৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। ৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় কি, আপনি যদি জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজকেই এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সুবিদার জন্য ৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশি হওয়ার কারণ, ৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশির লক্ষণ এবং ৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় সহ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আপনি যদি আপনার ৬ মাসের শিশুকে সর্দি জনিত সমস্যা থেকে দুরে রাখতে চান, তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুণ।
৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশি হওয়ার কারণ
৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশির সবচেয়ে বড় কারণ হল ভাইরাস জনিত সমস্যা। ভাইরাসজনিত সর্দি-কাশি হলে সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে যদি এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে না ভালো হয় সেই ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস বা অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে এবং এটি অবশ্যই অনেক বড় চিন্তার কারণ। এরকম মনে হলে আপনাকে অবশ্যই খুব ভালো মানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
যাইহোক, এবার চলুন ৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশি হওয়ার কারণ গুলো জেনে নেয়া যাক।
৬ মাসের শিশুদের সর্দি-কাশির কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ জনিত সমস্যাঃ ৬ মাসের শিশুদের বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ জনিত সমস্যার জন্য সর্দি-কাশি জনিত সমস্যা হতে পারে। সাধারণ ঠান্ডা জনিত ভাইরাস, যেমন রাইনোভাইরাস, অ্যাডেনোভাইরাস এবং রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস,শিশুদের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করতে পারে।
- অসুস্থ ব্যক্তিদের সংস্পর্শেঃ শিশুরা ঠান্ডা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে গেলে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি জনাকীর্ণ জায়গায় বা পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হলে ঘটতে পারে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবঃ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব হলেও বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এর ফলেও, ৬ মাসের শিশুর বা যে কোন বয়সি শিশুর সর্দি- কাশি হতে পারে।
- পরিবেশগত কারণেঃ ধোঁয়া, দূষণ, বা অন্যান্য পরিবেশগত বিরক্তিকর পদার্থ শ্বাসকষ্টের সমস্যাগুলিতে অবদান রাখতে পারে এবং এর ফলেও ৬ মাসের শিশুর সর্দি কাশি হতে পারে।
- ঠাণ্ডা তাপমাত্রাঃ ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বাচ্চাদের বাড়ির অভ্যন্তরে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যার ফলে অভ্যন্তরীণ দূষণকারীর সংস্পর্শ বেড়ে যায় এবং যাদের সর্দি-কাশি আছে তাদের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়,যার ফলে সর্দি-কাশি হওয়ার সম্বাবনা থাকে।
- ঋতু পরিবর্তনঃ আবহাওয়ার পরিবর্তন, বিশেষ করে ঠান্ডা মাসগুলিতে, সর্দি হওয়ার ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে পারে। ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাস শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমকে বিরক্ত করতে পারে। ৬ মাসের বা যে কোন বয়সের শিশুর সর্দি-কাশি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ গুলোর মধ্যে এটি একটি বড় কারণ।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও শিশুদের সর্দি-কাশি হতে পারে।
মনে রাখবেন, ৬ মাসের বা যে কোন বয়সের শিশুর সুস্থ বা আসুস্থ থাকার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান শিশুটির পিতা মাতার। শিশুদের সুস্থ রাখতে হলে পিতা মাতাকে অবশ্যই খুবই সচেতন এবং যত্নশীল হতে হবে, যেমনঃ ঘন ঘন হাত ধোয়া, অসুস্থ ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানো এবং শিশুর পরিবেশ পরিষ্কার রাখা। যদি একটি শিশু অসুস্থতার লক্ষণ দেখায়, তাহলে উপসর্গগুলি কীভাবে পরিচালনা করা যায় তার সঠিক মূল্যায়ন এবং নির্দেশনার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা।
৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশির লক্ষণ
নিচে আপনাদের সুবিদার জন্য ৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশির লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হলো। তবে মনে রাখবেন, আপনি যদি আপনার শিশুকে স্বস্থ রাখতে চান তাহলে নিচে উল্লেখিত লক্ষণ গুলো আপনার শিশুর মধ্যে দেখা মাত্রই খুব দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশির লক্ষণগুলি সাধারণত নিম্নরূপঃ
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- নাক বন্ধ থাকা
- চোখ দিয়ে পানি পড়া
- হাঁচি
- কাঁশি
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- বমি
- ডায়রিয়া
সর্দির লক্ষণঃ
- নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ থাকা শিশুর সর্দির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। এটি শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট করে এবং ঘুমাতেও সমস্যা হয়।
- চোখ দিয়ে পানি পড়াও সর্দির একটি সাধারণ লক্ষণ।
- হাঁচিও সর্দির একটি লক্ষণ। তবে হাঁচির সাথে যদি জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বমি বা ডায়রিয়া হয়, তাহলে তা অন্য কোনও রোগের লক্ষণও হতে পারে।
কাশির লক্ষণঃ
- শিশুর কাশি শুকনো বা শ্লেষ্মাযুক্ত হতে পারে।
- শিশু কাশির কারণে ঘুমাতে পারে না।
- শিশু কাশির কারণে বমি করতে পারে।
জ্বরের লক্ষণঃ
- শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হতে পারে।
- জ্বরের কারণে শিশু অস্থির বা দুর্বল হতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণঃ
- মাথাব্যথা
- বমি
- ডায়রিয়া
বিঃ দ্রঃ যদি ৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশির লক্ষণগুলি ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা যদি শিশুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বমি বা ডায়রিয়া হয়, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করুন।
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
নিচে আপনাদের সুবিদার জন্য ৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। তবে মনে রাখবেন, এই আর্টিকেলে যে তথ্য দেয়া হলো তা শুধু মাত্র আপনাদের সচেতন করার জন্য এবং এই করণীয় গুলো অণুসরণ করলে আপনার শিশুর সর্দি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিন্তু স্থায়ী সমাধাণ নাও হতে পারে। কারণ সব ফর্মুলা সকলের জন্য কাজ করে না। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে এই করণীয় গুলো অবশ্যই অণুসরণ করতে পারেন।
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় নিম্নরূপঃ
- শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।
- শিশুর মাথা উঁচু করুন
- শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাওয়ান
- শিশুর নাক পরিষ্কার করুন
- শিশুর নাক পরিষ্কার করুন
- শিশুর ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখুন
- শিশুকে জ্বর হলে জ্বরনাশক ওষুধ দিন
- ভালো স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন
- যদি প্রয়োজন হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন
শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।
সর্দির সময় শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন যাতে তার শরীর সুস্থ হয়ে ওঠতে পারে।
শিশুর মাথা উঁচু করুন
ভাল শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য আপনার শিশুর খাঁচা বা বেসিনেটের মাথাটি সামান্য উঁচু করুন।
শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাওয়ান
সর্দির কারণে শিশুর শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। তাই শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাওয়ান যাতে তার শরীরে পানিশূন্যতা না হয়। তরল হিসেবে শিশুকে মা, দুধ, পানি, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন।
শিশুর নাক পরিষ্কার করুন
সর্দির কারণে শিশুর নাক বন্ধ থাকলে সে শ্বাস নিতে কষ্ট করে। তাই শিশুর নাক পরিষ্কার করুন যাতে সে সহজে শ্বাস নিতে পারে। নাক পরিষ্কার করার জন্য আপনি স্যালাইন ড্রপ বা স্যালাইন দ্রবণ ব্যবহার করতে পারেন।
শিশুর ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখুন
সর্দির সময় শিশুর নাক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই শিশুর ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখুন যাতে তার নাক ভিজে থাকে। আর্দ্রতা বজায় রাখতে আপনি ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
শিশুকে জ্বর হলে জ্বরনাশক ওষুধ দিন
সর্দির কারণে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হলে তাকে জ্বরনাশক ওষুধ দিন। জ্বরনাশক ওষুধের ডোজ শিশুর বয়স এবং ওজন অনুযায়ী দেবেন।
ভালো স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন
জীবাণুর বিস্তার রোধ করতে ঘন ঘন আপনার হাত ধুয়ে নিন। আপনার শিশুকে অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছে প্রকাশ করা এড়িয়ে চলুন।
যদি প্রয়োজন হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন
যদি আপনার শিশুর উপসর্গগুলি আরও খারাপ হয়, যদি ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ থাকে, শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, ক্রমাগত জ্বর হয় বা আপনার যদি কোনো উদ্বেগ থাকে, তাহলে অবিলম্বে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
অন্যান্য করণীয়
- শিশুকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করুন।
- শিশুকে অন্যদের কাছ থেকে দূরে রাখুন যাতে অন্য কেউ সর্দি না হয়।
- শিশুর ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
ঘরোয়া প্রতিকার
সর্দি-কাশির জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও রয়েছে। যেমন:
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান।
- শিশুর নাকে গরম পানি দিয়ে ভাপ দিন।
- শিশুর বুকে এবং পিঠে ভিক্স ভেপোরাব লাগান।
- শিশুকে তুলসী পাতার রস খাওয়ান।
মনে রাখবেন, এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি শিশুর সর্দি-কাশির উপশমে সাহায্য করতে পারে। তবে লক্ষণগুলি ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে বা যদি শিশুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বমি বা ডায়রিয়া হয়, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর বা FAQ
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে প্রথম করণীয় কী?
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে প্রথম করণীয় হল শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া। সর্দির সময় শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন যাতে তার শরীর সুস্থ হয়ে ওঠতে পারে।
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে তাকে কী খাওয়ানো উচিত?
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে তাকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাওয়ানো উচিত। সর্দির কারণে শিশুর শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। তাই শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাওয়ান যাতে তার শরীরে পানিশূন্যতা না হয়। তরল হিসেবে শিশুকে মা, দুধ, পানি, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন।
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে তার ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য কী করা উচিত?
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে তার ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। হিউমিডিফায়ার বাতাসে জলীয় বাষ্প যোগ করে আর্দ্রতা বাড়ায়। ফলে শিশুর নাক শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে তাকে জ্বর হলে কী করা উচিত?
৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে তাকে জ্বর হলে তাকে জ্বরনাশক ওষুধ দেওয়া উচিত। জ্বরনাশক ওষুধের ডোজ শিশুর বয়স এবং ওজন অনুযায়ী দেবেন।
মাসের শিশুর সর্দি হলে তার অন্য কোন করণীয় আছে কি?
হ্যাঁ, ৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে তার অন্য কিছু করণীয় আছে। যেমন:
- শিশুকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করুন।
- শিশুকে অন্যদের কাছ থেকে দূরে রাখুন যাতে অন্য কেউ সর্দি না হয়।
- শিশুর ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
শেষকথা
উপরোক্ত আলোচনায় ৬ মাসের শিশুর সর্দি-কাশির কারণ ও লক্ষণ এবং ৬ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেস্টা করেছি। আমার লেখার মাঝে যদি ভাষাগত কোন ভুল হয়ে থাকে,তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যকে পড়ার এবং জানার সুযোগ করে দেবেন। ধন্যবাদ