দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় (পেটের গ্যাস সমস্যার ১০০% সমাধান)
আপনার কি দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। বর্তমানে অনেকেরই পেটের গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে এর কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে তাই আপনার দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো জেনে নেওয়া দরকার। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো
কোনো দিন পেটে গ্যাস হলে খাওয়া-দাওয়া ও কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু লোকের জন্য, গ্যাসের ব্যথা তাদের এতটাই বিরক্ত করে যে তাদের পক্ষে শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। গ্যাসের কারণে পেটে ভারীভাব ও ব্যথা, চোখে জ্বালাপোড়া, বমি ভাব এমনকি মাথাব্যথাও হয়। এটি কেবল একটি গ্যাস, তবে এটিকে উপেক্ষা করলে গুরুতর পরিণতি হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি ও আলসার ইত্যাদি গ্যাসজনিত রোগ। এই সমস্যা গুলো থেকে বাঁচতে আমাদের সকলের দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো জানা দরকার।
এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো পেটে গ্যাস কেন হয়, পেটের গ্যাস এর লক্ষণ গুলো কি কি, দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে। তাই আপনি যদি এই সকল বিষয়ে জানতে চান তাহলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পেটে গ্যাস কেন হয়
যেহেতু এই আর্টিকেলটির মূল আলোচনার বিষয় হচ্ছে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়। সেহেতু মূল আলোচনা শুরু করার আগে বেশ কিছু বিষয় আলোচনা করা দরকার। যেমন, আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে পেটে গ্যাস কেনো হয়? তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করার আগে পেটে গ্যাস কেনো হয়? এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
বর্তমানে অনেকেই পেটের গ্যাস সমস্যায় ভুগে থাকেন কিন্তু পেটের গ্যাস কেন হয় এ
ব্যাপারে অনেকেই জানেন না এজন্য সতর্ক থাকতে পারেন না। কিন্তু আপনি যদি আগে থেকে
জেনে থাকেন যে পেটের গ্যাস কেন হয় তাহলে সেই কাজগুলো আপনি করা থেকে বিরত
থাকতে পারবেন এবং পেটের গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে। পেটে গ্যাসের কারণ নিয়ে অনেক ধরনের গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে,পেটের গ্যাস সমস্যা
হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে সেগুলো হলো।
১। পেটের গ্যাস সমস্যা হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অস্বাস্থ্যকর খাবার বলতে যেমন অতিরিক্ত ভাজা পড়া জাতীয় খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার খাওয়া এইগুলো অভ্যাসের কারণে পেটের গ্যাস হয়ে থাকে।
পিত্তথলিতে পাথর হলে কি খাবেন কি খাবেন না ?
২। পেটের গ্যাস সমস্যা হয় আরো একটি কারনে সেটি হল একবারে অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার খেয়ে ফেলা। আমাদের মধ্যে অনেকের অভ্যাস রয়েছে যারা ঠিকমতো খাই না কিন্তু একবার খেতে বসলে অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার খেয়ে ফেলে এতে করে সেগুলো পেটে গিয়ে হজমে সমস্যা হয় এবং পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে। তিন ভাগের খাবার খাওয়া প্রয়োজন একভাগ খাবার এক ভাগ পানি এবং একভাগ ফাঁকা রাখতে হবে।
বলা হয়ে থাকে যে, একজন মানুষের হৃদপিন্ডের পথ তার পেট দিয়ে যায়। অর্থাৎ কাউকে খুশি করতে চাইলে তাকে সুস্বাদু খাবার দিন। এই
কারণেই প্রায়শই আমরা যখন কোনও কিছুর স্বাদ গ্রহণ করি তখন আমরা তার
পরিমাণের দিকে মনোযোগ দিই না এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাই, যার ফলে পেটে
গ্যাস তৈরি হতে শুরু করে। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি খুব বেশি অ্যাসিড তৈরি করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। এর কারণে গ্যাস, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, পেটে ব্যথাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
৩। অতিরিক্ত পরিমাণ ধূমপান সেবন করা এবং বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করার ফলেও পেটের গ্যাস হয়ে থাকে। তাই এগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন।
৪। অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং নেপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
৫।।অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং চা-কফি পান করার কারণেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
৬।হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক পাকস্থলীর সংক্রমণের কারণেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
৭।পাকস্থলীতে বাইল এসিড জমেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
৮।কোকেনে আসক্ত হলেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
৯। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কারণেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
১০।ভাইরাল সংক্রমণের কারণে দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, যেমন সাইটোমেগালোভাইরাস এবং হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস এর কারণেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
১২। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার হজম করতে না পারলেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
১৩। ডায়াবেটিসের কারণেও পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
পেটে গ্যাসের লক্ষণ
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে পেটে গ্যাস হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়? তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো জানার আগে চলুন পেটে গ্যাসের লক্ষণ গুলো জেনে নেয়া যাক। যখন পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে তখন বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয় আর এই লক্ষণগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার পেটের গ্যাস হয়েছে।
পেটের গ্যাস এর লক্ষণ গুলো হলোঃ
অল্প খাবারেই পেট ভরে যাওয়া
ক্রমাগত হেঁচকি আসা
বদহজম হওয়া
খিদে কম পাওয়া
বুক জ্বালা পোড়া করা
ক্লান্তি অনুভব করা
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
রক্ত বমি করা
পেট ফুলে ফেঁপে থাকা
হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হওয়া
পেট প্রচন্ড ব্যথা করা
মলত্যাগ করতে সমস্যা হওয়া এবং কালো মল
কারো যদি পেটে গ্যাস হয় তাহলে এ সকল লক্ষণ দেখা দেয়। তাই আপনার মধ্যে যদি এই সকল লক্ষণ কিছুদিন ধরে দেখতে পান তাহলে অবহেলা করা যাবে না দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে অথবা এখানে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় যেগুলো দেখানো হবে সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। কারণ অনেকদিন ধরে পেটে গ্যাস সমস্যা থাকলে সেটা আলসারে পরিণত হয়ে যায়।
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
পেটের গ্যাস সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বেশিরভাগ মানুষ ওষুধের আশ্রয় নেন, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। তাই আমরা এখানে পেটের গ্যাস সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যে উপায়গুলো ১০০% ঘরোয়া উপায়। আপনার যদি পেটের গ্যাস সমস্যা থাকে তাহলে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো আপনার জানা প্রয়োজন। এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি পেটের গ্যাস সমস্যার প্রাথমিক
লক্ষণগুলি দ্রুত দূর করতে উপকারী হতে পারে। তাহলে চলুন দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় জেনে নেয়া যাক।
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো নিম্নরূপঃ
১। বেকিং সোডাঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে ব্রেকিং সোডা অন্যতম। এক চা চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে বার বার পান করলে দ্রুত পেটের গ্যাস কমে যাবে। বেকিং সোডার ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তার মধ্যে একটি হলো দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, মানুষের পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে, যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে ।
যখন বেকিং সোডা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের সাথে মেশানো হয়, তখন এই রাসায়নিকটি দ্রুত কাজ করে এবং পেটের গ্যাসের উৎপাদনকে ধীর করে দিতে পারে। এর ভিত্তিতে বলা যায়, দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে বেকিং সোডা ব্যবহার করলে কিছুটা হলেও সমস্যা কমতে সহায়ক হতে পারে।
২। অ্যালোভেরা জেলঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম ঘরোয়া উপায় হচ্ছে ঘৃতকুমারী। দুই চা চামচ তাজা অ্যালোভেরা জেল এক গ্লাস পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিনে এক বা দুই বার পান করতে হবে। পেটের গ্যাস তৈরির একটি অন্যতম কারণ হল হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ।
ডেঙ্গু রোগের সাধারণ লক্ষণগুলোর কারণ কি?
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরাতে
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। সুতরাং এটি দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।
৩। ডাবের পানিঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে খুব সহজ একটি উপায় হচ্ছে ডাবের পানি পান করা। পেটের গ্যাস কমানোর জন্য পানি খাওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেজন্য আপনি চাইলে ডাবের পানি খেতে পারেন। পেটের গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে ডাবের পানি অনেক উপকারী।
ডাবের পানি আপনি দিনের যেকোনো সময় পান করতে পারেন। দিনে তিন-চার গ্লাস ডাবের পানি খেলে অনেক ভালো উপকার পাওয়া যায়। ডাবের পানি ব্যবহারের বিভিন্ন ধরণের উপকারিতা রয়েছে। যদিও এটি হজমের জন্য ভাল বলে মনে করা হয়, এটি পেটের গ্যাস কমানোর ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪। সবুজ চাঃ এক চামচ গ্রিন টি ব্যাগ এক চামচ মধু এবং এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিনে দুই বার পান করতে পারেন। দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে এটিও খুব কার্যকরী উপায়। প্রথমে পানি ভালো করে গরম করে নিন। তারপর এতে এক কাপ মধু মেশান এরপর পানিতে গ্রিন টি ব্যাগ মিশিয়ে এটি ফিল্টার করে তারপর পান করতে হবে। দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ক্ষেত্রে সবুজ চায়ের উপকারিতা অনেক।
গ্রিন টি-তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা সরাসরি পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আস্তরণকে প্রভাবিত করে। ফলে দ্রুত পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। পেটের গ্যাসের ওষুধ হিসেবে প্রতিদিন এই চা পান করলে দীর্ঘস্থায়ী পেটের গ্যাস সমস্যা সেরে যায়। তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে গ্রিন টি খেতে পারেন।
৫।লেবুঃ এক চা চামচ লেবুর রস আধা গ্লাস পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিনে দুই বার পান করুন। লেবু নানাভাবে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী বলে বিবেচিত। এটি দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে,লেবুতে গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। এতে পাওয়া এই বৈশিষ্ট্যগুলি হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে উপকারী হতে পারে যা দ্রুত পেটের গ্যাস সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৬। আদাঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজতম উপায় হচ্ছে আদা। দ্রুত পেটের গ্যাস সমস্যা সমাধান করার জন্য আদা অনেক উপকারী। তাই আপনার যদি দ্রুত পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আদা কুচি কুচি করে কেটে সেগুলো চিবিয়ে খান তাহলে দেখবেন দ্রুত পেটের গ্যাস ভালো হয়ে গেছে।
আদার মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য
রয়েছে, যা হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক সংক্রমণের কারণে পেটে প্রদাহ কমাতে
উপকারী হতে পারে। এটি পেটের গ্যাসের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
৭। জিরাঃ পেটের গ্যাস কমাতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য জিরা অনেক উপকারী তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে আখের গুড়ের সাথে জিরা মিশিয়ে ছোট ছোট বলের মতো তৈরি করে সেগুলো নিয়মিত কয়েকদিন খেতে পারেন তাহলে পেটের গ্যাস ভালো হয়ে যাবে।
অথবা
প্রথমে এক চামচ জিরা হালকা ভেজে তারপর মিক্সারে ভালো করে পিষে নিন।
তারপর এক গ্লাস পানি গরম করে তাতে এই গুঁড়ো মিশিয়ে নিন।
এর পর এই পানি পান করুন।
দিনে দুই বা তিনবার খাওয়ার পরে পান করুন। আমরা সকলেই জানি, জিরার ব্যবহার শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এটি আয়ুর্বেদে একটি উপকারী ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়। জিরাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, এটি পেটের গ্যাস এবং অন্যান্য পেটের রোগের জন্য একটি ওষুধের মতো কাজ করতে পারে।
৮। দইঃ প্রতিদিন এক বা দুই বাটি দই খেলে পেটের গ্যাস সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া পেটে গ্যাস তৈরির প্রধান কারণ। দইয়ে প্রোবায়োটিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রোবায়োটিকগুলি গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি এর উপর কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। আর তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে দইয়ের ব্যবহার উপকারী হতে পারে।
৯। মধুঃ দুই চামচ মধু এক গ্লাস গরম পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই পানি পান করুন। মধু স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এর কারণ হল এতে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের গুণাগুণ, যা রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে থাকে। মধুতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই উভয় বৈশিষ্ট্য পেটের গ্যাসের প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
একদিকে, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গ্যাসের কারণে পেট ফোলা কমাতে কার্যকর।অন্যদিকে, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি গ্যাস সৃষ্টিকারী বিভিন্ন
ধরণের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। আর তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯। দারুচিনিঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ক্ষেত্রে দারুচিনি অনেক উপকারী
কারণ এটা হজমের জন্য অনেক কার্যকরী। সেজন্য দ্রুত পেটের গ্যাস ভালো করতে হালকা
পরিমাণ পানির সাথে দারু চিনি মিশিয়ে নিন এবং হালকা পরিমাণ গরম করে আবার ঠান্ডা
করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন তাহলে দ্রুত পেটের গ্যাস ভালো হয়ে যাবে।
দারুচিনি
শুধুমাত্র রান্নাঘরে খাবারের স্বাদ বাড়াতে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়
না, এতে উপস্থিত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক সমস্যা
দূর করতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে দারুচিনি ব্যবহার করা যেতে পারে।
১০। হলুদঃ ৫ গ্রাম হলুদের গুঁড়ো ৫ গ্রাম লবণ এক গ্লাস পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে সেবন করুন। পানিকে হালকা গরমও করতে পারেন। অথবা এক চামচ হলুদ গুঁড়া দই এবং কলা এক গ্লাস পানির সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর পানি দিয়ে সেবন করুন। আপনি এটি দিনে একবার বা দুবার খেতে পারেন।
হলুদ শুধু খাবারেই স্বাদ বাড়ায় না, হলুদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বাস্থ্যের জন্যও ব্যবহার করা হয়। দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়েও এটি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে হলুদের ব্যবহার পেটে গ্যাসের কারণে জ্বালাপোড়া এবং ফোলাভাব কমাতে পারে সাহায্য করে।
১১। পুদিনা তেলঃ দুই বা তিন ফোঁটা পুদিনা তেল আধা গ্লাস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। ভাল ফলাফলের জন্য, আপনি এটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করতে পারেন। আয়ুর্বেদেও পুদিনা তেল ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন ধরণের রোগ এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে। আর তাই দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে পুদিনা তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
১২। পুদিনা পাতাঃ আমরা সকলেই জানি,পুদিনা পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য এবং এসিডিটির সমস্যা দূর
করার জন্য অনেক উপকারী। পানির সাথে পুদিনা পাতা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং
সেগুলো ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি পান করুন। তাহলে দ্রুত পেটের গ্যাস সমস্যা কমে যাবে।
১৩। পানিঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে উপকারী উপায় হচ্ছে পানি। যদি আপনার পেটের গ্যাস সমস্যা থাকে তাহলে এটি ঘরোয়া ভাবে সমাধান করতে বেশি বেশি পানি পান করার চেষ্টা করুন বেশি বেশি পানি পান করলে পেটের গ্যাস সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
১৪। কলাঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি খুব সহজ এবং উপায় হচ্ছে পানি। কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং আরো
বিভিন্ন ধরণের উপাদান তাই আপনি যদি পেটের গ্যাস সমস্যা সমাধান করতে যান তাহলে প্রতিদিন কলা খেতে
পারেন ইনশাআল্লাহ পেটের গ্যাস সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
১৫। মৌরিঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর ভেতর আরেকটি উপায় হল মৌরি পানি। হালকা পরিমাণ পানিতে মৌরি ভিজিয়ে রাখুন এবং সেই পানি পান করুন তাহলে পেটের গ্যাস অনেক কমে যাবে।
১৬। লবঙ্গঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে লবঙ্গ অনেক উপকারী উপায়। সেজন্য এক থেকে দুইটি লবঙ্গ নিন এবং সেগুলো মুখের মধ্যে দিয়ে চিবিয়ে সেগুলোর রস খেয়ে নিন তাহলে পেটের গ্যাস অনেক কমে যাবে।
১৭। তুলসী পাতাঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর জন্য আরেকটি কার্যকরী উপায় হল
তুলসী পাতা। আপনার যদি পেটে গ্যাস হয়ে থাকে তাহলে তুলসী পাতার রস তৈরি করে অথবা তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন তাহলে দ্রুত পেটের গ্যাস ভালো হয়ে
যাবে।
১৮। পেঁপেঃ পেঁপে আমরা সকলেই চিনি।কিন্তু আমরা অনেকেই পেঁপে খাওয়ার উপকারীতা সম্পর্কে জানিনা। পেঁপের অনেক উপাকারী। বিশেষ করে গ্যাসের সমস্যা থেকে বাঁচতে পেঁপে খুব উপকারী। আপনি চাইলে নিয়মিত পেঁপের জুস তৈরি করে খেতে পারেন তাহলে
এতে করে দ্রুত পেটের গ্যাস সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে এবং পেট ঠান্ডা থাকবে। এটি গেল দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে সর্বশেষ উপায়।
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঔষধ
আমরা এতক্ষণ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে ঘরোয়া উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। ঘরোয়া উপায়গুলোর পাশাপাশি দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর জন্য কি কি ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে সেই বিষয়েও আমাদের জানা দরকার। আমাদের বেশিরভাগ মানুষেরই পেটের গ্যাস সমস্যা হয়ে থাকে।
তাই যাদের পেটের গ্যাস
সমস্যা রয়েছে তারা পেটের গ্যাস দূর করার ঔষধ খেতে চাই। কিন্তু কোন ঔষধ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর জন্য খেতে হবে সেটা অনেকেই জানেনা। দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর জন্য
বাজারে বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে তার মধ্যে খুব পরচিত কয়েকটি ওষুধ হলো লোসেকটিল, রাবিপ্রাজল,
ইসুটিন ২০, সার্জেল, সেকলো ইত্যাদি।
এই সকল ঔষধ পেটের গ্যাস কমানোর জন্য অনেক কার্যকরী তারপরেও যে কোন ওষুধ
খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং দীর্ঘদিন ধরে যে কোন ঔষধ সেবন
করা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই যে কোন ঔষধ অতিরিক্ত পরিমাণ এবং দীর্ঘদিন সেবন করা উচিত নয়।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর
পেটে গ্যাস হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
পেটের গ্যাস এর লক্ষণ গুলো হলোঃ
অল্প খাবারেই পেট ভরে যাওয়া
ক্রমাগত হেঁচকি আসা
বদহজম হওয়া
খিদে কম পাওয়া
বুক জ্বালা পোড়া করা
ক্লান্তি অনুভব করা
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
রক্ত বমি করা
পেট ফুলে ফেঁপে থাকা
হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হওয়া
পেট প্রচন্ড ব্যথা করা
মলত্যাগ করতে সমস্যা হওয়া এবং কালো মল
শেষকথা-দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
প্রিয় পাঠক ভাই এবং বোনেরা,এই আর্টিকেলটিতে আমি দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনার এই আর্টিকেলটি থেকে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং অন্যকে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় গুলো জানার সুযোগ করে দেবেন। ধন্যবাদ