ক্যাপসিকাম চাষ। ক্যাপসিকাম চাষ করে ১ বিঘা জমি থেকে ২.৫ লাখ টাকা আয় (প্রমান সহ)
আপনি কি ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটিতে আমি ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি, ক্যাপসিকাম চাষে আয় ব্যয়, ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক জাত নির্বাচন, ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক সময় নির্বাচন, ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক মাটি নির্বাচন, ক্যাপসিকাম চাষে সার ব্যবস্থাপনা, ক্যাপসিকাম চাষে রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা এবং কিভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করে এক বিঘা জমি থেকে ২.৫ লাখ টাকা আয় করা যায়? এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তাই আপনি যদি এই ক্যাপসিকাম চাষ করে এক বিঘা জমি থেকে ২.৫ লাখ টাকা আয় করতে চান,তাহলে পুড়ো আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুণ।
আপনি যদি চাষে আগ্রহী হন তবে আপনি ক্যাপসিকাম চাষ থেকে প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারেন। আজকাল ক্যাপসিকাম খুচরা দাম প্রায় ৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে থাকে। ক্যাপসিকাম এমন একটি সবজি, যা মানুষ শুধু তাদের তরকারিতেই ব্যবহার করে না, সালাদ হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। ক্যাপসিকাম বিদেশি ফসল হলেও আমাদের দেশে বর্তমানে ক্যাপসিকাম এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে বড় বড় শহর গুলোতে ক্যাপসিকাম এর প্রচুর চাহিদা। তাহলে চলুন জেনে নেই এই ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে সবকিছু।
ক্যাপসিকাম চাষ
ক্যাপসিকাম বিদেশি ফসল হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাপসিকামকে সাধারণত মিষ্টি মরিচ বলা হয়ে থাকে। ক্যাপসিকাম যে শুধুমাএ তরকারিতে ব্যবহার করা হয় তাই নয় ক্যাপসিকামকে সালাত হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে আমাদের দেশের বড় বড় শহর গুলোর রেস্টোরেন্ট গুলোতে ক্যাপসিকাম এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে কিছু কিছু সময় আছে যে সময় এই ক্যাপসিকাম ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক অঞ্চলে বানিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ হয়ে থাকে। ক্যাপসিকাম চাষ করে এক বিঘা জমি থেকে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। তাই যারা স্মার্ট তরুণ কৃষি উদ্ধোক্তা আছে তাদের উচিত উন্নত প্রযুক্তিতে বানিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করা। তবে ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ
১। ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক জাত নির্বাচন
২। সঠিক সময় নির্বাচন
৩। সঠিক মাটি নির্বাচন
৪। সঠিক ভাবে জমি প্রস্তুত করা
৫। সঠিক ভাবে চারা তৈরি এবং চারা রোপণ করা
৬। সঠিক ভাবে সার ব্যবস্থাপনা
৭। রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা
৮। সঠিক ভাবে সেচ ব্যবস্থাপনা
৯। আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা
ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক জাত নির্বাচন
ক্যাপসিকাম চাষ করার আগে সর্বপ্রথম আপনাদের যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ সেটি হলো ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক জাত নির্বাচন। কারণ আপনি যদি ক্যাপসিকাম চাষের ক্ষেত্রে সঠিক জাত নির্বাচন না করতে পারেন তাহলে ভালো ফলন পাবেন না। আর ভালো ফলন না পেলে ভালো লাভ পাবেন না। ক্যাপসিকাম বিদেশি ফসল হলেও আমাদের দেশে এর বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত চাষ হয়ে থাকে। নিচে ক্যাপসিকাম চাষের কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল জাতের নাম দেয়া হলো।
১। ইন্দ্রা ২। টাইগার ৩। অঞ্জলি ৪। আয়সা ইত্যাদি ক্যাপসিকাম জাত গুলো থেকে আপনি যেকোনো জাত চাষ করতে পারেন। ক্যাপসিকাম এর এই জাত গুলো খুব ভালো ফলন দিয়ে থাকে।
ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক সময় নির্বাচন
আমরা সকলেই জানি যে কোন ফসল চাষের ক্ষেত্রে সঠিক সময় নির্বাচন খুবই গুরুত্ব পূর্ণ।ক্যাপসিকাম চাষ করার খেত্রেও সঠিক সময় নির্বাচন করা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। কারণ আপনি যদি সঠিক সময়ে ক্যাপসিকাম চাষ না করেন তাহলে ভালো বাজার দর পাওয়া যাবেনা এমন কি ক্যাপসিকাম এর ভালো ফলন নির্ভর করে সঠিক সময়ে ক্যাপসিকাম চাষের উপর। তাই আপনি যদি ক্যাপসিকাম চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে সঠিক সময়ে ক্যাপসিকাম চাষ করতে হবে।
আমাদের দেশে সাধারণত দুইটি সময়ে ক্যাপসিকাম চাষ করলে ভালো ফলন ও ভালো বাজার দর পাওয়া যায়। যেমনঃ
১। আগাম ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে -সেপ্টেম্বর,অক্টোবর,এবং নবেম্বর এই তিন মাসের যে কোন সময় আগাম ক্যাপসিকাম চাষ করতে পারেন।
২। সিজনাল বা দেরীতে ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে- ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত ক্যাপসিকাম চাষ করতে পারেন।
ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক মাটি নির্বাচন
ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক মাটি নির্বাচন করা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। কারণ যেহেতু ক্যাপসিকাম বিদেশি ফসল তাই সব মাটিতে ক্যাপসিকাম চাষ ভালো হয় না। তাই ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ কালো দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। তবে এঁটেল বা বেলে মাটিতেও চাষ করা যায়। ক্যাপসিকাম চাষ করার জন্য উপযুক্ত নিষ্কাশন সহ জমি থাকা প্রয়োজন, কারণ জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে ক্যাপসিকাম গাছগুলি অনেক রোগে আক্রান্ত হয়, যার কারণে ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে জমির পি.এইচ. মান ৫.৫ থেকে ৭ এর মধ্যে হওয়া উচিত। যে কোনো আবহাওয়ায় ক্যাপসিকাম চাষ করা যায়, তবে আর্দ্র শুষ্ক জলবায়ু চাষের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। প্রচন্ড তাপ ও ঠান্ডা আবহাওয়া এর ফসলের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া শীতকালে তুষারপাত ক্যাপসিকাম জন্যও ক্ষতিকর। প্রাথমিকভাবে ক্যাপসিকাম গাছের অঙ্কুরোদগমের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রয়োজন।
ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক ভাবে জমি প্রস্তুত করা
ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে জমি প্রস্তুত করা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। ক্যাপসিকাম চাষের জন্য জমি খুব ভালো ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। ক্যাপসিকাম এর ভালো ফলনের জন্য জমিকে ভালোভাবে চাষ করে সঠিক পরিমাণে সার দিতে হবে। এ জন্য জপমিতে ভালোভাবে ও গভীরভাবে ৩ থেকে ৪ টি চাষ করতে হবে। যার কারণে জমির পুরোনো ধ্বংসাবশেষ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর এভাবে কয়েকদিন জমি খোলা রেখে দিন। যার কারণে জমির মাটি পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যালোক পাবে।
তারপর প্রচুর পরিমাণে গোবর সার ও পরিমাণ মত রাসায়নিক সার জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে শেষ ২ টি চাষ দিয়ে জমিতে আড়াই ফুটের বেড এবং এক ফুটের ড্রেন তৈরি করতে হবে। তারপর বেডের উপর অবশ্যই মালচিং ব্যবহার করতে হবে। কারণ মালচিং পেপার ছাড়া ক্যাপসিকাম চাষ ভালো হয়না।
সঠিক ভাবে ক্যাপসিকামের চারা তৈরি এবং চারা রোপণ করা
ক্যাপসিকামের চারা তৈরিঃ ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিতে চারা তৈরি খুব গুরুত্ব পূর্ণ। ক্যাপসিকাম চাষের ক্ষেত্রে যে বিষয়টা সব চেয়ে বেশি খেয়াল রাখা জরুরি সেটি হচ্ছে চারা যেন ১০০% সুস্থ হয়।কারণ আপনি যদি শুরুতেই অসুস্থ চারা দিয়ে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন তাহলে আপনার ক্যাপসিকাম গাছে রোগের আক্রমণ বেশি হবে এবং আপনার গাছ মারা যেতে পারে এবং আপনার প্রযেক্টটি একটি লস প্রজেক্ট হতে পারে। তাই আপনাদের উচিত ১০০ ভাগ সুস্থ চারা দিয়ে ক্যাপসিকাম চাষ করা।
ক্যাপসিকাম চাষের জন্য এমন জায়গায় নার্সারি তৈরি করুণ যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকে। এর সাথে মাটি থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ৩ ফুট চওড়া ও ১০ ফুট লম্বা বেড তৈরি করুন। এরপর কার্বেন্ডাজিম গ্রোপের ছত্রাক নাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে বেডের মাটি শোধন করতে হবে। অথবা প্রতি বর্গমিটারে ৭৫০ গ্রাম ডিএপি সার এবং ২৫০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি এবং ১৫০ কেজি গোবর সার মাটিতে মিশিয়ে দিন যাতে মাটির গঠনের পাশাপাশি ক্যাপসিকাম গাছের বৃদ্ধিও ভাল হয় এবং গাছ গুলো মাটির ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও রক্ষা করা যায়।
আরো পড়ুনঃ মঙ্গল রাজা টমেটো। এক বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা আয় (প্রমান সহ)
তবে ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি সিডলিং ট্রেতে উন্নত প্রযুক্তিতে মাটি ছাড়া ১০০ ভাগ সুস্থ চারা তৈরি করা হয়। অথবা এই উন্নত প্রযুক্তির শত ভাগ সুস্থ ক্যাপসিকাম চারা বর্তমানে কিনেও পাওয়া যায়। আপনারা চাইলে সেই চারা গুলোও সংগ্রহ করে রোপণ করতে পারেন।
ক্যাপসিকামের চারা রোপণঃ ক্যাপসিকাম চাষ করার জন্য আপনারা যে আড়াই ফুটের বেড তৈরি করবেন সেই বেডের উপর ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি দুরে দুরে চারা রোপণ করতে হবে এবং লাইল থেকে লাইনের দুরত্ব থাকবে ২৭ ইঞ্চি। এই মাপে ক্যাপসিকাম চারা রোপণ করলে এক বিঘা জমিতে ৪২০০ থেকে ৪৫০০ হাজার চারা রোপণ করা যাবে।
ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক ভাবে সার ব্যবস্থাপনা
ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে সার ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। কারণ ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে সার কম বেশি হলে ফলন কম বেশি হতে পারে। তাই ক্যাপসিকামের ভালো ফলন পেতে হলে সঠিক ভাবে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। নিচে এক বিঘা জমিতে সার প্রয়োগের একটি আনুমানিক হিসাব দেয়া হলোঃ
১ম ধাপে ক্যাপসিকাম গাছে সার প্রয়োগ,শেষ চাষের আগে বা বেড তৈরির পর বেডের উপর প্রয়োগ করলে ১০-১৫ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
১. টিএসপি = ৪০-৫০ কেজি
২. ডিএপি = ১৫-২০ কেজি
৩. এমওপি = ৩০ -৩৫কেজি
৪. জিপসাম = ১০ কেজি
৫. বোরন = ২ কেজি
৬. দস্তা = ১.৫ কেজি
৭. ফুড়াডান = ৩ কেজি
৮.ম্যাগনেসিয়াম = ৪ কেজি
৯. ট্রাইকুডারমা = ১ কেজি
১০. জৈব সার = ২৫০ কেজি
২য় ধাপে সার প্রয়োগ, গাছের ৪০ থেকে ৪৫ দিন হলে বা ক্যাপসিকাম গাছে মরিচের গুটি আসলে,
১.ডিএপি = ১৫-২০ কেজি
২.এমওপি = ১০-১৫ কেজি
৩. ম্যাগনেসিয়াম = ২-৩ কেজি
ক্যাপসিকাম চাষে রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা
ক্যাপসিকাম চাষ করে ভালো ফলন পেতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে রোগ ও পোকার আক্রমন। ক্যাপসিকাম করার ক্ষেত্রে যদি সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রন না করা যায় তাহলে ক্যাপসিকাম গাছের ফলন অনেকাংশে কমে যায় এবং অনেক গাছ মারা যেতে পারে। ফলে কৃষক ভাইয়েরা ক্ষতি গ্রস্থ হয়। তাই ক্যাপসিকাম চাষের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রন করা খুব জরুরি।
ক্যাপসিকাম গাছে অনেক ধরনের রোগ দেখা যায়। শুরুতেই ক্যাপসিকাম গাছে পচন রোগ দেখা যায়। এই রোগটি গাছের গোরায় দেখা দেয় এবং এই রোগের ফলে শুরুতেই গাছের গোরা পচে গাছ মারা যেতে পারে। তাই এই রোগ সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। এ রোগের কারণে ক্যাপসিকাম গাছের কান্ড কালো হয়ে যায় এবং এরপর গাছের কান্ড পচে নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য, ক্যাপসিকামের চারা রোপণের আগে থিরাম বা ক্যাপ্টান বা কারবন্ডাজিম গ্রোপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে ভালোভাবে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় অথবা পুরো গাছে শেষ বিকেলে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
এ ছাড়া ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে গাছে অনেক ধরনের রোগ ও চোষক পোকার আক্রমণ দেখা যায়, যেমন- সাদা মাছির আক্রমন,লাল মাকড়ের আক্রমণ, মোজাইক ভাইরাস,এবং নিমাটোড ইত্যাদি। এ সকল ক্ষতিকর চোষক পোকা দমনের জন্য সাধারণত ইমিটাক্লোরোপিড গ্রোপের কীটনাশক প্রতিলিটার পানিতে ১ মিলি হারে ভালোভাবে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে। নিয়মিত সিডিউল মত ৫-৭ দিন পর পর স্প্রে করলে আশা করা যায় ক্যাপসিকাম গাছ সুস্থ থাকবে এবং অনেক বেশি ফলন দিবে।
ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক ভাবে সেচ ব্যবস্থাপনা
ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে ভালো সেচ ব্যবস্থাপনাও খুব জরুরি। ক্যাপসিকাম গাছের বেশি সেচের প্রয়োজন হয় কারণ এর ক্যাপসিকাম গাছের অঙ্কুরোদগমের সময় জমিতে আর্দ্রতা রাখা প্রয়োজন। চারা রোপণের পরপরই ক্যাপসিকাম গাছে প্রথম সেচ দিতে হবে। ক্যাপসিকামের জমিতে প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন পর পর জমির আদ্রতা বুজে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
ক্যাপসিকাম চাষে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা
আমরা সকলেই জানি, যে কোনো সবজি ফসল চাষে ভালো ফলন পাওয়ার ক্ষেত্রে আগাছা একটি বড় বাঁধা। কারণ জমিতে যে সার প্রয়োগ করা হয় আগাছা সেই সার খেয়ে ফেলে তাই গাছ সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারেনা। তাই ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে জমির আগাছা নিয়ন্ত্রণ করাটাও খুব জরুরি।
আরো পড়ুনঃ নাগা ফায়ার মরিচ। এক বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা আয় (প্রমান সহ)
আরো পড়ুনঃ আধুনিক পদ্ধতিতে মরিচ চাষ
যেহেতু ক্যাপসিকাম চাষের ক্ষেত্রে অবশ্যই মালচিং পেপার ব্যবহার করতে হবে তাই জমিতে বেশি আগাছা হবে না। তবে ১৫-২০ দিন পর পর ক্যাপসিকাম গাছের গোরা এবং জমিতে যে ড্রেন থাকবে সেই ড্রেন পরিস্কার করে দিতে হবে।
ক্যাপসিকাম চাষে আয় ব্যয়
যে কোন ফসল বানিজ্যিকভাবে চাষ করার আগে আপনাদের সেই ফসল চাষের আয় ব্যয় জেনে চাষ করা উচিত। কারণ কোনো স্মার্ট কৃষক যে কোনো ফসল
চাষ করার আগে আয় ব্যয় সম্পর্কে জেনে সুন্দর একটি পরিকল্পনা করে তারপর বানিজ্যিকভাবে চাষ করে
থাকে এবং একজন স্মার্ট সচেতন কৃষি উদ্ধোক্তার বৈশিষ্ট্য এটি। আর তাই ক্যাপসিকাম চাষ করার আগে আপনাদের সকলের উচিত ক্যাপসিকাম চাষের আয় ব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেতে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে স্মার্ট ভাবে উন্নত প্রযুক্তিতে চাষ করা।
এক বিঘা জমিতে উন্নত প্রযুক্তিতে ক্যাপসিকাম চাষ করলে কত টাকা আয় হতে পারে কিংবা কত টাকা ব্যয় হতে পারে তার একটি হিসাব নিচে তুলে ধরা হলো আশা করি আপনাদের উপকার হবে।
ক্যাপসিকাম মরিচ চাষে ব্যয়
জমি চাষ বাবদ খরচ = ২০০০ টাকা
ক্যাপসিকাম চারা বাবদ খরচ = (৪৫০০ × ৪) = ১৮০০০ টাকা (যদি চারা কিনে চাষ করেন তবে ১৮০০০-২০০০০ টাকা খরচ হবে। তবে চারা নিজে তৈরি করলে খরচ অনেক কম হবে। সকল ধরণের সবজি চারা লাগলে কল দিতে পারেন এই নাম্বারে ০১৬৪২০৯৮৬৬৪)
সারের খরচ = ১২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা
কীটনাশক বাবদ খরচ = ১২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা
লেবার খরচ = ১০০০০ টাকা
সেচ বাবদ খরচ = ৩০০০ টাকা
মালচিং পেপার বাবদ খরচ = ৭০০০ টাকা (মালচিং পেপার লাগলে কল দিতে পারেন এই নাম্বারে ০১৬৪২০৯৮৬৬৪)
সর্বমোট এক বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করলে (২০০০+১৮০০০+১৫০০০+১৫০০০+১০০০০+৩০০০+৭০০০)=৭০০০০ টাকা
ক্যাপসিকাম চাষে আয়
ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে চারা থেকে চারা ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি দূরত্বে এবং লাইল থেকে লাইনের দূরত্ব যদি ২৭ ইঞ্চি হয় এবং ২.৫ ফুটের প্রতিটি বেডে যদি ২ টি করে লাইন চারা রোপণ করা হয় তাহলে এক বিঘা জমিতে ৪২০০ থেকে ৪৫০০ হাজার চারা রোপণ করা যায়। যদি সঠিক পরিচর্যা করা হয় ক্যাপসিকামের প্রতিটি গাছে গড়ে ৩ থেকে ৪ কেজি ফলন দিয়ে থাকে।
ধরা যাক, প্রতিটি গাছে যদি গড়ে ২ কেজি ফলন পাওয়া যায়, আর
প্রতিকেজি ক্যাপসিকাম যদি গড়ে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায় ,তাহলে ২ কেজি ক্যাপসিকামের
দাম ৮০ টাকা আর আমরা যদি ৪ হাজার গাছ ধরি। তাহলে হিসাব করে (৪০০০
× ৮০) = ৩২০,০০০ টাকা। তাহলে খরচ বাদ দিলে (৩২০০০০-৭০০০০) = ২৫০০০০ টাকা। তাহলে আমরা বলতে পারি, এক বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করলে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাসে ২৫০০০০ টাকা আয় করা যায়।
আমরা জানি,আমাদের দেশে কিছু কিছু সময় ক্যাপসিকাম এর কেজি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে চিন্তা করেন, ক্যাপসিকাম চাষ করে কত টাকা আয় করা সম্বব। আবার কউ যদি ১০ বিঘা জমিতে বানিজ্যিক ভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করে তাহলে তার কত টাকা আয় যেতে পারে শুধু একবার চিন্তা করে দেখেন।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উওর
ক্যাপসিকাম চাষে কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ
১। ক্যাপসিকাম চাষে সঠিক জাত নির্বাচন
২। সঠিক সময় নির্বাচন
৩। সঠিক মাটি নির্বাচন
৪। সঠিক ভাবে জমি প্রস্তুত করা
৫। সঠিক ভাবে চারা তৈরি এবং চারা রোপণ করা
৬। সঠিক ভাবে সার ব্যবস্থাপনা
৭। রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা
৮। সঠিক ভাবে সেচ ব্যবস্থাপনা
৯। আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা
ক্যাপসিকাম চাষ করার উপযুক্ত সময় কোনটি?
আমাদের দেশে সাধারণত দুইটি সময়ে ক্যাপসিকাম চাষ করলে ভালো ফলন ও ভালো বাজার দর পাওয়া যায়। যেমনঃ
১। আগাম ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে -সেপ্টেম্বর,অক্টোবর,এবং নবেম্বর এই তিন মাসের যে কোন সময় আগাম ক্যাপসিকাম চাষ করতে পারেন।
২। সিজনাল বা দেরীতে ক্যাপসিকাম চাষ করার ক্ষেত্রে- ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত ক্যাপসিকাম চাষ করতে পারেন।
ক্যাপসিকামের জমিতে কত দিন পর পর সেচ দিতে হবে?
চারা রোপণের পরপরই ক্যাপসিকাম গাছে প্রথম সেচ দিতে হবে। ক্যাপসিকামের জমিতে প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন পর পর জমির আদ্রতা বুজে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
ক্যাপসিকাম সেরা জাত কোনটি?
ক্যাপসিকাম চাষের কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল জাতের নাম দেয়া হলো।
১। ইন্দ্রা ২। টাইগার ৩। অঞ্জলি ৪। আয়সা ইত্যাদি ক্যাপসিকাম জাত গুলো থেকে আপনি যেকোনো জাত চাষ করতে পারেন। ক্যাপসিকাম এর এই জাত গুলো খুব ভালো ফলন দিয়ে থাকে।
শেষকথা-ক্যাপসিকাম চাষ
প্রিয় কৃষক ভাইয়েরা এই আর্টিকেলটিতে ক্যাপসিকাম চাষ,ক্যাপসিকাম চাষে আয় ব্যয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি, এই আলোচনা থেকে আপনারা ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ