সমস্যা এবং ওষুধঃ যদি একজন ব্যক্তির শরীর খারাপের জন্য ওষুধ খায় তবে এটি তাদের ত্বকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিবেশঃ সূর্য এর আলো, বেশি তাপমাত্রা, শুষ্ক বায়ু, তামাকের ধোঁয়া এবং দূষণ সবই ত্বকের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
আচরণঃ পানি খাওয়া, খাদ্য, ঘুম, মানসিক চাপ এবং ব্যায়াম ত্বককে প্রভাবিত করতে পারে সেটা ভালো হোক বা খারাপ হোক। একজন ব্যক্তি তার ত্বকে যে পণ্যগুলি ব্যবহার করে তাও ত্বক কে ভালো বা খারাপ দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এই সমস্ত কারণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় তবে ত্বককে উজ্জ্বল করতে কিছু নিয়ম কানুন আবার কিছু ঘরের প্রাকৃতিক উপাদান বা বাজার থেকে কেনা উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। উপরে আমরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় বর্ননা করেছি আপনারা এগুলো চেষ্টা করতে পারেন।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সেরা ৫ টি ঘরোয়া উপায় কি কি?
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম
- বেশি বেশি পানি পান করুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- অ্যালোভেরা সমস্ত ত্বকের জন্য
- লেবু তৈলাক্ত এবং ব্রণ আছে এমন ত্বকের জন্য
ত্বকের উজ্জ্বলতা কমার কারণ গুলো কি কি?
- ত্বকের উজ্জ্বলতা কমার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। যেমনঃ
- ত্বকে লোশন মাখলে
- চিনি
- গরম পানি
- মলমের মত দাঁতের মার্জন
- সাবান
- বেকিং সোডা
শেষ কথা
প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ত্বক সাধারণত স্বাস্থ্যকর এবং হাইড্রেটেড হয়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য আপনি ধীরে ধীরে ত্বকের যত্নের রুটিন মেনে চলতে পারেন এবং সেইসাথে প্রয়োজনে আপনার খাবার বা জীবনযাত্রায় পরিবর্তন করতে পারেন। ধূমপান, অ্যালকোহল এবং অতিবেগুনী আলো সবই ত্বকের জন্য ক্ষতি করতে পারে তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। উপরের আলোচনা থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ২০ টি ঘরোয়া উপায় জানুন এবং সেই ভাবে কাজ করুন তাহলে আশা করি আপনি খুব তাড়াতাড়ি উজ্জ্বল ত্বক পাবেন।